সবেমাত্র স্ত্রীকে তাহাদের বাটীতে স্থানান্তরপূর্বক আড্ডাস্থলে গিয়া বন্ধুবান্ধব সহযোগে দন্তবিকশিত করিয়া হাসিতেছিলাম।অন্যদিকে দুষ্ট ছোটভাইও ইদের ছুটিতে বাটীগমন করিয়াছে।প্রেক্ষাগৃহে না যাইবার এরুপ শক্তপোক্ত কারনে আমার দন্ত আরো ব্যাদান হইয়া গেলো।কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক।মাতুলপুত্র আসিয়া ধরিয়া বসিলো।এই ভ্রাতাকে লইয়া মোস্ট ওয়েলকাম দেখিতে যাইতেই হইবে!বিজ্ঞাপনে সে জলিল সাহেবকে দেখিয়া নিশ্চিত হইয়াছে-বঙ্গদেশের জলিল শক্তিতে হাল্কের পিতা,উড্ডয়নশিল্পে বিমানের দাদু,নৃত্যে মাইকেল জ্যাকসনের খুড়ো,মারামারিতে ভ্যান ড্যামের পিসেমশাই।অতএব এই অভাবনীয় প্যাকেজ দেখিবার জন্য টিকেট কাটিবার কষ্টটুকুও সে আমাকে করিতে দিবেনা।সহস্তে খরিদ করিয়া এখন আমাকে টানিতেছে! খাদ্যসামগ্রীও আমার ভ্রাতা ক্রয় করিবে,এই মর্মে কঠিন শর্তারোপ করার পরও জলিলদর্শনের আশায় উচ্চসুদে ভ্রাতা রাজি হইয়া গেলো।জলিলদর্শন এখন পদ্মাসেতু ইস্যুতে নির্বাচনের বৈতরনী পার হইবার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়!
বসুন্ধরার অষ্টমতলায় গিয়া চক্ষু ছানাবড়া হইয়া গেলো।একেকটি চেয়ারের উপর একেকটি বালক,কোলে তাহাদের মনুষ্য ল্যাপটপ।তাহারা অষ্টাবক্র হইয়া ছবি তুলিতেছে।''জান খাও না,পাখিটা খাও না'' ইত্যকার অনুরোধে প্রতিটা চেয়ারের আর্তনাদ চাপা পড়িয়া যাইতেছে।যেকোনো সময়ই বালকবালিকারা শুইয়া পড়িবে-এমন অবস্থা।আহমেদ আকবর সোবহানের উপর রাগ হইলো।ব্যাটা কিছু খাটপালংকের ব্যবস্থা করিলেও তো পারিতি!
যাহাই হউক,যথাসময়ে আমরা প্রেক্ষাগৃহে নিজ নিজ আসন খুঁজিয়া বসিয়া পড়িলাম,যথাসময়ে দেড়ফুট নাতির সাথে ছয়ফুটি নাতবৌয়ের ডায়াপারের বিজ্ঞাপন প্রচার করা শুরু হইলো।
ছবি শুরু হইতেই না হইতেই দেখিলাম,মুশকিল আসান বাবার মাজার দেখাইতেছে।টিকেটখানা আরো একবার ভালো করিয়া দেখিলাম,ভুল করিয়া দেওয়ানবাগীর মাহফিলের ভিডিও দেখিতে আসিলাম নাকি!মুশকিল আসান বাবার মাজারের খাদেম হিসাবে তদারকি করিতেছেন রাজ্জাক। আয়রন করা সদ্য পাটভাঙ্গা দাড়িতে উনাকে দেখিয়া শ্রদ্ধায় মাথা হেলিয়া গেলো।যার যার যা কিছু প্রয়োজন,তাহা ঐ মুশকিল আসান বাবার মাজারের দানবাক্সে ফালাইলেই নাকি আর দেখিতে হইবেনা,কাঙ্খিত সামগ্রী সোজা পৌছাইয়া যাইবে আপনার গৃহে!স্বয়ং মুশকিল আসান বাবা ওরফে অনন্ত জলিল আপনার খেদমতে হাজির আছেন,লাগলে শুধু জায়গায় দাড়াইয়া আওয়াজ দিবেন।
