অনেকদিন আগের কথা। যখন দেশটা স্বাধীনই হয়নি। সেসময়ে বিদ্যুৎ বলতে যা বোঝাতো তা হল, বিদ্যুৎ একটি শহুরে উপকরণ। গ্রামের মানুষের জন্য হারিকেন আর প্রদীপ ছিল ভরসা। কিন্তু সেদিন এখন আর নেই। মানুষের ধারণা পাল্টে দিয়ে গ্রামে-গঞ্জেও পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের থামগুলো সেখানেও আকাশপানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন থেকে যায়, সহজ সরল গ্রাম্য জনগণের ভাগ্যের কি পরিবর্তন হয়েছে? হলেও কতটুকুইবা হয়েছে? শহরের বিত্তশালী লোকদের মতই উচ্চ দামে বিদ্যুৎ কিনতে হয় তাদের। কিন্তু সেবা কতটুকু মিলছে তা একটু খতিয়ে দেখা দরকার। বিদ্যুতের ভয়াবহ লোড শেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট এর কবল থেকে কোনো অবস্থাতেই মুক্তি মিলছে না গ্রামের মানুষের। দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেরই এই একই অবস্থা। সেখানে “বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে আসে”।
গত কয়েক দিন থেকে চলৎ কাঠালপাকা গরম ও বৈরী আবাহওয়ার মধ্যেই পাল্লা দিয়ে চলছে অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুতের যন্ত্রনাদায়ক বিভ্রাট। দিন কি রাত্রি চলছে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া। এতে করে জনজীবনে পোহোতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
অথচ শহরের মানুষেরা বিশেষত ঢাকা শহরের মানুষ ভুলতেই বসেছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশের অভ্যন্তরে চলমান এ বৈষম্য স্বাধীনতার মূল চেতনারই পরিপন্থি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র বুকে ধারণ করে লাখো শহীদের রক্তের সাথে এ যেন নির্মম তামাশা।
বিদ্যুৎ জ্বালাতন করলেই গ্রামের মানুষেরা শহুরে মানুষের মত ক্ষীপ্র আচরণ প্রদর্শণ করেনা। সড়ক অবরোধ করেনা। গাড়ি ভাংচুর করেনা। সরকারের ভিত নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে না। তাই বলেই কি তাদের সাথে এ অসম নীতি? সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার কি গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত লোকদের জন্য থাকতে নেই? অবাক লাগে এই ভেবে, কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির দেশেই কৃষকের জন্য বিদ্যুৎ থাকে না...