গেলো ২১-০৯-১২ তারিখ রাত ১১টার দিকে সামহোয়ার ইন ব্লগে দাঁড়িপাল্লা নামক নাস্তিক ব্লগার হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) কে ব্যঙ্গ করে প্রায় ১৫টির মত অরুচিকর এবং নোংরা কার্টুন ব্লগে প্রকাশ করে।এই ঘৃন্য কাজের প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে সামহোয়্যার ইন ব্লগের ব্লগাররা।ধর্ম-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে শক্তভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছিলো এবং ব্লগে মডারেটরের প্রতি ক্রমাগত দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো।এই সময় এক সুযোগসন্ধানী পক্ষ সামহোয়্যার ইন ব্লগকে নিয়ে সুদুরপ্রসারী এক ষড়যন্ত্রেই মেতে ওঠে,সুশৃঙ্খল প্রতিবাদে ঢেলে দেয়া হয় নোংরামী আর অশ্লীল আক্রমনের গরল।সামহোয়্যার ইনের হেড অফ অ্যালয়েন্স জানা এবং আরিলকে নিয়ে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট সম্বলিত ক্যারিকেচার এবং অশ্লীল গালিগালাজের তোড়ে ভেসে যায় সামহোয়্যার ইন ব্লগের সকল পেজ,সাধারন ব্লগারদের সকল সুশৃঙ্খল প্রতিবাদ।
অভিযোগের পাশাপাশি গুজব:
দীর্ঘক্ষন যাবত মডারেটরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করার পর প্রতি মূহুর্তে ব্লগাররা যখন ক্ষুব্ধ হচ্ছেন,তখন একই সাথে গুজব রটানো হয়- 'হিট'এর জন্য মডারেটররা এই পোস্ট এখনো ঝুলিয়ে রেখেছেন।একইসাথে গুজব ছড়ানো হয়,দারিপাল্লার পোস্ট নির্বাচিত কলামে রয়েছে! একই সময়ে ব্লগে মডারেটরদের দেখা না পাওয়া গেলেও নির্বাচিত পোস্ট আপডেট হওয়ায় ব্লগারদের মাঝে এই বিশ্বাস ছড়িয়ে দেয়া হয় যে,মডারেটর পোস্ট নির্বাচন করছেন কিন্তু দাড়িপাল্লার পোস্টের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না ইচ্ছাকৃতভাবেই।এতে করে ব্লগাররা আরো ক্রোধান্বিত হতে থাকেন।
নোংরামীর শুরু,একই সাথে প্রোপাগান্ডারও:
সুপরিকল্পিতভাবেই রাত ১.৩৩ এর দিকে ব্লগের কুখ্যাত এবং স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত শিবির সমর্থক এক ব্লগার 'অওয়াদুদ' ব্লগার জানাকে আক্রমন করে পোস্ট দেয়।নোংরা গালিগালাজপূর্ন ঐ পোস্টের পরও সে থেমে থাকেনি,বরং কুৎসিত সব ছবি কটোশপ করে ব্লগে ক্রমান্বয়ে পোস্ট করে যেতেই থাকে।একই সাথে তার দোসর ব্লগাররা পিঠ চাপড় দেয়ার পাশাপাশি নিজেরাও গালিগালাজে মেতে ওঠে।হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে অবমাননা করে দেয়ার পোস্টের প্রতিবাদ রুপ নেয় নোংরা এক খেলায়,যেখানে সামহোয়্যার ইন ব্লগ বন্ধ করে দেয়াটাই হয় প্রধান দাবী,পাশাপাশি চলতে থাকে ধার্মিক নামে পরিচয় দেয়া লোকগুলোর খিস্তিখেউর।
ফেসবুক থেকে প্রেসক্লাব:
রাতের বেলায়ই বেশকিছু ব্লগার হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে অবমাননা করে পোস্ট সরানো এং দাড়িপাল্লাকে ব্যান করার দাবী থেকে সরে গিয়ে সামহোয়্যারইন ব্লগ বন্ধের দাবীতে পোস্ট দিতে থাকে।কয়েকজন ব্লগার পরেরদিন সকাল (২২-৯-১২) সাড়ে দশটার সময় প্রেসক্লাবে সামহোয়্যার ইন ব্লগ বন্ধের দাবীতে মানববন্ধনের ডাক দেয়।
