বাঁধা বিঘ্ন আছে বলেই তো সত্যের পথটা এত বেশী আকর্ষণীয়। এত বেশী চ্যালেঞ্জিং। এত বেশী অনুপ্রেরণার। মিথ্যাকে ঘৃনা করতে শিখেছি সেই জন্মের পর থেকেই। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক বড় অন্যায় করেও পিতা-মাতার যতটুকু না ঘৃণা কুড়িয়েছি তারচেয়ে অনেক বেশি ঘৃনা কুড়িয়েছি সামান্য মিথ্যা বলার কারণে। আমাদের দেশের প্রতিটি পিতা-মাতারই কাম্য তার প্রাণের সন্তানটি অন্তত যেন মিথ্যাবাদী হয়ে না ওঠে। সত্যবাদীতা দিয়েই সে যেন সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সত্য প্রকাশে যারা দ্বিধান্বিত হয় কিংবা নিজেকে অপ্রস্তুত মনে করে তাদের জন্য সুখকর কোনো সংবাদ নেই। বরং সমাজে এ ধরণের লোকের প্রাধান্য পেতে শুরু করলে সে সমাজ ক্রমেই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য। মিথ্যাচারীদের পরিণতি কখনোই শুভ হয় না। সকল অশুভ শক্তির সাথেই মিথ্যা ও মিথ্যাচারের একটি অঙ্গাঅঙ্গি সম্পর্ক বিরাজ করে। মিথ্যাচারীরা হয় সুযোগ সন্ধানী। এবং সুযোগের যথেচ্ছা ব্যবহার করে অতিরিক্ত সুবিধা পেতেই তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয়। ধরে নেয় মিথ্যা বলেই নিজের আসনটা পাকাপোক্ত করে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে। কিন্তু মিথ্যাচারের মাধ্যমে অর্জিত জয় খুবই ক্ষণস্থায়ী, নাজুক এমনকি ভঙ্গুর। অনেকটা মাকাল ফলের মত। এদের জীবনটা নিশাচরের মতই কেটে যায়। সত্যের আলোর মুখোমুখি হতে এরা দারুণ ভয় পায়।
সত্যই সুন্দর। সত্য চিরস্থায়ী। সত্যপন্থীরা অমর, অক্ষয়। মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়াই সত্যের ধর্ম। মিথ্যা ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে কখনওবা সত্যপন্থীদের জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিতে হয়। কিন্তু বিজয় শেষ পর্যন্ত সত্যেরই হয়। মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে অবিচল থেকে সত্যের পক্ষে কথা বলার এ সংগ্রামে টিকে থাকা খুবই কষ্টের। তবে তা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। আলোর দিশা হয়ে থাকে মিথ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত গোটা জাতির জন্যেই। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় -
“অসত্য যত রহিল পড়িয়া, সত্য যে গেল চ’লে
বীরের মতন মরণ-কারারে চরণের তলে দ’লে।”