ঘুম ভাঙে। চোখ তুলে চেয়ে দেখি- বিবর্ত আঁধারে
ভেসে ওঠা এক মা প্যাঙ্গুইনের মর্মান্তিক মুখ।
ঢিল ছোঁড়া কাঁপা কাঁপা অচল জলের মতো তার
অসহায় অনুনয়। সদ্য-পাড়া ছাই রঙা ডিমগুলোর
একাংশ এখনও যে অক্ষত! বাতিঘরে ঘূর্ণাবর্ত
আলো যেন সচেতন দুটি চোখ: বিদ্যুৎ-সকাশে
সপ্রতিভ হয়।হলাহল বুলেট-বেয়নেটের
কোরাস ক্রেংকারে, চিরোল আকাশ চুইয়ে চুইয়ে
গড়ায় লিথির রেখা; গলিত শবের নর্দমায়
মেশে; ভীষণ বিবমিষায় গোঙাতে গোঙাতে,
খসে পড়ে অজাচারী সভ্যতার দরদী মুখোশ।
দেখি তার তীব্র মুখ, অগণন হায়েনার চোখ
জলৌকার ঠোঁট - অনাঘ্রাত প্রতিটি প্রত্যঙ্গ- তার
কান মুহূর্তেই জেনে যায়- পৃথিবীর প্রান্ততম
শিশিরের শব্দ, তীক্ষ্ণ নাসা, টের পায়- দূর
কোনও ব-দ্বীপের প্রতিটি সবুজ ঘাসের দুলুনি।
মস্তিষ্কের কোষে কোষে গ্রথিত রয়েছে- বহমান
সময়ের তাবৎ গণিত সমুদয় তত্ত্ব, জ্ঞান,
অতীতের সার্থবাহ সফল উপাত্ত যত ;আর
রক্তের প্রবাহে ভ্রম : তাদেরই ফলিত রসায়ন
গড়ে তোলে আমাদের অভাবিতপূর্ব ভবিষ্যৎ।
সভ্যতার এই মনুমেন্ট, ভুবন-চিলের মতো
মীড়ে মীড়ে মাইফেলে গেয়ে যায়-মানবিকতার
যত কুহেলি-গমক। কিন্তু অন্তরালে জন্ম দেয়
থোকা থোকা শব-পুষ্প আর তার গন্ধে লালায়িত
ভয়াল মশক। আমাদের একান্ত নিশ্বাসে- ওরা
পুঁতে রাখে বিস্মৃতির বিষ, প্রগতির শুকছবি
মুক্তির অর্গল আর বিশ্বাসের অন্ধ অগ্ন্যুৎপাত;
সরীসৃপ মগজের আততায়ী রসে সৃষ্ট সব
বিপরীত ধারণার অন্তহীন তুমুল সংঘাত।
মা প্যাঙ্গুইনের চোখে শতচ্ছিন্ন স্মৃতির জালিকা
আর তার প্রতিটি অক্ষত ডিম ধারণ করছে
'আয়োনীয়' আবেগকে। বিস্মৃতির পাথুরে পর্দায়
ফুটে ওঠে হাইপেসিয়ার দগ্ধ কণ্ঠ। জীবিতের মতো
সেও ডেকে ওঠে- ‘দ্যাখো, আগলে রেখেছি পৃথিবীর
হৃদয়। এসো না তোমরাও? পুড়ে পুড়ে হচ্ছে ক্ষয়!’
আধপোড়া আধমরা এই মহীরুহে জড়ো হয়
পৃথিবীর সব শিল্পিত বাবুই। তাদের হৃদয়ে-
সময়ের রাশি রাশি পুঞ্জীভূত শোকভস্মগুলো
হয়ে ওঠে সবাক হীরক। জেগে ওঠে কবেকার
আণবিক বিস্ফোরণে ডিমের খোসার মতো যত
বিদীর্ণ আত্মারা। সুতীক্ষ্ণ চিৎকার আর বিকৃত গিটারে
ওরা বিড়বিড় করে বলে - ‘আমাদেরও মনে রেখো!
সময় এগোয়, কিন্তু সভ্যতা তাকায় ফিরে ফিরে।’
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