একইসময় ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে প্রোপাগান্ডা চালানো শুরু হয়,যাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ব্রেকিং ,সত্য কখনো চাপা থাকেনা ,সাইবার গ্রুপ অফ বাংলাদেশ প্রভৃতি।
যেটা সবাই জানলেও সেইসময় কেউ কেউ মানেন নি:
আগুনে ঘি ঢালতে যে কয়েকটা বিষয় কাজ করেছিলো,তা হলো নির্বাচিত কলাম সচল থাকা সত্বেও মডারেটরের না থাকা এবং নির্বাচক-মডারেটরের মাঝে পার্থক্য নিরুপন করতে না পারা।
ব্লগার ফিউশন ফাইভের এই পোস্টের ২৩৬ নং কমেন্টে জানা স্পষ্টই নির্বাচকদের ক্ষমতা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেছেন।নির্বাচক তারাই,যারা পুরনো ব্লগার এবং তারা শুধুই পোস্ট নির্বাচনের জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন এবং কাউকে ব্যান করা বা পোস্ট সরিয়ে নেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই।একই সাথে জানা বলেন,তিনি এসব নির্বাচকদের নির্বাচন করেছেন তাদের ব্লগিং এক্টিভিটি দেখে,মুখ চেনা বা পরিচিত বলে নয়। অথচ প্রতিবাদ চলাকালীন সময়ে কোনো এক নির্বাচক পোস্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া চালালে ব্লগারদের মাঝে ছড়িয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্লগকে আর অস্থিতিশীল করতে করতে ছড়িয়ে দেয়া হয় ''মডারেটর ব্লগেই আছে,পোস্ট নির্বাচন করে যাচ্ছে কিন্তু দাঁড়িপাল্লার পোস্ট সরাচ্ছেনা,ব্যানও করছেনা'' !
একইসাথে গুজব রটানো হয়,নির্বাচিত কলামে দাড়িপাল্লার পোস্ট 'নির্বাচিত' করা হয়েছে!অথচ এই গুজবটি সম্পূর্ন ভিত্তিহীন ছিলো এবং এর সপক্ষে কেউ কোনো স্ক্রিনশট দেখাতে পারছেন না!ব্লগের ফ্রন্টপেজের গালিগালাজ আর নোংরা আক্রমনসম্বলিত পোস্টগুলোর প্রচুর স্ক্রিনশট পাওয়া গেলেও এই যে ''নির্বাচিত'' তে দাড়িপাল্লার পোস্ট থাকা-তার সপক্ষে কোনোই প্রমান নেই!কিন্তু অজানা অচেনা এক চিলের পেছনে সেই মূহুর্তে ছোটাটাই ছিলো অনেকের জন্য স্বাভাবিক এবং হয়েছেও তাই-ব্লগ হয়ে গেছে আরো উত্তপ্ত!
রাতে মডারেটর থাকেন কি না?
সামহোয়ারে যারা ব্লগিং করে অভ্যস্ত,তারা সকলেই জানেন বেশিরভাগ সময়ই রাতের দিকে পোস্ট মডারেশন হয়না মডারেটরের অনুপস্থিতির জন্য।বিশেষ করে ছুটির দিন গুলোতে এই গ্যাপটা বেশি থাকে বলে প্রায়ই এই সময়ে ব্লগে অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।এ নিয়ে ব্লগে বেশ কয়েকবার ২৪/৭ মডারেশনের দাবী তোলা হলে হেড অফ অ্যালায়েন্স জানা জানান,তাদের মডারেশন টীমটির আকার খুবই ছোট এবং তার আর্থিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা জানিয়ে যতটা বেশি সময় সম্ভব ব্লগে মডারেশন চালু রাখার কথা বলেন। অর্থাৎ রাতে মডারেটর থাকেন না,সে বিষয়টা গোপন নয় বং এটাই সুযোগসন্ধানীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ!কিন্তু ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে নিক ব্যান ও পোস্ট সরানোর দাবির বদলে যখন আক্রমনটা সামহোয়ার ইন ব্লগ বন্ধের দাবীতে চলে আসে,তখন কিছুটা ধারনা করা সম্ভব -পেছনের বিষয়টি এত সাধারন নয়।
ধর্মান্ধের দল নেই-কারা ছিলো পেছনে?
