চোখের ডাক্তার বলিলেন, "আপনি মর্ডান যুগে বাস করে কেন মর্ডান ফ্যাসিলিটিস নিচ্ছেন না?"
বল্লাম "হুম স্যার ,নেয়া তো উচিত।"
উনি উত্তেজিত হয়ে গেলেন।
"উচিত মানে?অবশ্যই নিবেন।বাংলাদেশের চিকিৎসা এখন অনেক উন্নত।ইন্ডিয়ার মতো উন্নত সুযোগ......."
মনে মনে মেজাজটা খারাপ হইলো।আসছিলাম চোখটা চেক করাতে ওএসবি তে।প্রায় দুইবছর আগে লাস্ট চোখ দেখিয়েছি।ভাবছিলাম নতুন পাওয়ার,কিছু ওষুধ আর কিছু উপদেশ দিয়ে আমাকে উনি বিদেয় করবেন।তানা করে উনি বলছেন মর্ডান ফ্যাসিলিটি মানে
Laser Assisted in Situ Keratomileusis (LASIK) করাতে।কি সর্বনাশ!!মানে চশমার সাথে আড়ি? আটবছর ধরে চশমাটার সাথে আমার বৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে!একে ছাড়ি কিভাবে?অবশ্য কবি কহিয়াছেন অধিক ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষাকৃত কম ভালোকিছু ছাড়িয়া দেও।তাই আমি স্বার্থপরের মতো রাজি হইলাম।বাট লেজার রশ্মি দিয়া আমার কর্ণিয়া পুড়ানো হবে ভাবতেই কেমন কেমন লাগতেছে।যাইহোক কত মানুষের মন পুড়লো!হৃদয় পুড়লো!! আর এতো কর্ণিয়া!পুড়ুক!!শেষমেশ রাজী হয়েই গেলাম।
পরদিন OSB তে গেলাম ল্যাসিক করাতে।তার আগে প্রি ল্যাসিক টেস্ট করতে হবে।মানে প্রিলিমিনারি! টেস্ট পার হতে পারলে তবেই ল্যাসিক শুরু হবে।মানে চশমা মুক্ত চোখ!আহ!!
একটু পরেই ডাক পরলো।গেলাম টেষ্ট করাতে।রুমের ভিতরে ঢুকে মনে হলো প্রাচীন রোমের ক্রীতদাস টর্চার করার সেলে আসছি।রুম ভর্তি সব মেশিন।এই যদি হয় প্রি ল্যাসিক টেষ্টের মেশিন তাহলে ল্যাসিকের মেশিনের চেহারা কেমন হবে আল্লাহ মালুম!প্রিয়জনদের মুখগুলা মনে করার চেষ্টা করলাম!কি আজিব কারও চেহারাই মনে পরছেনা!!টেষ্ট শুরু হলো শো শো ফো ফো শব্দের মাধ্যমে।মনে হলো মরুভুমিতে বালু উড়তেছে!!চার চারটা মেশিনের সামনে তারা আমার চোখ নিয়া ছিনিমিনি খেললো।শেষ! একঘন্টা বসার পর আবার ডাক পড়লো।গেলাম ভিতরে।রাগী (আসলে ভালো) এক মহিলা বইসা আছে।হাতে অনেকগুলা কাগজ ।ডাক্তার আপায় কহিলেন তোমার রিপোর্টে অনেক কিছু ক্লিয়ার না।তুমি বিকালে আই হসপিটালে যাবা।আমি ওখানে আটটা পর্যন্ত থাকবো।ঐখানে আধুনিক মেশিনে আবার টেস্ট করবা।আবার!এই ছিলো জীবনে!!
গেলাম আরেকবার।আরেকবার চোখ নিয়া ছিনিমিনি খেলা সহ্য করলাম তবে এইবার আরো আধুনিক যন্ত্রে।আপায় আবার ডাক দিলো,
"ওশান, তোমার রিপোর্ট এবার ক্লিয়ার।"(বুঝলাম না,আগের বার ক্লিয়ার না,এইবার কি এমন জাদু হইলো যে সব ক্লিয়ার হয়া গেল!)
বল্লাম " জ্বী ম্যাডাম!"
"হুম।কথা হচ্ছে তোমার একচোখের কর্নিয়া পাতলা হবার কারনে আমরা এখন রিস্ক নিচ্ছি না।ভার্সিটির নেক্স বন্ধে আসো।তখন ল্যাসিক করায় দিবো।"
"ম্যাডাম নেক্স বন্ধে কি কর্ণিয়া মোটা হয়ে যাবে!"
"হতেও পারে! না হলেও সমস্যা নেই।করিয়ে দিবো তখন।"
"জ্বী ম্যাডাম।আসি।আসসালামুয়ালাইকুম!!"
বের হয়ে আসলাম।যাক এ যাত্রায় তো বাচলাম।শশাঙ্ক থেকে পালানোর সময় ডুফ্রেনের অনুভুতিটা বুঝতে পারলাম!আফসোস অবশ্য একটা থেকেই গেলো।বাংলা সিনেমায় দেখা "মা ,আমি সব দেখতে পাচ্ছি "
কথাটা বলার জন্য আরও কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে হবে।তখন নিশ্চয় সব ঝকঝকা দেখতে পাবো!!
(ছবিঃ google)