অনেকদিন হইল ব্লগ ঠাণ্ডা আছে। নতুন কোন বিতর্কিত টপিক সামনে আসার আগে কিছু বিদ্যা শিখে নেন কিভাবে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয় । ১০ টা রুল আছে যেগুলো মেনে যুক্তি তৈরি করা উচিৎ। এগুলোকে 10 commandment of logic বলা হয়। এই রুল গুলো কিভাবে আসলো, কোথা থেকে আসলো সেটা আলাদা বিষয়। অতিরিক্ত গুগল করতে হবে বলে ইতিহাস আর ঘাটি নাই। কারো জানা থাকলে সংক্ষেপে কমেন্ট করেন, আমি অ্যাড করে দিব ক্রেডিটসহ ।
১। Thou shall not attack the person’s character, but the argument itself. (“Ad hominem”)
অর্থাৎ যুক্তি যে যাই খাড়া করুক না কেন পার্সোনাল এ্যাটাক করা যাবে না। যুক্তি খণ্ডন করুন, ব্যক্তিকে নয়। ব্লগে অনেক সময়ই দেখি, বিশেষ করে ধর্মীয় বিতর্ক সৃষ্টি হয় যে সব পোস্টে, সে গুলোতে যুক্তির মায়রে বাপ এক করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। ইহা সঠিক পন্থা নয়।
যেমন, লিগ করে বলেই বিএনপির বিরুদ্ধে তার যুক্তি ভুল এমনটা মনে করা যাবে না, আবার উল্টোটা মনে করাও সঠিক নয়।
২। Thou shall not misrepresent or exaggerate a person’s argument in order to make them easier to attack. (“Straw Man Fallacy”)
যুক্তি বা বক্তব্য অতিরঞ্জিত করা যাবে না। বিপক্ষ যা বলেছে শুধুমাত্র সেই যুক্তিকে খণ্ডন করতেই আপনি যুক্তি দিবেন। সেটাকে সহজে আক্রমণ করার জন্য নিজের মত করে বদলে নেওয়া যাবে না।
যেমন ধরেন, ক বলেছে তিন নম্বর কাজটা আগে করতে কারণ এটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা যাবে না যে ক বলেছে দুই আর চার নাম্বার কাজ একদম শেষে করতে হবে। আমাদের দেশের অনলাইন পোর্টাল থেকে শুরু করে নেতাদের বক্তব্য, অনেক স্থানেই এই নিয়মের ব্যত্যয় দেখা যায়।
৩।Thou shall not use small numbers to represent the whole. (“Hasty Generalization”)
ছোট স্যাম্পল থেকে ফাইনাল ডিসিশন নেওয়া যাবে না। এই চালাকি অনেকেই করে যেমন, পশ্চিমা ক্লাইমেট চেঞ্জ ডেনায়াররা সাধারণত ৫-৭ বছরের ডাটা নিয়ে দেখায় পৃথিবী আসলে শীতল হচ্ছে। অথচ গত ৫০-৮০ বছরের ডাটা চেক করলে দেখা যায় যে আবহাওয়া উষ্ণ হচ্ছে।
৪। Thou shall not argue thy position by assuming one of its premises is true. (“Begging the Question”)
আপনার যুক্তির একটা প্রেক্ষাপট সত্য ধরে কোন যুক্তি খাড়া করতে পারবেন না।
যেমন ধরেন, ঈশ্বর আছেন কারণ ক গ্রন্থ সত্য। ক গ্রন্থ সত্য কারণ ঈশ্বর তা দিয়েছেন। এমন সার্কেল তৈরি করা যাবে না যেখানে যুক্তির একটা অংশ আরেকটা অংশের উপর নির্ভর করে।
৫। Thou shall not claim that because something occurred before, but must be the cause. (“Post Hoc/False Cause”).
