somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গৃহ ব্যবস্থাপনার সব দায়িত্ব পালন করেও পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি আর যুগ যুগ ধরে প্রচলিত সমাজব্যবস্থার কারণে আজও নারী ঘরের কাজের স্বীকৃতি পায়নি। আর এই স্বীকৃতি না থাকায় নারীরা অধিকার বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি নির্যাতিত হচ্ছে। গৃহিণীরা সারাদিন কী করেন? প্রশ্ন উঠতেই পারে৷ উত্তরে যদি বলা হয়, তাঁরা কেবল টেলিভিশন সিরিয়াল দেখে সময় কাটান, তাহলে একে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ‘রটনা' ছাড়া আর কী বলা যায়? তবে‘মনে না নিলেও, মেনে নেয়া' – ঠিক কত ক্ষেত্রে যে নারীরা এভাবে ‘মেনে নেন' তা বলা সত্যি দুরূহ৷ ‘আজীবন হেঁসেল ঠেলেও কোনো মূল্য পাওয়া গেলো না' – এই ভাবনা প্রতিনিয়ত তাড়িত করে তাঁদের৷ কারণ অমূল্যায়িত সেবা খাতে পুরুষদের তুলনায় নারী অন্তত ৪০ভাগ সময় বেশি ব্যয় করেন৷ কিন্তু তাঁদের এই কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই৷ সাধারণ যে কোনো কাজের একটা পারিশ্রমিক থাকে৷ কিন্তু গৃহের কাজের কোনো মূল্য নির্ধারণ করা নেই, তাই এটাকে মূল্যায়ন করা হয় না – বলা হয় এটা নিজের গৃহের কাজ, ফলে এটাকে মূল্য দেয়া হয় না৷বাংলাদেশে কোনো পুরুষকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার স্ত্রী কী করেন আর তাঁর জবাব যদি হয়, ‘কিছু করেন না'৷ তাহলে কী বুঝবেন? সাধারণত এর মানে, তিনি ঘর-গেরস্থালির কাজ করেন৷ কিন্তু এ দেশে ঘর-গেরস্থালির কাজকে কাজ বলে ধরা হয় না! বাসা-বাড়িতে কাজের সহযোগীতায় যে গৃহকর্মীরা থাকেন, তাঁরা কাজের জন্য নির্দিষ্ট অংকের মজুরি পান৷ কিন্তু একজন গৃহিণী কোনো মজুরি ছাড়াই সারাদিন কাজ করছেন এবং শুনছেন যে ‘তিনি কিছু করেন না'৷ গৃহিণীদের কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই। তবে ধারণা পাল্টাচ্ছে তাই নারীর গৃহস্থালির কাজকে শ্রমের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীই পারিবারিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু সেটিকে কাজ এর মর্যদা দেওয়া হচ্ছে না। চাকরিজীবী নারীরা সকালে অফিসের যাওয়ার আগে সংসারের কাজ করেন৷ তারপর অফিস করে বাসায় এসে আবারো নানা কাজ থাকে৷ গৃহিণী নারীর সংসারের কাজে সামান্য ভুল-ত্রুটিতেই শুনতে হয় ‘কী এমন করো'! এই যে রান্না-বান্না, সন্তান লালন-পালনসহ পরিবারের যত কাজ, এর সবই অবমূল্যায়িত খাত৷একাধক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বলছে, একজন নারী পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করে, অথচ তাঁদের স্বীকৃতি কম৷ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বলছে, একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২ দশমিক ১টি কাজ করেন৷ পুরুষদের ক্ষেত্রে এ কাজের গড় সংখ্যা ২ দশমিক ৭৷ এক সপ্তাহে একজন চিকিৎসক ৫৬ ঘণ্টা কাজ করলে মাসে পান ১ লাখ ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার৷ সেই অনুযায়ী গৃহিণীদের সপ্তাহে ৯৪ ঘণ্টা কাজের হিসেবে বছরে কত বেতন হওয়া উচিত? স্যালারি ডট কম বলছে, গৃহিণীরা ৯টা থেকে ৫টা কাজের বাইরে সপ্তাহে যে অতিরিক্ত ৫৮ ঘণ্টা খাটেন, সেটা হিসেব করলে তাদের বাড়তি বেতন হওয়া উচিত বছরে ৬৭,৪৩৬ মার্কিন ডলার৷জাতীয় আয়ে নারীর যে পরিমাণ কাজের স্বীকৃতি আছে, তার চেয়ে ২ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৯ গুণ কাজের স্বীকৃতি নেই৷বাংলাদেশের নারীদের বার্ষিক মজুরিবিহীন গৃহকাজের অর্থনৈতিক মূল্য এক লাখ ১১ হাজার ৫৯১ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা৷ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে৷


ঘরের কাজকে নারীর স্বাভাবিক দায়িত্ব এটিই আমাদের সমাজের সাধারণ ধারণা। তাই এ কাজে নারীর কোনো স্বীকৃতি যেমন নেই, তেমনই আর্থিক কোনো মূল্যায়নও নেই। তাই নারীরা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা তাদের কাজের সম্মানও পাচ্ছেন না। নারী শুধু গৃহে কাজ করেন না, অনেক উৎপাদনশীল কাজও তাঁরা করেন৷ কিন্তু সবগুলো কাজকেই ধরা হয় সংসারের কাজ৷ সমাজও ঠিক সেইভাবেই দেখে৷ সমাজ মনে করে, নারী সংসার দেখেন, সন্তান সামলান – এটাই তাঁর কাজ৷ এর বাইরেও গ্রামের নারীরা কিন্তু গবাদি পশু দেখেন, বীজ সংরক্ষণ করেন – এমন হাজারো কাজ করেন তাঁরা৷ যেহেতু এ সব কাজেরও মূল্য নির্ধারণ করা নেই, তাই সমাজও মনে করে যে, এগুলো মূল্যহীন কাজ৷ এ সবের ফলে সমাজ তাঁদের কাজকে মর্যাদার চোখে দেখে না৷‘পরিবার থেকে যদি বুঝতো নারীর মূল্য কত, তাহলে তারা সম্মান দেখাতো’ বাংলাদেশে নারীরা বাইরে কাজ করে যে মূল্য পান আর গৃহে কাজ করে যে নারীরা মূল্য পান না তা তুলনা করে ঘরের কাজের জন্য বাইরের কাজের সম পরিমাণ মূল্য দেয়া হলে তিনগুণ মূল্য পেতেন নারীরা। মনে রাখতে হবে ‘যারা গৃহের রানি, তারাই হচ্ছে গৃহিণী'। ‘‘এটাই চিরকালের সত্য৷ মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যা ছাড়া দুনিয়া তাই অচল৷'' নারীর কাজের যথাযথ মূল্যায়ন হলে, স্বীকৃতি দিলে নির্যাতন কমবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন অনেক পরিবারেই বিশেষ করে যেখানে নারীরা বাইরে কর্মরত, সেখানে অনেক পুরুষ ঘরের কাজে অংশগ্রহণ করেন। যদিও গৃহিণীকে তার প্রাপ্য মূল্য দেওয়া কখনই সম্ভব নয়৷ তবে তাঁকে যা দেয়া যায় তা হচ্ছে সম্মান, শুধুই ‘সম্মান'৷সুতরাং তাদের কাজের মুল্যায়ন করতে হবে। ভুলে গেলে চলবেনা যে, ‘‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে৷''

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নরু
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগ কারা দেয় ?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির পর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা ডক্টর ইউনুসকে দেশের ক্ষমতা গ্রহন করার আহবান সেই শহীদ মিনার থেকেই জানিয়েছিল। ডক্টর ইউনুস প্রথমে অরাজি হলেও পরে ছাত্রদের হাজারো অনুরোধের মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমুখী একটি চাওয়া

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২০


মানুষের মুখে হাসি ফুটুক,
আঁধার মুছে আলোর ছোঁয়া,
ক্লান্তিহীন পথ চলুক,
নতুন স্বপ্ন আনবে জোড়া।

দিনবদলের শপথ নিয়ে,
কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করে যাই,
নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে
একটি স্রোতে মিলিয়ে যাই।

সবার তরে সমান বিচার,
ধনীর দুঃখীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার একমাত্র অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ

লিখেছেন জ্যাকেল , ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

২৩শে জুন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব জনাব সিরাজ উদ দৌলা ব্রিটিশদের কাছ হেরে যান কেবলমাত্র মীরজাফর, জগৎশেট, রাজভল্লভ, ঘষেটিদের কারণে। বাংলার ইতিহাসে এই দিনটি একটি অভিশপ্ত দিন। এর পর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×