ক্যাম্পাসের দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল। মাসে মাসে বাপের পাঠানো টাকা, হলের খাবার আর অল্প-স্বল্প পড়াশুনা; আমার অবস্থা এক কথায় বোঝানোর জন্য এসবই যথেষ্ট ছিল। সবই ঠিকই ছিল। সমস্যার শুরু হলো যখন আমি আমার ক্লাসমেট রিয়া নামের মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলাম। প্রেমের কথা বলার সাহস আমার ছিল না। মনের কথা বলতে না পেরে প্রচন্ড হতাশ হয়ে গেলাম। জীবন সম্পর্কে বিতৃষ্ণা চলে আসলো। কিছু ভালো লাগে না। গল্পের বই পড়তে ভালো লাগে না, গান শুনতে ভাল লাগে না, পিসিতে গেম খেলতে ভাল লাগে না, পড়াশুনা যা করতাম তাও করতে ভালো লাগে না। পুরাই বাজে অবস্থা।
ওদিকে আমার পছন্দের মেয়েটা দেখি খুব আনন্দে দিন কাটাচ্ছে। সহ্য করতে পারলাম না। আমি প্রেমে পড়ে কষ্টে থাকবো আর ও কেন খুশিতে থাকবে? মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চাপলো। একদিন রিয়ার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ফেললাম। আমি অবশ্য হ্যাকিং এর হ ও জানি না। তবে একথা সবাইকে মানতেই হবে, কারও হোম টাউন যদি খুলনা আর ছোট বেলার প্রিয় খেলা যদি লুডু হয় আর সে যদি তার ইমেইল অ্যাকাউন্টের সিক্রেট কোয়েশ্চান এগুলো দিয়ে রাখে তাহলে তার আইডি হ্যাক হওয়া বাধ্যতামূলক। হ্যাক করার পর অবশ্য কেমন যেন মায়া মায়া লাগল। কোন ক্ষতি করতে ইচ্ছা করল না। নতুন পাসওয়ার্ড রিয়ার এক বান্ধবীকে মেসেজ করে বের হয়ে আসলাম। পাসওয়ার্ড পেয়ে সে অতি স্বত্বর তার আকাউন্টের মালিকানা উদ্ধার করে নিল।
এদিকে আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল। আগে হতাশায় ভুগতাম, এখন অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করলাম। সারাক্ষণ মনে হয় কাজটা করা ঠিক হয় নি। দুই-তিন দিন প্রচন্ড হতাশা আর অপরাধ বোধের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিলাম। তারপর ঠিক করলাম না এভাবে আর থাকা সম্ভব না। কিছু একটা করা দরকার।
রিয়াকে ফোন করে বললাম ‘একটা কথা বলবো, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নাও।’
ও বলল ‘নিলাম’।
কিন্তু আমার মধ্যে আবার ভয় জেঁকে বসলো। বললাম ‘আমিও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নেই। তারপরে বলবো’।
তারপর কয়েকদিন ধরে মানসিক প্রস্তুতি নিলাম। একদিন ক্যাম্পাসে ওকে একা পেয়ে বলে দিলাম-দেখো রিয়া, মাইর-টাইর দিও না। তোমার আইডি যে কালপ্রিট হ্যাক করছিল, সে আমি। রিয়া একেবারে চোখ গোল্লা গোল্লা করে আমাকে খেয়ে ফেলবে এমন ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল-কেন হ্যাক করছ?
আমি একটু ভাব নিয়ে নিলাম, হ্যাকাররা কেন হ্যাক করে? কারণ তারা হ্যাকার।
আমি আসলে ছাগল টাইপের ছেলে। নাইলে আমি তো সত্যি কথা বলতে পারতাম, "রিয়া আমি ভালবেসে তোমার আইডি হ্যাক করেছি। এটা আমার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।" দুই সপ্তাহ আফসোস করলাম। ইশ! সত্যিটা কেন বললাম না? তারপরে আবার সিদ্ধান্ত নিলাম: জোভি হোগা, এবার ভালোবাসার কথা বলেই দিব।
ক্যাম্পাসে এক কোনায় রিকে ডেকে নিয়ে বললাম-আরেকটা কথা বলব। মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নাও।
আবার কি অকাজ করছ?
নিজু কারণ ছাড়া কোন অকাজ করে না। এখন কিছু কথা বলব।
তাহলে বলেন নিজু সাহেব। শুনে ধন্য হই।
ইয়ে মানে, রিয়া? তোমাকে আমি অনেকদিন ধরে ভালবাসি। কথাটা না বলে শান্তি পাচ্ছি না।
জানি তো।
জানো মানে!
আমি কি কচি খুকি নাকি? ক্লাসে সারাক্ষণ যে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো, কি ভাবছ জানি না?? আমার বাসার কাছে গিয়ে যে ঘুর ঘুর কর আমি লক্ষ্য করি না??
তাহলে এখন কি করবো?
কি করবা মানে? আমার আইডি হ্যাক করছো আবার আমার পিছনে ঘুর ঘুর করো? দূরে যেয়ে মরো।
ব্যর্থ মনোরথে পিছন ফিরে হাঁটা শুরু করলাম। উদ্দেশ্য দূরে যেয়ে মরবো।
পিছন থেকে রিয়া ডাক দিলো-রাতে ফোন খোলা রাখবা, ফোন দিব।
.....(সমাপ্ত)
বি. দ্রঃ
গল্পের মূল লেখক আমার বন্ধু(অতিথি নিক)। আমি কপি করেছি সাথে কিঞ্চিৎ এডিট করে গল্পের নায়ক হয়েছি।
মূল লেখাঃ http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46473
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:৪৩