বিদঘুটে ফারেনহাইট স্কেল দেখে অনেকেই হয়ত অনেকবার ভ্রু কুঁচকিয়েছেন। মানে ৩২ ডিগ্রিতে পানি বরফ হবে এটা কেমন কথা আর ১০০ ডিগ্রিকে মানুষের দেহের তাপমাত্রা ধরলেও বিষয়টা না হয় মেনে নেওয়া যেত কিন্তু প্রায় '১০০' কে দেহের সাধারণ তাপমাত্রা ধরলে তাহলে স্কেলের সাথে ব্যাপারটা মিলে, কিন্তু আবার 'প্রায়' কেন। চলেন একটু ঘুরে আসি অষ্টাদশ শতক থেকে।
১৭০১ সালের ১৪ই আগস্ট নিঃসন্দেহে পোল্যান্ডের ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইটের জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন ছিল। এইদিনে হঠাৎ করেই মাশরুম পয়জনিং এর কারণে তার বাবা ও মা মারা যান। এরপর তাকে পাঠানো হয় আমস্টারড্যামে, যেখানে সে শিক্ষানবিস হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু কাজটি তার এতই অপছন্দ ছিল যে সে এই কাজ রেখে এতবার পালিয়ে গেছিল, যে কারনে তার নিয়োগকর্তা তার নামে ওয়ারেন্ট বের করেছিল। আমস্টারড্যাম থেকে পালিয়ে সে ইউরোপের বিভিন্ন শহর ঘুরতে শুরু করে। এই সময়েই বিভিন্ন সায়েন্টিফিক যন্ত্রাংশের উপর তার আগ্রহ সৃষ্টি হয় , বিশেষ করে থার্মোমিটারের উপরে। ১৭০৮ সালে তিনি দেখা করেন কোপেনহেগেনের মেয়র অলে রোমারের সাথে হয়ত সেই ওয়ারেন্টের ব্যাপারেই । কিন্তু ভাগ্যক্রমে অলে রোমার ছিলেন একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ। তিনি প্রথম আলোর পরিমেয় গতি হিসেব করে বের করেন। ওই সময়ে তিনি পা ভেঙ্গে ঘরেই দিনকাল কাটাতেন।তিনি ঘরে বসেই তাপমাত্রা মাপার একটি স্কেল তৈরি করেন যেখানে পানি বরফ হত ৭.৫ ডিগ্রিতে আর মানুষের দেহের তাপমাত্রা ছিল ২২.৫ ডিগ্রিতে।রোমার জ্যোতির্বিদ ছিলেন বলেই কিনা মনে হয় সেই স্কেলে পানি বাষ্প হওয়ার তাপমাত্রা ছিল ৬০ ডিগ্রিতে। ফারেনহাইট মূলত রোমারের এই স্কেলটিতে সামান্য পরিবর্তন এনে থার্মোমিটার তৈরি শুরু করেন। তিনি ৭.৫ কে ৮ এবং ২২.৫ কে ২৪ ধরেন কারণ তিনি মনে করতেন "ভগ্নাংশের ব্যবহার ছিল অসুবিধাজনক এবং অসুন্দর"। এভাবে কিছুদিন থার্মোমিটার তৈরির পর তিনি স্কেলটিকে ৪ দিয়ে গুন করেন। এভাবেই আমরা পাই ৮x৪ বা ৩২ ডিগ্রি যা বরফের তাপমাত্রা এবং ২৪x৪ বা ৯৬ ডিগ্রি যেটা প্রায় দেহের তাপমাত্রার একদম কাছাকাছি। তিনিই থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহারের পথিকৃৎ ছিলেন। গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট তার থার্মোমিটার তৈরির পদ্ধতি নিয়ে অনেক গোপনীয়তা অবলম্বন করতেন। তার তৈরি থার্মোমিটারগুলি ছিল সমসাময়িক সময়ের সেরা, এজন্য তিনি রয়্যাল সোসাইটিতে অভিষিক্ত হন যেখানে তিনি নিউটন, বয়েল আর হুকের গবেষণা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তাই তিনি কি জানতেন যে তরলের তারপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে তরলের আয়তন নির্দিষ্ট হারে বাড়ে নাকি শুধু হিসাবের সুবিধার জন্য ৪ দিয়ে গুন করেছিলেন তা হয়ত আমরা কোন দিনই জানতে পারব না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৫