Correlation আর Causation খুব ভালভাবে বুঝতে হবে। যেসব পরীক্ষা দিতে যাবার আগে আমার সামনে কালো বিড়াল এসেছিল, সেই পরীক্ষাগুলো খারাপ হইয়াছে। এখানে বিড়াল সামনে পরা Correlation আর আমার প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল এটা Causation। একটা ঘটনা ঘটলে আরেকটা ঘটনা ঘটতেই পারে। কোনোটাকে অন্যটার জন্য দায়ী করার আগে ঘটনার কারণ খুঁজতে হবে।
৬। Thou shall not reduce the argument down to only two possibilities when there is a clear middle ground. (“False Dichotomy”)
সব তর্কের শেষ বাইনারি রেজাল্ট নাও ফলো করতে পারে। এমন নয় যে এটা না হলে ওটা হতেই হবে। যেমন টা ৯/১১ এর পরে প্রেসিডেন্ট বুশ ঘোষণা দিয়েছিল। You are either with us or against us। রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অন্যভাবে অবস্থান নেওয়াও সম্ভব ছিল।
৭। Thou shall not argue that because of our ignorance, the claim must be true or false. (“Ad Ignorantiam”).
যদি আমি কিছু না জানি, সেটা অজানা বলে আমার যুক্তি সঠিক। এই কাজটা করা যাবে না। এটার প্রয়োগ অনেক সময় দেখা যায় আস্তিক-নাস্তিকদের তর্কে। যেমন, বিজ্ঞান যেহেতু সব জেনে পারে নাই এখনো, তাই অজানা অংশের অস্তিত্বের কারণে আমার দাবি সঠিক। এমনটা করা যাবে না। ব্যাপারটা হল P vs NP প্রব্লেম কম্পিউটার সায়েন্সে এখনো আনসলভড প্রব্লেম। এটার সমাধান হয় নাই বলে আমরা অন্যান্য প্রমানিত কনসেপ্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি না যা।
৮। Thou shall not lay the burn of proof onto him that is questioning the claim. (“Burden of Proof Reversal”).
আমি যদি দাবি করি আমি ভুত দেখেছি, সেটার প্রমাণ আমাকেই দিতে হবে। আমি এমন বলতে পারব না যে আমি ভুত দেখেছি, এখন আমাকে ভুল প্রমাণ কর।
৯। Thou shall not assume that “this” follows “that”, when “it” has no logical connection. (“Non Sequitur”).
সকল দাবিতে লজিকাল কানেকশন থাকতে হবে। উনি ২০ বছর সততার সাথে কাজ করেছেন বলে এই বছরের দুর্নীতির মামলায় মিথ্যাভাবে ফাঁসান হইয়াছে এটা বলার কোন কারণ নেই। তিনি একই সাথে ২০ বছর সততার সাথে কাজ করতে পারেন, এবং এই বছর দুর্নীতি করে ধরা খেতেই পারেন। দুইটা ঘটনা মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ না যে একটা ঘটলে আরেকটা ঘটবে না।
১০। Thou shall not claim that because a premise is popular, therefore, it must be true. (“Bandwagon Fallacy”).
জনপ্রিয় কেউ কিছু বললেই সেটা সত্য হবে এটার কোনও কারণ নাই। জাকির নায়েক বা তাসলিমা নাসরিন কিছু বললে সেটাই গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হইয়া যাবে না। অথবা কোনও তত্ত্ব জনপ্রিয় বলেই সেটা সত্য এভাবে চিন্তা করে যুক্তি দাড়া করানো যাবে না। আগে যথেষ্ট নিরপেক্ষভাবে ব্যাপারটা নিয়ে পড়াশোনা করে নিতে হবে। তারপর সে বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে হবে।
এই দশটা রুল ফলো করে আপনার যুক্তি রেডি করলে চাপে পরার ভয় নাই। যে কোন যুক্তিতর্কে এই রুল ফলো করলে হয় জিতবেন বা শিখবেন। দিনশেষে যা সত্য তা সত্যই, আপনার আমার লাফালাফিতে কিছু আসে যায় না। নিজে ভুল করলে শুধরে নেওয়া শিখুন, অন্য কেউ ভুল করলে সঠিকভাবে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪৪