যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গ রাজ্যের লস এঞ্জেলস শহরে যখন নামলাম খুব সকাল । বিশাল শরীরের কাল কাল মহিলা পুলিশদের দেখে আমি কিছুটা বিস্মিত ।সাথে তাদের প্রশিক্ষিত কুকুর । কুকুর গুলো আমেরিকান মনে হলেও মহিলা পুলিশদের মনে হয়েছে আফ্রিকান । ট্রলি নিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বার বার খেই হারিয়ে ফেল ছিলাম । আহা হলিউড । আমার মুভি প্রেমিক মন কতো বার ছুটে গেছে চোখ ধাঁধানো শহর লস এঞ্জেলসের হলিউডে ।আনন্দ বিনোদন আভিজাত্য আর চলচিত্রের প্রান হলিউড । বাস্তবে এ আমি কি দেখছি ।
না দিনের হলিউড আর রাতের হলিউড অনেক তফাৎ । যাইহোক ট্রেনে উঠেই দেখি বিশ্রী সব মেয়ের দল । হাতের নখে নানা রকম নেইল পলিসে আঁকা থাকলেও মনে হচ্ছে গত এক মাসেও গোসল করেনি । ট্রেনে উঠার আগে বেশ কয়েকটা পথ অতিক্রম করতে হয়েছিল । সেই সাথে নিরব নিস্তব্ধ লস এঞ্জেলসের বাতাসটা যেন আজও গায়ে কাঁটা দেয় । মনে হয়েছিল সত্যি বাস্তবতা থেকে কোন হরর মুভির দৃশ্যে চলে গিয়েছিলাম । বাতাসের শব্দে যেন অন্য রকম সুর । সব কিছুই ঠিক ঠাক আমারই মনে নানা শঙ্কা । নতুন জায়গায় গেলে যা হয় । সব কিছুই নিয়ম মতো করে পথে এগিয়ে যাচ্ছিলাম । বাংলাদেশের স্কুল কলেজের সামনে চানাচুর মুড়ি ওয়ালারা যেমন চানাচুর বিক্রি করে তেমন কয়েকজন কে দেখলাম ।
তাদের আচরন আর প্রকাশ ভঙ্গি খুব একটা ভদ্র ছিল বলে মনে হয় না । খুব মনোযোগ দিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম । হঠাৎ একটা ব্লাক ম্যান এসে বলে গিভ এ ডলার ,আই এম হোমলেস ।
আমি অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, আই এম টুরিস্ট , হাও ক্যান আই হেল্প ইউ .।।।
সে কাঁপতে কাঁপতে খিঁচ খিঁচ করতে করতে বলল ,প্লিজ গিভ মি এ ডলার .।
আমি জায়গা সরে দাঁড়ালাম ।
ট্রেন চলছিল নিজের নিয়মে ।আমি ট্রেনে বিজ্ঞাপন গুলো দেখছিলাম । অনেক জায়গায় লেখা জব দেওয়া হবে । আবার কেউ আত্ম হত্যা করতে চাইলে তাকে মানসিক সহযোগিতা এই সব । হঠাৎ দেখলাম খুবই নোংরা গেট আপের এক দল মেয়ে । আমার সামনে বসা দুটো বৃদ্ধ চোখ দিয়ে ভাল করে তাদের দেখে নিচ্ছে । কেউ কেউ খুব মনোযোগ দিয়ে বই কিংবা ম্যাগাজিন পড়ছে । তবে বিচিত্রতা দেখতে দেখতে মনে একটা ভাল লাগাও তৈরি হচ্ছিল । পৃথিবীর পথে পথে কতো রকমের মানুষ । কতো রকমের বিচিত্রতা । জীবনের ধরন কতো আলাদা । হঠাৎ আবার সেই হোমলেসদের কবলে পড়লাম । একটা পিছন থেকে এসে বলে , ডু ইউ নিড এক্সচেঞ্জ .।।আমি বললাম , সরি ,আই ডোন্ট নিড । প্লীজ গো ..।
সারাটা পথ অনেক ভাল কিছু ও ছিল । সেই সাথে যে বিষয়টা মনে বার বার দাগ কাটছিল তা হল হোমলেসদের কথা। এর মধ্যে আমরা পৌঁছে গেছি হলিউড এলাকায় । আহা । আমার সেই স্বপ্নের হলিউড । টিনসেল টাউনের সেই হলিউড লেখা সাইন ।
কতো রকমের ভিসিটর ।চারিদিকে রমরমা পরিবেশ । সেই সাথে স্ট্রিট গুলো জুড়ে ছিল হোমলেসদের আনা গোনা । দুজন তো প্রায় পা চেপে ধরলো .। গিভ মি এ ডলার অর ইভেন সিঙ্গেল এ স্মাইল .।।।
আমি স্মাইল দিলাম । হায়রে ডলার । চাইলেই কি পাওয়া যায় । রেস্তরাঁয় বসে এক স্প্যানিশের সাথে কথা হল । আসলে হোমলেস অনেকটা ইচ্ছাকৃত । ধারনা করা হয় ৮৪০০০ বিভিন্ন ধরনের হোমলেস আছে । কেউ কেউ জুয়া আর মাদকে হারিয়েছে সব ।কাজে আর মন বসে না । আবার কেউ কেউ তরুন যারা অনেক দূর থেকে এসেছে সিনেমার তারকা হতে । কিন্তু বাড়ি ওয়ালারা সাইন বোর্ডে ঝুলিয়ে দিয়েছে .।নো ডগ .।।নো একটর .।
কুকুর সহ কেউ কিংবা অভিনেতা ভাড়া দেওয়া হয়না । কোথায় যাবে । রাস্তাই তাদের ঠিকানা । আরও যে কতো কারনে । বছর শেষে তাদের পর্যাপ্ত ভাতা আছে । কাজের ক্ষেত্র ও যে কম তা কিন্তু নয় । স্বভাব যাদের মদ ,জুয়া আর দেওলিয়া হওয়া । তাদের দিকে তাকিয়ে আমেরিকা বিচার করা যায়না ।
তবে সব কিছুর পরেও হলিউডের ম্যাক্স মিউজিয়াম , হলিউড সাইন , সমুদ্র ,পাহাড় , চার্চ ,বড় বড় ঐতিহাসিক ব্লিল্ডিং , জমজমাট বিলাস বহুল রেস্তরাঁ সবই ছুঁয়ে গেছে মন । কোন একদিন সময় হলে স্মৃতি চারন হবে হলিউডের যে স্মৃতি গুলো মনে দোলা দিয়ে গেছে তা নিয়ে ।
বিদেশে দুই ধরনের প্রবাসী বাংলাদেশিরা থাকে ।
১ । যারা সারাক্ষন বিদেশের বদনাম করতে থাকে যেন কেউ বিদেশের প্রতি আগ্রহী না হয় । গাল গল্প তারা একলাই করবে। অথচ দিব্বি সিটিজেনশীপ নিয়ে বসে আছে । মনে মনে বলে ডিসগাস্টিং বাংলাদেশিরা যেন তাদের জায়গা দখল না করে । নিজের আগামী প্রজন্মকে আমেরিকান হতেই শেখায় । তাই কেউ আর বাংলাদেশী বলে না । প্রাউড টু বি আমেরিকান বলে নিজেদের জাহির করে ।
২ । আরেক শ্রেণী আছে। কেন যে মানুষ বিদেশে যায় .।।। দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হতে । দেখা যাবে তাকে একবার সুযোগ দেওয়া হোক সে চতুর্থ শ্রেণির নাগরিক হয়ে হলেও যাবে । এক সময়ে এমন ভাব দেখাবে কেন যে গরীব বাংলাদেশে তাদের জন্ম হয়েছিল ।বাংলাদেশে মানুষ ছাড়া আর কি আছে .।।।দূর ওই দেশে ফিরে কে যায় .।।।এই হল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মনোবৃত্তি ।
সবাই এক হয়না । এর মধ্যে অনেক ভাল ভাল বাংলাদেশী আছে । যারা নিজের দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । নিজেদের মেধা দিয়ে প্রমান করছে বাংলাদেশকে ।
আমেরিকায় যতোই সমস্যাই থাকুক । আমেরিকার সব দিক থেকে আজও এগিয়ে । সম্পদ কিংবা কুটবুদ্ধি সবই আছে ।
নিজের দেশের এবং নিজের ব্যক্তিগত মান উন্নয়নের জন্য সব মানুষের পৃথিবী দেখা উচিত ।
অনেক দিক থেকে আমরা যেমন ভাল নেই । আবার অনেক দিক থেকে আমরা অনেক ভাল আছি ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৪৮