লজ্জাবতী লতা...
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
লোকাল বাসে বরাবর যে ব্যাপারটা আমার বিরক্ত লাগে তা হল মহিলা আসনে বসাটা। এই ব্যাপারটা নিয়ে হরহামেশাই আমার হেল্পারের সাথে ঝামেলা হয়। আমার কথা হচ্ছে পুরো বাসে এতগুলো খালি আসন থাকতে আমি কেন চারজনের সিটে পাঁচজনের সাথে গাদাগাদি করে বসব? আর তাদের কথা হচ্ছে আমি একা একজন মহিলা মানুষ বাসে জার্নি করছি, আমার পাশে কোন পুরুষ বসবে? প্রতিবারই আমাকে নির্লজ্জের মত বলতে হয় যে আমার পাশে যেই বসুক আমার কোন সমস্যা নেই বরং যে বসতে চায়না সমস্যা তারই। আমাকে রীতিমত হুমকির সুরেই শুনতে হয় যদি কেউ না বসে তবে আমাকে দুইটা সিটের ভাড়া দিতে হবে। আচ্ছা বাবা দিলাম নাহয়! যদিও আজ পর্যন্ত আমার পাশের সিট খালি অবস্থায় বাস ছাড়েনি আর আমাকেও বাড়তি ভাড়ার টাকা গুনতে হয়নি। বরং আমার মত যারা একা জার্নি করে তারা আমার পাশে বসার সুযোগ পায়। আমি মহিলা আসনের বিরোধিতা করছিনা। আসলে আমাদের সমাজব্যবস্থা এমনই। আমি প্রায়ই দেখি পুরো বাসে যত মানুষ যাওয়া আসা করে তার প্রায় অর্ধেক মানুষ বাসের সামনের অংশে মহিলা আসন ও চালকের আশেপাশে বসে। গ্রামের মহিলারা বসার আসন নিয়ে খুব একটা বাক-বিতন্ডায় যায়না। তাদের একটাই চিন্তার বিষয় হেল্পার যাত্রার ভাড়া বাড়তি নিচ্ছে নাতো। বেশিরভাগ সময় আমি দেখি গ্রামের মহিলাদের সাথে নুন্যতম একজন পুরুষ সহযাত্রী থাকবেই যে বাসে উঠেই একটা নরমাল সিটে নবাবের ভঙ্গিতে বসে থাকে আর তার মহিলা সহযাত্রীদের বাচ্চাসহ ঠেসে বাসের ঐ সামনের অংশে বসানো হয়। বাচ্চাগুলো মায়ের বোরকা বা হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে কারণ এরা বসলে এদের সিটের ভাড়া দিতে হবে। গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের চিত্র এটি। তারমানে অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের চিত্রও ভিন্ন নয়। গ্রামের নারীরা নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে এই অবস্থার সাথে। ঘরের মাঝে রান্নাঘরে উত্তপ্ত চুলার পাশে যার সারাদিন কেটে যায় বাসের মধ্যে উত্তপ্ত ইঞ্জিনের পাশে বা উপরে কয়েক ঘন্টার জার্নি তার গায়ে লাগেনা। তাদের প্রত্যাশাও খুব অল্পতেই সীমাবদ্ধ। কেউ তাদের কথা মন দিয়ে শুনলেই তারা খুশি হয়ে যায়। বেশিরভাগ মহিলাই ফ্রীতে ঔষধ নিতে আসে। তাদের কোন ঔষধ কিনে খেতে বললে তারা অথৈ সাগরে পড়ে যায়। কারণ স্বামীর হাত থেকে যে অল্প কিছু টাকা তারা পায় তা দিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ তাদের কুলিয়ে উঠতে হয়। এর মাঝে নিজের জন্যে ঔষধ কেনাতো রীতিমত বিলাসিতার ব্যাপার। যখন বলি তার স্বামী কি ঔষধ কিনে দেবেনা তখন চুপ হয়ে যায়। গ্রামের এই নারীরা আমার কাছে লজ্জাবতী লতার মত। আগে গ্রামে গেলে লজ্জাবতীর ঝোপ দেখলেই মাড়িয়ে দিতাম। লজ্জাবতীর কুঁকড়ে যাওয়া দেখে খুব আনন্দ পেতাম। কিন্তু এখন আর পথে-ঘাটে লজাবতীর ঝোপ দেখলে মাড়িয়ে দিইনা। মনে হয় থাক না এরা এদের মত। বরাবরই তো আমরা আমাদের আশেপাশের লজ্জাবতীদের মাড়িয়ে এলাম। সারাজীবন তো তারা কুঁকড়েই থাকল। বাতাসে উড়ে যাচ্ছে বাস আমার গন্তব্যে। রাস্তার পাশে বাতাসে দুলছে লজ্জাবতী লতাগুলো। দেখতে ভালই লাগছে। ভাল থাকুক আমার লজ্জাবতীরা।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান
ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেয়া তুমি
যুদ্ধাহত আমি,
নিয়তি আমায় ফেলে দিয়েছে, পরাজয়ের হাতে,
রক্তে রাঙা পথের শেষে,
শুধু শূন্যতা আর ক্লান্তির গ্লানি।
আমার তলোয়ার আজ মরিচা ধরা,
স্বপ্নগুলো রকাক্ত।
যে চোখ একদিন জ্বলেছিল আগুনে,
সেখানে আজ শুধু অন্ধকার।
হৃদয়ের প্রতিটি কোণে যুদ্ধের ক্ষত,
নিঃশব্দ... ...বাকিটুকু পড়ুন
উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে পালিয়ে গেল আওয়ামী লীগ?
আওয়ামী লীগের তৈরী করা উন্নয়নের মহাসড়ক অনেক চওড়া হয়েছে। সেই মহাসড়কে বাংলাদেশ উঠার পরেও আওয়ামী লীগ পালানোর রাস্তা পেল।অবশ্য তাদের কতিপয় বেকুব ধরা খেয়ে এখন জেলে আছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫ এর শুভেচ্ছা
সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫ এর শুভেচ্ছা
প্রিয় সহব্লগারবৃন্দ,
দেখতে দেখতে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫ আমাদের দোরগোড়ায়। আনন্দ-বেদনা, উৎসব-চিন্তার মিশেলে এই ঈদ এসেছে আমাদের মাঝে। সবাইকে জানাই আন্তরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন