আলো আমাদের চোখের লেন্সের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে রেটিনায় প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে। ডিটেইলসে না যাই, সেখান থেকে অনেক কাহিনী করে হিসেব করে মস্তিষ্ক আমাদের চারপাশের সব কিছু দেখায়। সমস্যা হল সবাই সমান দেখি না কেন ? কারো চশমা লাগে কারো লাগে না ,তার উপর চশমায় পাওয়ারেরও ব্যাপার আছে,কারো পজিটিভ কারো নেগেটিভ। ইভোল্যুশন বাই ন্যাচারাল সিলেকশনতো বলে যোগ্যতমই টিকে থাকবে তাহলে এই ত্রুটি নিয়ে মানুষ কিভাবে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ? আরো কথা হল পশুপাখিদের কি চশমার দরকার হয় ?
আসলে পশুপাখিদের তো আর চাইলেই চোখের ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় না।
পশুপাখির জগতে অন্যান্য ইন্দ্রিয় যদি যথেষ্ট শক্তিশালী হয় তাহলে চোখে দেখতে পাওয়াকে অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবেই দেখা হয়। কলেজে হয়ত ঘাস ফড়িং-এর চোখ পড়ে এসেছেন। ঘাসফড়িং দুইভাবে বস্তু দেখতে পায়। পরিষ্কার কয়েকশো প্রতিবিম্ব একসাথে অথবা ঝাপসা একটি প্রতিবিম্ব (যেমনটা আমরা মানুষরা দেখি শুধু ঝাপসা ভাবটুক ছাড়া)। অনেক প্রাণী দুরের শিকারিকে পরিষ্কারভাবে দেখতে হলে কাছের বস্তু পরিষ্কার দেখার বিলাসিতা বাদ দিয়ে দিতে হয় আর কি, ব্যাপারটা অনেক এরকম।
আর কোন প্রাণী যদি খারাপ দৃষ্টির জিন বহন করেই থাকে তাহলে সেই জিনটি তার বংশধরদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আগেই সাধারণত কার না কার শিকারে পরিণত হয়। যদি সে সফলভাবে ঐ জিনটি বংশধরদের মাঝে পাস করতে পারে তাহলে খারাপ দৃষ্টির জিনটি নিয়ে পরে সেই বংশধরেরা প্যাড়ায় পরে। মোট কথা, শিকার আর শিকারির রাজ্যে যে জিনটি কাজে লাগে না সেটি টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব।
তাহলে প্রাণিজগতে খারাপ জিন টিকিয়ে রাখতে এত কষ্ট হলে আমার আমার চশমা লাগে কেন ? ইভোল্যুশন বাই ন্যাচারাল সিলেকশন এর কারণে খারাপ দৃষ্টির জন্য দায়ী জিন বহু আগেই হারিয়ে যাওয়ার কথা। টেকনিক্যালি চাইলে মনুষ্যত্ব, সামাজিকতা, সম্পর্কের বন্ধন ইত্যাদিকে দায়ী করতে পারেন । একসাথে থাকার ফলে দলে যদি দুয়েকজন খারাপ দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন থাকতোও,তাদেরকেসহ দল রক্ষা করতে তেমন সমস্যা হত না। আর পরে চশমাতো আমরা ঠিকই বানিয়ে ফেললাম। তাই চশমা ব্যবহার করে খারাপ দৃষ্টিশক্তিসম্পন্নরাও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে, বংশধরদের মাঝে সেই জিনটিও ছড়িয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিনয়ত। যে কারণে প্রায়ই আমরা দেখতে পাই কাউকে না কাউকে চশমা ব্যবহার করতে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ জনে ৭ জন চশমা অথবা লেন্স ব্যবহার করে। ১৯৫৬ সালে যেখানে চীনে ১০ জনে ১ জনের চশমা প্রয়োজন হত সেখানে ২০১৬ সালের দেখা যায় ইয়াং জেনারেশনের ৯০% এরই চশমা অথবা লেন্স ব্যবহার করতে হচ্ছে।
তবে সমস্যাটি শুধুমাত্র জিনগত নয়। প্রথমে ধারনা করা হত হয়ত খুব কাছে নিয়ে সারাদিন বই পরা অথবা ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকার ফলে সমস্যাটি হয়ে থাকে কিন্তু সাম্প্রতিক রিসার্চে দেখা গেছে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর রিস্ক ফ্যাক্টর হতে পারে উজ্জ্বল সূর্যের আলোতে যথেষ্ট সময় না থাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৬