ব্যাচেলর আর ডিম দু’টো জিনিস একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। স্বল্প আয়োজন, স্বল্প খরচ আর সামান্য পরিশ্রমে মনের মত খাবার এই ছোট্ট বস্তুটি। এছাড়াও ডিমের প্রতি একটু বাড়তি আকর্ষণ সবারই থাকে। গৃহিনীদের জন্যও এটা বেশ স্বস্তিদায়ক। কারণ, ব্যস্ততার সময় ঘরের মাতব্বর যখন তাড়াহুড়ো করে অফিস কিংবা ব্যবসার কাজে ছুটে যায়, তখন তড়িঘড়ি করে একটা ডিম ভাজি এনে দেয় স্বস্তি। সন্তানকে সকাল সকাল স্কুলে পাঠাতেও একই চিত্র ঘরে ঘরে দেখা যায়। অতিথি আপ্যায়নেও তড়িৎ গতিতে একটি ডিমের পোজ স্বল্প সময়ে গৃহিনীর মান সম্মান বাঁচায়।
বিগত কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই অনেক রাতে খিদে পেল। হাড়িতে ভাত আছে। কিন্তু মেস মেটরা রাতেই তরকারি সাবাড় করেছে। কি আর করার আছে? তরকারির বিকল্প হিসেবে শেষ পর্যন্ত ডিমকেই বেছে নিতে হলো। কিন্তু ডিমটা ভাঙার চেষ্টা করতে গিয়েই খটকা লাগলো। সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি ভঙ্গুর মনে হলো। সন্দেহ হওয়ায় ডিম হাত দিয়ে ধরে পুরাই ‘থ’। ডিমে কোন গন্ধ নেই! অথচ ডিম হাত দিয়ে ধরলে সে গন্ধ কয়েক ঘন্টা থেকে যাওয়ার কথা! নাক চোখ বন্ধ করে ওই ডিম দিয়েই ভাত খেতে হলো।
হতে পারে ডিমটি আসলই। প্লাস্টিকের নয়। কিন্তু, এ সন্দেহ সংশয় কি অমূলক? দেশের সীমান্ত পথে কি চীনের প্রস্তুতকৃত প্লাস্টিকের ডিম আমদানী হচ্ছে না? সরকার কি জনগণকে এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে? যদি না পারে তবে কেন পারেনি? খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে এই উদ্বেগ কতদিন ভোগ করতে হবে দেশের মানুষের? অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরার জন্য কি আরও একজন রোকন-উদ-দৌলার আগমন ঘটতে পারে না?
শুধু ডিম নয়, এখন নাকি শ্যাম্পু দিয়ে শত শত লিটার দুধ তৈরী করা হচ্ছে। বিস্কুট, আইসক্রিম, জুস, সেমাই, আচার, নুডলস, মিষ্টিতেও মেশানো হচ্ছে ভেজাল। আর ফরমালিন যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। রাজধানীসহ এর আশেপাশের বেশকিছু এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভেজাল খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানা। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে এসব চোরেরা। কিন্তু এতে জনগণের উদ্বেগ বাড়ছে বৈ কমছে না। কারণ, অপরাধীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে, কখনো আইনের বাঁকাপথে আবারো ফিরে যাচ্ছে নিজেদের জগতে। কিংবা নেপথ্যে থাকা আসল অপরাধী ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
ভেজাল পণ্য ক্যান্সার, হেপাটাইটিস, কিডনি ও লিভারের জটিল রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। প্রতিবছর এসব রোগের রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। খাদ্যদ্রব্যে ভেজালদাতা ও ভেজাল খাদ্য আমদানীকারক অসাধু ব্যবসায়ীরা খুনী। ওদের টুটি চেপে না ধরতে পারলে ধ্বংস হয়ে যাবে এদেশের মূল্যবান জনসম্পদ। মানুষ ও মানবতা রক্ষায় দল-মত নির্বিশেষে এই দুষ্কৃতিকারীদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
প্লাস্টিকের চাইনিজ ডিম বাজারে আছে কি নেই তা সরকারকেই স্পষ্ট করতে হবে। স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে হবে জনমনে। অন্যথায় অসাধু ব্যবসায়ীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে লাখ লাখ মানুষ বিষপ্রয়োগে হত্যার জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে। ভেজালে দৌরাত্ম্য দেখে হতাশ হই। ভাবতে অবাক লাগে, নিশ্চিন্তে একটি ডিমও খেতে পারবো না! ভক্তি আর তৃপ্তি সহকারে খেতে পারবো না একগ্লাস দুধ!!