এরই মাঝে এক ব্যবসায়ী ভিলেনদের দ্বারা ধৃত হইয়াছেন,৪০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন লাগিবে।উনার স্থুলকায়া স্ত্রী মাজারে গিয়া স্বামীকে না চাহিয়া চাহিয়াছেন মুক্তিপনের টাকা।অন্যদিকে একদল ভিলেন সদ্যই দুইলক্ষ ডলার ছিনতাই করিয়া মজা নিতেছিলো।উহারা মজা ঠিক মত নিবার পূর্বেই হলভর্তি দর্শক মজা নেয়া শুরু করিলো।পর্দায় স্বয়ং অনন্ত জলিল উরফে মুশকিল আসান বাবা হিন্দি 'কৃষ' ছবির মুখোশ পড়িয়া টাকা উদ্ধারে আসিয়া পড়িয়াছেন।মোটরসাইকেল ভিলেনদের তাড়া করিবার সময় হাজারখানেক গুলির সম্মুখীন হইলেন।একেটি গুলি এক একটি এটম বোমার সমান ক্ষমতা নিয়া একেকটি গাড়ি-ট্রাক ধ্বংস করিতে লাগিলো,কিন্তু বাংলাছবির নিয়ম অনুযায়ী কোনো গুলিই জলিলকে স্পর্শ করিতে পারিলোনা।নিতান্তই হেলাচ্ছলে উনি গুলিগোলাসমূহ কোনোটাকে ডানদিকে সাইড দিলেন,কোনটাকে নাকের উপর দিয়া সাইড দিলেন।ভ্রাতা তালি মারিয়া উঠিলো,ম্যাট্রিক্স নকল!আমি নিজের মাথাখানি জলিলস্টাইলে একদিকে হেলাইয়া বলিলাম,''রোসো ভ্রাতা,এগুলি আর এমন কি দেখিয়াছো,সবে তো শুরু''! ভ্রাতার দেখিয়া মুখ শুকাইয়া গিয়াছে!
এখন অনন্ত মুশকিল উরফে জলিল সাহেব ইতিমধ্যে পলিথিনে প্যাচাইয়া ৪০ লক্ষ টাকা চাহিবামাত্র ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে দিতে বাধ্য ছিলেন,সুতরাং দিয়াও দিলেন।সেই ৪০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন পাইয়া ভিলেনরা একটু রং তামাসা করিতেছিলো।সেইখানেও বেরসিকের মতন গিয়া হানা দিলেন জলিল।নিজেকে 'সিষটির ষেরা' জীব ঘোষনা দিয়া সবাইকে ন্যায়ের পথে উত্তম-মধ্যম সহযোগে 'মোস্ট ওয়েলকাম' জানাইলেন।আমি ভালো করিয়া দেখিলাম,'সিষটির ষেরা' জীবের ইয়ে আরো পিনোন্নত হইয়াছে।ভ্রাতাকে সেই কথা জানাইতেই সে মাথা নাড়াইয়া একমত হইলো,জলিল আরো বিশালবক্ষা হইয়াছে।
সম্ভবতঃ জলিল নিজের অভিনয় ক্ষমতা সবাইকে দেখাইয়া দিবার জন্য উদগ্রীব ছিলো,সুতরাং ছবিতে আরেকখানা চরিত্র সে বাগাইয়া লইয়াছে।মুশকিল আসানবাবা জলিলের আরেক পরিচয় দুদকের কর্মকর্তা আরিয়ান চৌধুরী।উনি দেশের টাকা যারা পাচার করিতেছে,তাহাদের যম।এবিসি(আহমেদ শরীফ) একজন কুখ্যাত ঋণখেলাপী।উনার বাসায় হানা দিলেন জলিল।হানা দিয়াও যখন কিছু পাইলেন না,তখন হুট করিয়া খেয়াল হইলো,এবিসি'র পাড়ির কুকুর ঘেউ ঘউ করিতেছে।সবাই জানি অনন্ত জলিলের মস্তিষ্ক কম্পিউটারের চাইতে প্রখর,তাছাড়া 'সিষটির ষেরা' জীব মানুষ হইয়া উনি কুকুরের ইঙ্গিত ধরিতে পারিবেন না,এমনটা হইবার নহে।উনি কুকুরের সিগনাল ধরিয়া মেঝেতে লুক্কায়িত কালো টাকা বাহির করিয়া ফেলিলেন।শুধু কুকুরের সিগনালই নয়,উনি নিচতলায় বসিয়া দোতলার বদ্ধ বেডরুমের ফোনের রিংও শুনিয়া ফেলিলেন।ফোন ধরিয়া 'ইশটুপিট' বলিয়া গালি দিতেই খেয়াল হইলো,ইহা অধরা চৌধুরীর(বর্ষা) ফোন।অধরা চৌধুরী হইলেন এবিসি'র একমাত্র কন্যা।জলিল ঘোষনা দিলেন,উনার হৃদয় ভিজিয়া গিয়াছে।অনন্তের হৃদয় ভেজার কথা শুনিয়া আরেকবার সেদিকে তাকাইয়া ঢোঁক গিলিলাম।
বর্ষা তাহার পিতার এরুপ হেনস্থা দেখিয়া ঠিক করিলো জলিলকে শায়েস্তা করিবে।ধর্ষনের মামলায় ফাঁসাইবার জন্য সে জলিলের অফিসে গিয়া স্বেচ্ছায় বস্ত্র উন্মোচন করা শুরু করিলো।দর্শক উসখুস শুরু করিলো,কিছু একটা হইবে ভাবিয়া।জলিলসাহেবও 'বিউটিপুল' বলিয়া সমর্থন জানাইলেন।সকলকে হতাশ করিয়া নায়িকা ইঞ্চিখানেক হাতার কাপড় ছিড়িয়া থামিলেন।ভ্রাতা আর আমার এক টিকেটে আরো কিছু দেখার আশাটা নষ্ট হইয়া গেলো।পিছন হইতে কে যেন হতাশায় খিস্তি করিলো।হতাশায় প্রেক্ষাগৃহে যেন গোরস্থানের নিস্তব্ধতা নামিয়া আসিলো।
ইতিমধ্যে ডিজুস প্রতিনিধি সহযোগে একখানা সুফী ও ভক্তিমূলক গানও প্রচার হইয়া গিয়াছে।বর্ষা আরো একবার জলিলের উপর ব্যর্থ প্রতিশোধমূলক হামলা চালাইয়াছে।পুলিশের উপর মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হইয়া যাওয়ার মানুষ দলে দলে মাজারে ছুটিতেছে,চাহিবামাত্র টাকা-ভরি ভরি গয়না পাইতেছে।তাই পুলিশ কমিশনার সোহেল রানা মিটিং ডাকিলেন,নিশ্চুপ কর্মকর্তাদের 'এভরিবডি সাইলেন্ট' বলিয়া হুংকার দিলেন,সবশেষে কমিশনার হইয়া এসআই লেভেলের কর্মকর্তা বাপ্পারাজকে মুশকিল আসান বাবাকে ধরিয়া আনতে ফরমান জারি করলেন।অনেকদিন পর বাপ্পারাজের ফোলা ফোলা মুখ দেখিয়া পটকা মাছের কথা মনে পড়িলো।ঐদিকে আসিফ খান( মিশা সওদাগর )সম্পর্কে আহমেদ শরীফের ভাতিজা এবং ঋণখেলাপি।বাসের ভিতরে নারীসঙ্গী লইয়া বেচারা রগড় করিতেছিলো।কিন্তু হিংসুক জলিলের সহ্য হইলোনা।উত্তম-মধ্যম দিয়া তাহাকেও সৎ পথে ''মোস্ট ওয়েলকাম'' জানায়া মুখোশধারী জলিল নিষ্ক্রান্ত হইলো।
পুরা ছবিতেই জলিল বোয়ালমাছের মতন হাঁ করিয়া থাকা সত্ত্বেও বর্ষা তাহাকে নকল প্রেমের বড়শিতে গাথিতে পারিতেছিলোনা।আজব হইলা দেখিলাম,নায়ক নায়িকা ঢাকার রাস্তা হইতে ব্যাংককে গিয়া কফি সাঁটাইয়া আসিলো,কিন্তু নায়ক সেটা টেরও পাইলোনা।পাশের ললনা দেখি সখীদের সাথে ব্যস্ত হইয়া গেছেন,বর্ষার নাকি ঠোঁটে বোটক্স মারিয়াছে ইত্যকার মেয়েলি হিংসা।তাহাদের হিংসা শেষ হইতে না হইতেই বর্ষার সাথে জলিলের গান হইয়া গেলো।জলিল বেশ কায়দা করিয়া হাত-পা ছুড়িলেন।হাসিতে প্রেক্ষাগৃহে যেন বোমা ফাটিলো।
মিশা সওদাগর দেশে আসিয়া চাচা এবিসি'র সাথে একমত হইলেন এই আরিয়ান আর মুশকিল আসান বাবা ব্যাটাকে সিস্টেম করিতে না পারিলে সমস্যা।আরেকটা অবশ্যম্ভাবী মারামারি,আরো কিছুক্ষন জলিলের আশেপাশে গুলির ওড়াউড়ি।সবশেষে 'জলিল জয়যুক্ত হয়েছে,জলিল জয়যুক্ত হয়েছে'।ইন্টারমিশন শুরু হইলো।
ইন্টারমিশনের সময় রাগ হইলো।বাঙ্গালির এক ঘন্টায় এত ক্ষুধা কিভাবে পাইয়া যায়!প্রেক্ষাগৃহে যেন খাওয়া আর পেচ্ছাপের লাইন শুরু হইয়া গিয়াছে।এক বালক দেখি তাহার বালিকাকে হলের যাবতীয় স্পর্শ হইতে বাচাঁইবার (!) জন্য তাহাকে জড়াইয়া রহিয়াছে!এইবারে প্রেক্ষাগৃহের ভিতরেও খাট পালংকের অভাব টের পাইলাম।ইন্টারমিশন আসিতেই মন চনমন করিয়া উঠিলো,শিসে হল ভরিয়া গেলো।স্বল্পবেতনের এসআইয়ের স্ত্রী রাধিকা পাওলি উদাম হইয়া বাথটাবে গোসল করিতেছেন,মক্সো করিতে থাইল্যান্ডে ছুটিয়া গান গাহিতেছেন।ভ্রাতাকে খোঁচা দিলাম।পাল্টা খোঁচায় সে আশ্বস্ত করিলো,তাহার নজর এড়ায় নাই।
জলিল আর বর্ষার মাঝে আরেকখানা গান হইবার প্রয়োজন ছিলো,তাহা হইলোও ।জলিল বর্ষার গায়ে হাত বুলাইয়া দিলেই কুদরতি শক্তিতে সেইখান হইতে আগুন ধরিয়া গেলো,ফুলেল আবজাব বিচ্ছুরিত হইলো,কালো কালো ধোঁয়াও দেখা গেলো! তাহাদের সেই রুপমাধুর্য্যের আগুন এবং পরিবেশদুষনকারী কালো ধোঁয়া নিভাইতে তাহারা পশ্চাতদেশে ধোঁয়া লইয়াই সমুদ্রে ডুব দিলেন।বাবার মাজারের অসীম মহিমা এবং আবাল গ্রাফিক্সের কুদরতে তাহারা পানির নিচে কিছুক্ষন মাছেদের সাথে গান গাইলেন,পানির নিচে ঠিক সাঁতার না-উড়িলেন বলাই যুক্তিযুক্ত হইবে।আমার মুত্র বিসর্জন করার ইচ্ছা প্রবল হইলো।
এইসময় মিশা সওদাগর মাত্রই তাহার জাপানী পার্টনার ড্যানিকের কাছ ২০০ মিলিয়ন ডলার কট খাইয়াছে।ঐ টাকা এখন হার্ডডিস্কে রাখা আছে।ঐ হার্ডডিস্করুপী ডলার পাইবার জন্য সে আবার সেই বস্তিতে ফাঁদ পাতিলো।সদা সুটকোটটাই এবং স্যান্ডিগেঞ্জিপরিহিত জলিল বস্তিদের সাহায্যার্থে আবারও টু দ্যা রেসকিউ।এবং বক্ষবন্ধনী অবমুক্ত হইয়া শিকলবন্ধনীতে জড়াইলো।অর্থাৎ জলিল ধরা পড়িয়াছে।ইলেক্ট্রিক শক দিয়া মিশা জলিলের স্বীকারোক্তি আদায় করিলো-জলিলই আরিয়ান = মুশকিল আসান বাবা। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হইয়া জলিল মিশার পার্টনার ড্যানিকের হার্ডডিস্ক আনিবার জন্য নিজের হার্ডডিস্ক বর্ষাকে লইয়া ড্যান্সবারে গেলো।মুম্বাইয়ের ফ্লপ নায়িকা স্নেহা উল্লাল এইখানে টেকি ব্লগার হিসাবে আবির্ভুত হইলো। সাথে জলিল কিছুক্ষন হাত-পা ছুড়াছুড়ি করিলো,অন্যদিকে দীঘল কালো চুলের ড্যানিকের সাথে বর্ষা মাথা ঝাকাইলো।অতঃপর পলায়ন।পলায়নরত বর্ষা আর জলিলের সাথে ড্যানিকের লোকজনের মৃদু সংঘর্ষ হইলো।কয়েকজন ভিলেন লিচুর ছিলকা ফালানোর মতন করিয়া গ্রেনেড মারিলো।লক্ষখানেক গুলিগোলা বিনিময়ের পর গোটা পাঁচেক ভিলেন ধরাশায়ী হয়,তবে আল্লাহর অশেষ নেয়ামতে এবং পীরে এফডিসি স্ক্রিপ্টরাইটার গাঞ্জাপুরি উলামায়ে বাংলাছবির দোয়ায় জলিলের কিছুই হইলোনা।বরং মৃত স্টীভ জবসকে হতভম্ভ করিয়া জলিল আইফোনের ভয়েস কমান্ডের সাহায্যে সিলিন্ডার বিস্ফোন ঘটাইয়া ভিলেনকে আহত করিলো।বিস্ফোরনের পরও সিলিন্ডারটিকে অবিকৃত অবস্থায় দেখা যায়(ইহা অলৌকিক বিষয়,শেয়ার করুন),তবে কোনো ধর্মের স্রষ্টার নাম খোদাই করা ছিলো বলিয়া জানা যায় নাই।বাকরুদ্ধ ভ্রাতা আইফোন খোঁচাইতে খোঁচাইতে বলিলো,''হোয়াট এন অ্যাপ!আসলেই আছে?''।আমি বলিলাম,''আছে।অ্যাপস্টোর হইতে ডাউনলোড কর,'কাবোদাচো' নামে পাইবি।জাপানি অ্যাপ ''।
ভ্রাতা আগ্রহী হইলো,পরক্ষনেই রসিকতা টের পাইয়া চুপ মারিতে সময় নিলোনা ।
এইবার মিশা দেখিলো,জলিল আর বর্ষার মাঝে মজমা শুরু হইয়া গিয়াছে।হার্ডডিস্কখানা জলিল সাহেব পুলিশ কমিশনার সোহেলরানার হাতে তুলিয়া দিয়াছে।ক্রুদ্ধ হইয়া মিশা বর্ষাকে ধরিয়া ক্রুশবিদ্ধ যীশুর ন্যায় ঝুলাইয়া রাখিলো।আশেপাশে কিছু লেজার বিম সাজাইয়া বিষয়টাকে ভয়ংকর দুর্ভেদ্য প্রমান করার চেষ্টা করিলো।মনে মনে ভাবিলাম,বিদ্যুত গেলেই তোমার ঐ লেজারের দফারফা।বাংলাদেশে আসিয়া লেজারের কেরামতি?বর্ষার গন্ধে জলিল ছুটিয়া আসিলো।আবারও গুলি পাল্টা গুলি বিনিময়।রসিক একজন ভিলেন রাইফেলে গ্রেনেড লঞ্চার এটাচমেন্ট লাগাইয়া কেরদানি দেখাইলো,কয়েকজন আবারও লিচুর ছিলকা ফেলিবার মতন করিয়া গ্রেনেড ছুঁড়িলো।ঘটনাস্থল হইতে পরবর্তীতে লক্ষখানেক গুলির খোসা, গন্ডাখানেক লাশ ও জলিলের বিখ্যাত স্যান্ডোগেঞ্জির দুয়েকটা সুতা উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
এইবারে মিশা সওদাগর উপায়ান্তর না দেখিয়া হেলিকপ্টারে করিয়া বর্ষাকে লইয়া পালাইবার ব্যবস্থা করিলো।৩০০ মিটার উচ্চতায় উড়িয়া যাওয়া হেলিকপ্টারকে ধাওয়া করিলো মহানায়ক জলিলের মোটরসাইকেল।বিজ্ঞানের তাবৎ সুত্রকে ভুল প্রমান করিয়া মোটরসাইকেল উড়িয়া ৩০০ মিটার উচ্চতায় উড়ন্ত হেলিকপ্টারে ল্যান্ড করিলো।দর্শককূল নিঃশ্বাস নিতেও ভুলিয়া গিয়াছে -এইরুপ অবস্থা!আমি চালিয়াতমার্কা হাসি দিয়া ভ্রাতাকে বলিলাম,''এইবার দেখিবি,অনন্ত কিভাবে হেলিকপ্টার ক্রাশল্যান্ডিং হইতে বাচাঁইয়া দেয়,পাইলট বটে!''।আমার ধারনা ভুল প্রমানিত করিয়া অনন্ত হেলিকপ্টার হইতে লাফ দিয়া জমিতে পড়িবার উপক্রম করিলো।ভবিষ্যতবানী ভুল প্রমানিত হওয়ায় বিব্রত হইলেও দমিলাম না।বলিলাম,''ব্যাপার না,দেখ এইবার বাংলাছবিতে প্রথমবারের মতন প্যারাশ্যুট রেসকিউ হইবে!'' । দ্বিতীয়বারের মতন আমার ধারনা ভুল প্রমানিত হইলো।স্পষ্টতই দেখা নিচের জমি খানা বিশাল সমুদ্রে কিভাবে যেন পরিবর্তিত হইয়া গেলো!বাংলাদেশের আকাশ হইতে পড়ন্ত জলিল আর বর্ষা ব্যাংককের সমুদ্রসীমায় পতিত হইলো।বাংলাদেশের পুলিশ বাপ্পারাজ ঘটনাস্থল হইতে স্যান্ডিগেঞ্জি জলিলকে উদ্ধার করিলো।
ছবি শেষ হইলো।আমি ছবিটির পজিটিভ দিক লইয়া ভাবিতে লাগিলাম।
@নিঃসন্দেহে জলিল সাহেব।উনার উচ্চারন আরো শানিত হইয়াছে।ইশটুপিড,ইশটপ,বুলু বারড হুটেল,পোদান(প্রদান),আসে(আছে),হার্ড ডিকস( হার্ড ডিস্ক,hard dicks না) ইত্যকার উচ্চারনে সাইফুরস জাতীয় কোচিং সেন্টারের ব্যবসা ফুলিয়া উঠিতেছে।
@অসাধারন ভি এফ এক্স!সুপারম্যান উড়িতে পারে,কিন্তু সে স্যান্ডোগেঞ্জি পড়িতে পারেনা।জলিল সাহেব বন্ধ থাকা মোটরসাইকেল লইয়া উড়িতেও পারেন,স্যান্ডোগেঞ্জিও পড়িতে পারেন।
@চিত্রনাট্যকার আরেকখানা পজিটিভ দিক!নিজস্ব মগজের ছটাকমাত্র খরচ না করিয়াই তামিল ছবি হইতে পুরাটাই মারিয়া দিয়াছেন!আপগ্রেডেশন বলিতে তামিল ছবিতে মুরগী সাজিয়াছিলো নায়ক,এইখানে সে মুশকিল আসান বাবা।আর যাই হউক,বাঙ্গালীতো আর মুরগা না,যে নকল কাহিনি ধরিতে পারিবে না!
