বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হয়েছি তখন। জানুয়ারি মাস, ক্লাস শুরু হবে হবে ভাব। র্যাগের কথা ভর্তির আগেই শুনেছি কম বেশি অন্যান্য বন্ধু আর বড় ভাইদের কাছে। ভাল কথা তো প্রতিদিনই প্রস্তুতি নিয়ে যাই এই মনে হয় সিনিওর কেউ ডাকল, কিন্তু ডাক আর পরে না।
দুই সপ্তাহ ক্লাস করার পরে একদিন সি-আর বলল ক্লাস শেষে কেউ যাবি না, সিনিওর ভাইরা আসবে দেখা করতে। আমি বোকাসোকা মানুষ বেশ খুশি হলাম, অবশেষে দেবতুল্য সিনিওরদের দেখা পাব যাদের ভয়ে ভার্সিটির প্রথম সপ্তাহে এত সালাম দিয়েছি যা সারাজীবনে দেই নাই। ভাল কথা, ক্লাস শেষ হল, স্যার চলে যাওয়ার খানিক পরেই সিনিওরদের আগমন, লক্ষ্য আমাদের সাথে পরিচিত হওয়া। জানতাম সিনিওররা শুধু নাচগান করায় মজা নেয় তারপর এটা ওটা খাওয়ায় র্যাগ পর্ব শেষ করে দেয়, এ আর এমন কঠিন কি।
কিন্তু এরপর যা হল রাসেল ভাই, তার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। তারা ঢুকেই আমাদের লাইনে দাড়াতে বলল। দাঁড়ালাম লাইনে, তারা বলল অমুক কোথায়? অমুকের কপাল খারাপ, সে ক্লাস রুমেই ছিল। দেখলাম অমুককে ধরে রুমের কোনায় নিয়ে একের পর এক চড় মারতেছে। বুঝতে বাকি থাকল না এতদিন কেন ধোঁকাবাজি করা হল আমার সাথে, এইভাবে মারামারি হয় জানা থাকলে মানসিক প্রস্তুতিটা নিয়ে রাখতে পারতাম। ধোঁকাবাজির কষ্ট লাঘব হওয়ার আগেই এক সাইডে ডাক পড়ল। আদেশ আসল নেচে দেখাতে হবে। খেলাধুলায় মোটামুটি একটিভ থাকলেও নাচার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। অপরাগতার কথা স্বীকার করার সাথে সাথে নিজেকে ডায়াসের উপরে আবিস্কার করলাম। বুঝলাম, নিস্তার নাই। চিঁচিঁ করে বললাম, ভাই নাচতে পারি না। ব্যস, তখনই শিখে গেলাম কিভাবে হাঁটতে হাঁটতে বাল্ব চেঞ্জ করতে হয় আর পানির ট্যাপ খুলতে হয়। যারা জানেন তারা তো জানেনই। যাই হোক, প্রতিদিন অগুনতি সালাম আর দেখে শুনে চলার ফল সেদিন হাতেনাতে পেলাম, অন্যদের নামে কমপ্লেইন থাকায় দেখি কাউকে চড়ানো হচ্ছে, কেউ বা দেওয়ালে ঝুলছে। আমি খুব দ্রুত ডায়াস থেকে নেমে রুমের এক কোনায় আমার মত নিরীহ সহপাঠীদের ভীরে মুখ লুকায় রাখা চেষ্টা করছি তখনই দিনের হাইলাইট ঘটনা ঘটেছিল। রুমের আরেক কোনায় আমার এক সহপাঠী জ্ঞান হারায় মাটিতে পরে গেছ।সিনিওররা সেদিন তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়ায় আমাদের দিকে আর নজর দেয় নাই।
যদিও ভেবেছিলাম এইটাই মনে হয় শেষ, তখনও বুঝি নাই খেলা কেবল শুরু হল।
চলবে.....
র্যাগকথন পর্ব -২
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৩