রাতেই ব্লগ বন্ধের দাবীতে প্রেসক্লাবে সকাল সাড়ে দশটায় মানববন্ধনের দাবী তোলা হয়,সকালের মাঝেই দেখা যায় ব্লগ নিষিদ্ধের দাবীতে ব্যানার প্রস্তুত!সামহোয়্যারইন ,মুক্তমনা এবং আমারব্লগ বাতিলের দাবীতে রাতারাতি ব্যানারসহ প্রেসক্লাবের মানববন্ধন প্রমান করে,সামহোয়্যার সেই রাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।যেসকল ফেসবুক গ্রুপ থেকে সামহোয়্যার ইন ব্লগ বন্ধের দাবীতে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে,সেগুলোর মাঝে কেউ করছে নিজামীর পক্ষে প্রচারনা,কখনো বলছে মুক্তিযুদ্ধে প্রমানিত যুদ্ধাপরাধি কেউ নেই !এমনকি একই পেজ থেকে শিবির নেতার বক্তব্য প্রচারও করা হয় !
আরেকটি গ্রুপ।যা কিনা সামহোয়্যারিন ব্লগকে ধর্মবিদ্বেষী বলে প্রচারনা চালিয়ে বন্ধ করে দেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছে,তাদেরও মেডিক্যাল ভর্তি আন্দোলনের সময় শিবির কানেকশন লুকিয়ে রাখতে পারেনি। তাছাড়া সামহোয়্যার ইনের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডায় অংশ নেয়া সাইবার গ্রুপ অফ বাংলাদেশ নামধারী ধর্মান্ধ একটি পেজের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবস্থান এভাবেই বের হয়ে পড়ে !এরা মনে করে হাজার বছর ধরে এবং পদ্মা নদীর মাঝির মতন উপন্যাস তুলে দেয়া উচিত !এই মানসিকতা কি ব্লগ প্ল্যাটফরমের মতন স্বাধীন মতপ্রকাশকে সমর্থন দিতে পারে?
ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে ব্লগ বন্ধের দাবী-লাভ কার?
বাংলা ব্লগকে বন্ধের দাবি চালালে লাভের গুড় কার পাতে যাবে?যখন সব ধরনের সংবাদ প্রিন্ট মিডিয়ায় মালিকের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রিত হয়,তখন সবার মতপ্রকাশের ভরসা এই বাংলা ব্লগগুলোই।সামহোয়্যার ইন,আমারব্লগ বন্ধ করে তথাকথিত ধার্মিক কোন ব্লগটিকে খুলে রাখার জন্য এই প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে?উপরের বিভিন্ন পেজের লিংকগুলোর কর্মকান্ড থেকে এটা স্পষ্ট যে সামহোয়্যার বা আমারব্লগ নামক ''ধর্মবিদ্বেষী'' ব্লগগুলো বাদে অন্যান্য ''ধর্মান্ধ'' ব্লগ খুলে রাখলে স্বাধীনতাবিরোধী দলটিরই প্রচারনা চালানোতে সুবিধা।এই সুবিধা দেয়ার জন্যই কি অনলাইন নীতিমালা চালু করে ব্লগ নিয়ন্ত্রন করা হবে?
এই মুহূর্তে বিভিন্ন পেজে সামহোয়্যার ইন ব্লগ বন্ধের দাবীতে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত সমর্থক ও ওড়না পেজগুলো বেশ ভালোভাবেই একটিভ রয়েছে,একের পর এক রটনা রটিয়ে অনলাইন নীতিমালার বলি বানানোর জন্য সচেষ্ট রয়েছে।একইসাথে জামায়াত সমর্থকদের ঘাঁটি বলে পরিচিত একটি প্ল্যাটফরম থেকে নিয়মিত প্রচারনাও চালানো হচ্ছে।কিন্তু মতপ্রকাশের উন্মুক্ত এই প্ল্যাটফর্ম কারো কাছে মাথা নত করবেনা,শত বাঁধা এলেও সেই বাঁধার বাঁধ ভেঙ্গে টিকেই থাকবে।
অনলাইনে কোনো ধর্মবিদ্বেষী বা ধর্মান্ধের সুবিধা করে দেয়ার জন্য এর জন্ম হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪০