কানমলা খেয়ে স্কুল জীবনে কান লাল হয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। স্যারের ভয়ে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলার ঘটনাও কম নয়। স্যারের তৈলাক্ত বেতের দিকে তাকালেই পড়া অর্ধেক মুখস্ত হয়ে যেত। কিন্তু এসবই এখন যেন রূপকথার গল্প।
এখন আর স্কুলে গেলে পিঠ টান করে মাথা নিচু করে স্যারদের সালাম করার বালাই নেই। স্যারকে সম্মান জানানোর মত সময় নেই। কারণ আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে প্রগতিশীল হতে চলেছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও প্রগতিশীল (!) করে গড়ে তুলছি। এখন স্যাররা শ্রেণিকক্ষে বেত নিয়ে যাওয়ার সাহস পাননা। শাসন করার ইচ্ছা থাকলেও সরকারের তরফ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে সেই অধিকার। আর তাই অতিমাত্রায় বেয়াদবী দেখে মেজাজ খারাপ হলে তখন শ্যামল কান্তি ভক্তের মত কিল-ঘুষি চালানো ছাড়া উপায় থাকে না।
সে সময় শিক্ষার্থীরা স্কুলে পিটুনি খেলেও বাড়িতে অভিভাবকের কাছে বলারও সাহস পেতনা। সহপাঠিদের অনুরোধ করতো যেন তারাও তার অভিভাবকের কাছে ব্যাপারটি না বলে দেয়। কারণ তাহলে দ্বিতীয় দফা পারিবারিক শাসনের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর আজকাল দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এখনকার মায়েরা ননীর পুতুলদের স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভিখিরীর মত ঘন্টার পর ঘন্টা স্কুলের গেটে অপেক্ষা করে। যেসব স্কুলে জানালার কাছে যাওয়ার সুযোগ আছে সেখানে জানালার কাছে ভীড় জমায়। পারলে সন্তানের লেখা-পড়ার দুই তৃতীয়াংশই নিজে মুখস্থ কন্ঠস্থ করে ফেলে। আর এমন ননীর পুতুলদের শাসন করা তো দূরের কথা চোখ রাঙানি দেয়াও তো বিশাল ঝুকির কাজ! কখন যে কার মা এসে জিজ্ঞাসা করে - “আমার সোনামনিকে আপনি চোখ রাঙানি দিয়েছেন ক্যান?”
শাসনের বেতটা সরকারী নির্দেশে শিক্ষকের হাত থেকে কেড়ে নেয়ার ফলাফল কতদূর এগোবে বলা দায়। কিন্তু এটা ঠিক শিক্ষককে ভয়, শ্রদ্ধা করতে শেখানো পরিবারেরই দায়িত্ব। আর যারা শিক্ষক তাদেরও মনে রাখা দরকার যে, আগামী প্রজন্মের জন্য তারাই আদর্শ। ক্ষেপে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো অথবা কারো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে টানাটানি করার মাঝে কোন কল্যাণ নেই।
কান ধরাতে হলে এক এক করে আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি দায়িত্বজ্ঞানহীন লোককেই কান ধরাতে হবে। কিন্তু এ ধরণের লোকের সংখ্যা আজ ফুলে ফেঁপে অনেক হয়ে গেছে। নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অর্থ, বিত্ত আর অতিমাত্রায় ক্ষমতার প্রয়োগ আমাদের সমাজব্যবস্থাকে ক্রমেই ধ্বংসের দিকে নিয়ে চলেছে। তাই সজাগ হওয়ার যথেষ্ট সময় হাতে আছে। শুধু সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাকী...