বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা যেখানে থাকবে না শ্রেণি সংঘাত, সবাই পাবে সমান সুযোগ। বাস্তবতা ভুলে আপাতত সংবিধানের কথাটাই মাথায় রাখি।
এবার আসি অন্য কথায়, উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম কতদিন ধরে ব্যবহার করছেন? শতকরা ৯৬ শতাংশ সম্ভাবনা আছে আপনি কম্পিউটারে আপনার ব্লগ পোস্ট কম্পোজ করে থাকলে উইন্ডোজ অথবা ম্যাক ব্যবহার করেছেন। সমাজতন্ত্রের কথা দিয়ে যখন পোস্ট শুরু করেছি তখন বড়লোকের ম্যাক নিয়ে কোন কথা বলবনা, কথা বলব খেটে খাওয়া জনগণের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ নিয়ে।
গরিব জাতি আমরা, টাকা দিয়ে উইন্ডোজ কেনার সামর্থ্য না থাকলেও থেমে থাকিনি, ক্র্যাক কপি ঠিকই খুঁজে নিয়েছি। যারা অরিজিনাল কিনেছেন তাদের গুনলাম না, আপনারা সংখ্যালঘু। যাই হোক চুরি আমরা করি, মাইক্রোসফট করতেও দেয়, কেন দেয় সেইটা অন্যদিন আলোচনা করব। কথা হইল যে পরিমাণ মানুষ উইন্ডোজ চুরি করে ব্যবহার করে আখিরাতে তাদের সওয়াব বিল গেটসকে দিলে মনে হয় তার পুলসিরাত উতরায় যাওয়ার একটা চান্স আছে। চুরির কথাও বাদ দিলাম, পারফরম্যান্সের কথায় আসি।
উইন্ডোজ আপডেট! এক আতঙ্কের নাম। বেশ কিছুদিন আগে রেডিটে পড়েছিলাম, এক ডিজে সাহেবের কন্সার্টের ঘন্টাখানিক আগে উইন্ডোজ আপডেট নেওয়া শুরু হয় ল্যাপটপে, আপডেট চালু হইল তো হইল থামার নাম নাই। ডাটা লসের ভয়ে রিস্টার্ট দিতে পারতেছে না আবার কোন ব্যাকাপ কপিও নাই। আউটকাম কি কি হয়েছিল সঠিক মনে নাই কিন্তু সেদিন সে পোস্টে বলতেছিল উইন্ডোজ আর ব্যবহার করবে না। উইন্ডোজ আপডেট নিয়ে আমার বন্ধুদেরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখেছি, সে কারণে স্যারের ঝাড়িও খেতে দেখেছি। যা হোক উইন্ডোজ আপডেট নাজিল হওয়া নিয়ে সবারই কমবেশি খারাপ অভিজ্ঞতা আছে।
এরপর আসি bloatware এর ব্যাপারে। আপডেট এর পর এই জিনিশ নিয়ে আমি সব থেকে বেশি বিরক্ত ছিলাম এটা নিয়ে। ব্লোট হল এমন সব অ্যাপ্লিকেশন যেগুলো আপনি ইন্সটল করেন নাই, সাথে প্রয়োজনও বোধ করেন না, কিন্তু তারা আছে। তাদের মালিকেরা অপারেটিং সিস্টেমের সাথে তাদের ভরে দেয়, তারা বসে বসে আপনার হার্ডডিস্কের জায়গা খায়। আবার রিমুভ করতেও ব্যাপক কস্ট করতে হয় অনেক সময়। হুদা কামে রিসোর্স নষ্ট হবার ব্যাপারটা কখনো মেনে নিতে পারি নাই। ভাইরাসও কিন্তু কম জ্বালাতন করে না উইন্ডোজে। আবার এন্টিভাইরাস ইন্সটল দেন, সেও বসে বসে রিসোর্স খাক পিসির। মরার উপর খাড়ার ঘা একদম।
এরসাথে আছে সময়ের সাথে পিসির গতি কমে যাওয়া। খেয়াল করে দেখবেন ৬ মাসের বেশি হলেই পিসির গতি কমতে থাকে। আমি ৭-৮ মাসের বেশি কখনও নতুন করে সেটাপ না দিয়ে থাকতে পারি নাই। ম্যাক্স রেকর্ড ১৩ মাস। এর জন্য নানা যত্ন নেওয়া লাগে। নিয়মিত হ্যান ডিলেট করো, ত্যান ইন্সটল কর। ব্যাপক ঝামেলা।
এই সব ঝামেলার সমাধান হল লিনাক্স, আর টাকা থাকলে ম্যাক। কিন্তু ম্যাক নিয়ে তো কথা বলব না, এইটা একটা সমাজতান্ত্রিক পোস্ট। লিনাক্সের কথায় আসি, লিনাক্স হল একটা ওপেন-সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার যে সব সফটওয়্যারের সোর্স-কোড সবার জন্য উন্মুক্ত, যে কেউ তা দেখতে পারে চাইলে চেঞ্জ করে নিয়ে নিজের মত ব্যবহার করতে পারে এমন কি সেই সফটওয়্যার নির্মাতা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে সেটা রিডিস্ট্রিবিউটের অনুমতিও দেয়। আচ্ছা, কোড দেখতে পারেন, চাইলে চেঞ্জ করতে পারেন, মানে কি এসবের অপারেটিং সিস্টেম ফ্রি নাকি ? হ্যাঁ, লিনাক্স একটা ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম।
লিনাক্সের সব থেকে ভাল দিক আমার যেটা মনে হয় সেটা হল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট। লিনাক্সের এমন ভার্সন আছে যেটা দিয়ে ৭-৮ বছর পুরান পিসিও পানির মত চলবে। সব থেকে কম রিসোর্স হাংরি ভার্সন ৩০০ এমবির মত র্যাম খায়। যেহেতু ওএস নিজে রিসোর্স দখল করে রাখে না, তাই আপনার চালানো সফটওয়্যার সেই রিসোর্স কাজে লাগাতে পারে।
লিনাক্স ব্যবহার করলে ভাইরাসের কথা ভুলে যেতে পারেন চাইলে। লিনাক্সের ইউজার শেয়ার ৩-৫ শতাংশের মত যেখানে উইন্ডোজের শেয়ার ৯০ পারসেন্টের বেশি। হ্যাকাররা তাই উইন্ডোজ টার্গেট করে তার ইউজারবেজের কারণে। এছাড়াও লিনাক্স বেশি সিকিউর হবার একটা কারণ হল এটা ওপেন-সোর্সড। মাইক্রোসফটের সিকিউরিটি যেখানে শুধু তাদের টিমই দেখে, সেখানে লিনাক্সের কোড দেখে কোন ফ্ল পেলে আপনি নিজে সেটা কমুনিটিতে তুলে ধরতে পারবেন, চাইলে কোড করে সেটা ঠিকও করতে পারবেন। মূলত যত বেশি মানুষ সিস্টেমের সিকিউরিটি ফ্ল খুঁজবে সিস্টেম তত সিকিউর হবে। এছাড়া প্রাইভেসি নিয়ে যদি মাথা ব্যথা থাকে তাহলে অবশ্যই উইন্ডোজ ছাড়া উচিত। উইন্ডোজ ইউজারের তথ্য নিয়ে ডাটা মাইন তো করেই সাথে আবার বিজ্ঞাপনও দেখায়। এই ধরনের আদিখ্যেতা লিনাক্সের নাই।
স্ট্যাবিলিটি নিয়ে কথা বলতে গেলে লিনাক্স সব থেকে স্ট্যাবল, কথা শেষ। একটানা ১০ বছর লিনাক্স সিস্টেম চালু রাখার রেকর্ড আছে সার্ভারে। তার উপর আপডেট নিয়ে কোন ঝামেলায় পরতে হবে না আপনাকে, যখন ইচ্ছা তখন আপডেট দিবেন। আপডেট শেষে সাধারণত রিস্টার্টও দেওয়া লাগবে না উইন্ডোজের মত।
আমার ব্যাক্তিগতভাবে যেটা খুব ভাল লাগে সেটা হল কাস্টমাইজ্যাবিলিটি। যদি আপনার মাথায় আসে যে যদি আমি এমন করতে পারতাম তাহলে খুব ভাল একটা সম্ভাবনা আছে সেটা অলরেডি কেউ ইমপ্লিমেন্ট করে ফেলেছে। আপনাকে খালি খুঁজে নিতে হবে। এমন কোন অংশ নেই যেটা ইউজার নিজের মত চেঞ্জ করতে পারে না। আমার ডেস্কটপের দুইটা ছবি যুক্ত করছি। unixporn সাব-রেডিটে প্রচুর ছবি পাবেন কাস্টমাইজড ডেস্কটপের।
যাই হোক, উইন্ডোজ যেখানে তার কোড দেখতে দেয় না, সেখানে লিনাক্স আপনাকে আপনার মত কোড বদলের স্বাধীনতা দিচ্ছে। সম্পূর্ণ কোডবেজের একচ্ছত্র অধিপতি এখানে ইউজার নিজে। এখানে কোন শ্রেণি সংঘাত নেই, না আপনাকে টাকা খরচ করে কিনতে হবে, না আপনাকে বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে হবে, স্বয়ং লিনাক্সের নির্মাতার মতই স্বাধীনতা পাবে ইউজার। এইটাই বিশ্বের একমাত্র সমাজতান্ত্রিক অপারেটিং সিস্টেম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৫৪