@জলিল সাহেব কোনো গানেই তাহার ঠোঁটের বিন্দুমাত্র ক্যালোরি খরচ করেন নাই।অর্থাৎ তিনি কোনো গানেই ঠোঁট মেলানো বা লিপসিং না করিয়াই হাত-পা ছুড়িয়া গিয়াছেন!লিপসিং ছাড়াও যে গান হইতে পারে,না দেখিলেই বুঝা যাইবেনা।তবে মারামারির সিকোয়েন্সগুলিতে উনি কখনোই মুখ বন্ধ রাখেন নাই,সর্বদাই হাঁ করিয়া ছিলেন।
@রাধিকা।বাথটাবে শুইয়া পদযুগল এবং নর্তনকুর্দন করিয়া ভ্যানিশ হইয়া যাওয়া ছাড়া উনার কোনো কাজ ছিলোনা।এবং স্নেহা উল্লাল।মুম্বাইয়ে বেকার বসিয়া থাকিতে থাকিতে গায়ে বেশ স্নেহ পদার্থ জমাইয়া আসিয়াছেন।
@একশন ডিরেক্টর সাহেবকে সেই ব্যাংকক হইতে সেলাম।আপনার জন্মবিরতিকরন পিল খাইবার সময় হইয়াছে জনাব।
@ডিরেক্টর ব্যাটা।বিশাল পজিটিভ দিক।সিকোয়েন্সহীনভাবে একটার পর একটা সিন এডিটরের সাথে জুড়িয়া গেছেন।জলিলের ফোন বদলাইছে তিনবার,অপহৃত ব্যবসায়ীর স্ত্রীর কাপড় বদলাইছে দুইবার,বাপ্পারাজে ফোনে ছবি তুলার আগেই ফোনে ছবি কুদরতি ইশারায় উঠিয়া ছিলো,গরীবগুর্বা প্রেগন্যান্ট মহিলার গায়ে আয়রন করা জামদানী,-এইরকম হাজারোটা ভুল!এমনকি ডায়লগ বলার সময় অভিনেতারা ইচ্ছামত টাকার অংক বসাইছেন।কেউ ২০০ মিলিয়ন,কেউ ১০০০ মিলিয়ন ডলার,কেউ তিন বছর বেতন দেয়না-তো কেউ তিনমাস বেতন পায় না,যে হাজার কোটি টাকার মালিক-সে আবার ঘুষই সাধে হাজার কোটি টাকা!সস্তা বেতনের এসআইয়ের বৌয়ের বাথটাবে সেক্সি পোষাকে ঝাপাঝাপি!সস্তা বেতনের দুদক কর্মকর্তার নিত্যনতুন স্যুট আর দামী দামী পিস্তল!
জলিল সাহেব!ভাঁড় হিসেবে থাকিতে চাইলে অত খরচ করার দরকার নাই।টেলিসামাদ এর চাইতে কম খরচে ভাড়াঁমী করিয়া গিয়াছে।
__________________________________________________________
একই সিনেমা নিয়ে ব্লগে প্রকাশিত অন্য ব্লগারদের লেখাগুলো দেখতে পারেন-
*যেমন দেখলাম- মোস্ট ওয়েলকাম -মুনতা
*আমার মুভি দর্শন-'মোস্ট ওয়েলকাম' - ভবের পাগল
*বাংলা মুভি "মোস্ট ওয়েলকাম"- রিভিউ উইথ সাম খিচুড়ি থিংকিং - আহমাদ জাদীদ
*দেখেই ফেললাম “মোশট ওয়েলকাম” -গাধা মানব
*এম এ জলিল অননন্তের সাথে বসে দেখা "মোস্ট ওয়েলকাম" মুভির আনকোরা রিভিউ- সাঈদ তাশনিম
*''মোষ্ট ওয়েলকাম''-বিগ বাজেট ঢালিউড চলচ্চিত্র - মুহাম্মাদ আলতামিশ নাবিল
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:০৯