ভাষা মহান সৃষ্টিকর্তার অমূল্য দান, জাদুকরী এক চাবি, যা দিয়ে সহজেই খুলে যায় একটি জাতির হাজার বছর ধরে সঞ্চিত ইতিহাস-ঐতিহ্য, ওষুধপত্র, আচার-আচরণ ও শিল্প- সাহিত্য-সংস্কৃতির মতো ‘বিবিধ রতনের’ অনন্য ভান্ডার। আমরা সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, উল্লাস তথা সমস্ত আবেগ-অনুভূতি ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করি। ভাষা ও মানুষ একে অপরের সঙ্গে নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। দক্ষিণ এশিয়ার বঙ্গ অঞ্চলের স্থানীয় ভাষা বাংলা, এই অঞ্চলটি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে গঠিত। এছাড়াও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, অসম রাজ্যের বরাক উপত্যকা এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জেও বাংলা ভাষাতে কথা বলা হয়। এই অঞ্চলের প্রায় বাইশ কোটি স্থানীয় মানুষের ও পৃথিবীর মোট ৩০ কোটি মানুষের ভাষা হওয়ায় ২০১৪ সালে এই ভাষা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষার তালিকায় ৭ম স্থান অধিকার করেছে। এ ভাষাভাষী ২১ কোটি ১০ লাখ মানুষের অধিকাংশই বাংলাদেশি। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা বাংলায় কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে বাংলাভাষী মানুষ। বাংলা আমাদের অহঙ্কার-বাংলা আমাদের গর্ব। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে বাংলাভাষী মানুষ। এই ভাষার লিপিকে বলা হয় বাংলা লিপি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে ব্যবহার, উচ্চারণ ও ধ্বনিতত্ত্বের সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে, বাংলা ও তার বিভিন্ন উপভাষা বাংলাদেশের প্রধান ভাষা এবং ভারতে দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। এই ভাষা বাংলার নবজাগরণের ফলে সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নির্মাণ ও বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে এক সূত্রে গ্রথিত করেছে, শুধু তাই নয়, এই ভাষা বাঙালি জাতীয়তাবাদ গঠনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তা (১১টি) ছাড়া আমরা সবাই বাংলায় কথা বলি (৯৯ শতাংশ)। ১৯১৩ সনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যে নোবেল বিজয় বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্যের মর্যাদা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তবে মুসলিম ও ইংরেজ শাসনামলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি ও ব্যাপ্তি বাড়লেও কখনও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়নি। অথচ ভাষা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না পেলে জাতীয় ভাষার উন্নতি ও মর্যাদা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাই ১৯৪৭ সনে ইংরেজ শাসন অবসানের পর বাংলাদেশের (তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান) অধিবাসীরা বাংলা ভাষা নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখলেন। ১৯৫১-৫২ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানে সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছিল। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারী সালাম, বরকত, জব্বার, শফিক, রফিক, শফিউদ্দীনসহ অনেকে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলা ও লেখাপড়ার অধিকারের দাবীতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৫৬ সনে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় তত্কালীন সরকার। এই প্রথম বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। মাতৃভাষার জন্য তাঁদের বলিদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বহু সংগ্রামের পর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা প্রদান করেছে। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৯৩টি দেশে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ ছিল বাঙালি হিসেবে জাতির বড় অর্জন। বাঙালির শহিদ দিবস এখন বিশ্বজুড়ে নিজস্ব ভাষা ও স্বকীয়তা রক্ষার চেতনার অবিরাম উৎস। একুশের চেতনা আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। আমরা বাংলা ভাষাকে শুধু ভালোই বাসি না, এই ভাষায় আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি, বিদ্যার অনুশীলন করি এবং এই ভাষার সাহায্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করি। পৃথিবীর ভাষাগুলোর মধ্যে এটি একটি বহুল প্রচলিত ভাষা। বাংলা ভাষার এমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের কুমিল্লার কৃতী সন্তান ও কানাডা প্রবাসী প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব রফিকুল ইসলাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
বাংলা ভাষা কবে থেকে শুরু হয়েছে তার নির্ধারিত সন-তারিখ নেই। ভাষা উত্পত্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো দিন তারিখ থাকেও না। দিন-ক্ষণ ঠিক করে কোনো ভাষার জন্মও হয় না। দীর্ঘকালব্যাপী গ্রহণ-বর্জন ও সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে ভাষার জন্ম হয়। হঠাত্ করেই যেমন কোনো ভাষার উদ্ভব হয়নি। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। ভাষা গবেষকদের মতে স্থানীয় ভাষার সাথে বহিরাগত আর্যদের ভাষার সংমিশ্রণে প্রাকৃত-অপভ্রংশ রূপ ধারণ করে দীর্ঘদিন যাবত্ অনেক পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার উত্পত্তি হয়েছে। বাংলা ভাষা উত্পত্তির সঠিক কোনো ইতিহাস না থাকলেও 'চর্যাপদ'কে বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন বলা হয়। অধিকাংশ চর্যাপদ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে রচিত এবং এগুলো বাংলাভাষার নিজস্ব সম্পদ। তাই বলা যায় চর্যাপদই বাংলা ভাষার শৈশবকাল।তবে চর্যাপদের ভাষার সাথে বাংলা ভাষার হুবহু মিল পাওয়া যায় না। এর ভাষা অস্পষ্ট।
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের প্রধান কথ্য উপভাষা। 'বাংলা ভাষার উপভাষাসমূহ' ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষা দলের অংশ। বাংলা ভাষায় অঞ্চলভেদে ভিন্ন উচ্চারণ হয়ে থাকে। যদিও এই ভাষাসমূহ বাংলা প্রতিবেশী উপভাষার সঙ্গে পারস্পরিকভাবে বোধগম্য। যেমন পূর্ববঙ্গের ভাষায় বলা হয়, 'আমি অহন ভাত খামু না' যা পশ্চিমবঙ্গে বলা হয়, 'আমি এখন ভাত খাব না।' ভাষাবিদ সুকুমার সেন বাংলা উপভাষার শ্রেণীবিন্যাস করেছেন। সুকুমার সেন ছিলেন একজন ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্য বিশারদ। বৈদিক ও ধ্রুপদি সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, বাংলা, আবেস্তা ও প্রাচীন পারসিক ভাষায় তাঁর বিশেষ বুৎপত্তি ছিল। তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব ও পুরাণতত্ত্ব আলোচনাতেও তিনি তাঁর বৈদগ্ধের পরিচয় রেখেছিলেন। ভাষাতত্ত্ব ও পুরাণ ছাড়া রবীন্দ্রসাহিত্যেও সুকুমার সেনের বিশেষ প্রজ্ঞা ছিল। সুকুমার সেন মিথ-আশ্রিত ভাষাতত্ত্ব বা পুরাণচর্চার পরিবর্তে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি অবলম্বন করতেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলা ভাষা উচ্চারণ ভিত্তিতে পাঁচ প্রকার উপভাষার শ্রেনি বিন্যাশ করেন যথাঃ
১। রাঢ়ী উপভাষাঃ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, বাঁকুড়া (পূর্ব), হুগলী, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই উপভাষার প্রচলন লক্ষ করা যায়। এই উপভাষাকে ভিত্তি করে প্রমিত বাংলা গঠন করা হয়েছে।
২। বঙ্গালী উপভাষাঃ এটি অধুনা বাংলাদেশের প্রধান উপভাষা। ঢাকা বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগ, খুলনা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ, বৃহত্তর কুমিল্লা-নোয়াখালী এবং ত্রিপুরার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আছে এই উপভাষা। যেমনঃ বরিশালী (বরিশাল অঞ্চল), নোয়াখালীয়া (নোয়াখালী অঞ্চল), রংপুরী (রংপুর অঞ্চল), খুলনাইয়া (খুলনা অঞ্চল), ময়মনসিংহী (ময়মনসিংহ অঞ্চল), সিলেটি (সিলেট অঞ্চল) এবং চাঁটগাঁইয়া (চট্টগ্রাম অঞ্চল) ভাষাভাষী সংখ্যা বিবেচনায় এই উপভাষাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত।
৩। বরেন্দ্রী উপভাষাঃ উত্তরবঙ্গের মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের লোকমুখের ভাষা হল এটি।
৪। ঝাড়খণ্ডী উপভাষাঃ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁকুড়া ও সিংভূম অঞ্চলে এই উপভাষা প্রচলিত।
৫। রাজবংশী উপভাষাঃ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার; আসামের গোয়ালপাড়া, ধুবড়ী অঞ্চল ও বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলে এটি প্রচলিত। বরেন্দ্রী ও বঙ্গালী উপভাষার মিশ্রণে এই ভাষা গড়ে উঠেছে।
কোনো ভাষাই কেবল আবেগ আর ভালোবাসার উপর টিকে থাকে না। আবার পুরোপুরি শক্তিমত্তার ওপরও তার অস্তিত্ব নির্ভরশীল নয়। ভাষা বহতা নদীর মতো চঞ্চল। স্থিরতা এর স্বভাব বিরুদ্ধ। পরিবর্তন পরিবর্ধন ভাষার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে কালের গর্ভে কত ভাষা হারিয়ে গেছে তার কোনো ইয়ত্তা নাই, আবার নতুন কত ভাষার জন্ম হয়েছে তারও কোনো হদিস নেই। বিশ্ববিজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের ভাষা মেসোডোনিয়ায় আজ ক’জন বলেন? পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্মপ্রণেতার একজন যীশু যে-ভাষায় কথা বলতেন সেই ভূমধ্যসাগরীয় আরামাইক তখন ওই অঞ্চলের প্রধান ভাষাগুলোর একটি–আজ প্রায় বিলুপ্ত। কিংবা আরেক দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী, বিশ্ববিজয়ী চেঙ্গিস খানের ভাষায় একেবারেই সামান্য কিছু লোক কথা বলেন। হয়তো অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ভাষাবিদদের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর মোট ভাষার সংখ্যা প্রায় ৮০০০টি। তবে ‘এথনোলগ- দ্য ল্যাংগুয়েজেস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের ভাষা সংক্রান্ত একটি প্রকাশনার ১৯৯৯ সালের জরিপ অনুযায়ী পৃথিবীর ভাষার সংখ্যা প্রায় ৬০০০। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও কমছে ভাষার সংখ্যা। কত ভাষা যে এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে তার কোনো লেখাজোকা নেই। ভাষা প্রাণহীন কোনো কিছু নয়। বরং ভাষা অত্যন্ত প্রাণবন্ত-সর্বদা সচল। আর তাই ভাষারও মৃত্যু হয়। কোনো কোনো ভাষা চিরতরে হারিয়ে যায়। ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে প্রায় ৩ হাজারের মতো ভাষা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ১০০ বছরে ৩ হাজার ভাষার বিলুপ্তি মানেই বর্তমান সময়ে প্রতি দুই সপ্তাহে অবলুপ্ত হতে চলেছে একটি করে ভাষা। বর্তমান পৃথিবীর ভাষাগত পরিবর্তন ও ভাষার বিলুপ্তি শুরু হয়েছিল পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে। ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদের অভ্যুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার পরিবর্তন ও বিলুপ্তি ধারা সমান গতিতে চলতে থাকে। ইংরেজি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, ওলন্দাজ ইত্যাদি বড় বড় ভাষার তাণ্ডবে সে সময় থেকে হারিয়ে যেতে থাকে অনেক ছোট ছোট উপনিবেশের ভাষা। এ ছাড়া দুর্ভিক্ষ, খরা, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি কারণে ছোটখাটো অনেক জনগোষ্ঠী রাতারাতি পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যায়। ফলে বিলুপ্ত হয়ে যায় তাঁদের ভাষাও। অর্থনৈতিক কারণে এবং সাংস্কৃতিক একাকীত্বকরণের ফলে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলে গিয়ে ঘর বাঁধে। এতে মানুষ নতুন লোকালয়ের ভাষাকে গ্রহণ করে নিজের ভাষাকে ভুলে যায়। ভাষায় নতুন শব্দ আসবে, ভাষার পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভাষার জন্য যা ক্ষতিকর তা হলো, একই সঙ্গে দুটি বা তার চেয়ে বেশি ভাষার মিশ্রণে কথা বলা বা লেখা। প্রমিত বাংলার সঙ্গে আঞ্চলিক, ইংরেজির সঙ্গে হিন্দি, বাংলালিপির সঙ্গে রোমানলিপি। এভাবে মিশ্রণের ফলে যে জগাখিচুড়ি ভাষা ব্যবহার হচ্ছে তা দুঃখজনক।’ কোনো জাতি যদি তার মাতৃভাষা হারিয়ে ফেলে, তাহলে তার পূর্বপুরুষের অর্জিত অমূল্য সেই ভান্ডারের দ্বার শুধু তার জন্যই নয়, পুরো মানবজাতির জন্য চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়। আশার কথা ত্রিশ কোটির অধিক লোক আজকে বাংলা ভাষায় কথা বলে। এই ত্রিশ কোটি লোকের ভাষা বাংলা টিকবে না–এ কথা বলা যায় না। আর ইতোমধ্যে এই ভাষার মধ্যে যা তৈরি হয়ে আছে, যা কিছু এই ভাষার ভাণ্ডারে আছে তা এত তাড়াতাড়ি বিলুপ্ত হবে বলে মনে হয় না। কারণ ভাষাটা কোনো ভৌগলিক সীমার মধ্যে থাকে না, থাকে মানুষের মধ্যে। মানুষ যদি থাকে তাহলে তার ভাষাও থাকবে। নিজস্ব মাতৃভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জীবিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব এ আমাদের প্রত্যাশা।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু