somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা মনপুরা

০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার মিশন উপকূল সম্পন্ন করে আসাটা খুব সহজ কোন কাজ ছিলোনা। মেঘনার উত্তাল ঢেউ, বঙ্গোপসাগরে ডিঙ্গি দিয়ে পার হওয়া, রান্না বান্না করে নিজেকে তিন বেলা খাবার দেয়া, জলা জংগল পরিষ্কার করে তাবু বিছানোর জায়গা বের কর, ক্যানেল পার হওয়ার জন্য নিজেরাই সাঁকো বানানো সব কিছুই সহজ, কঠিন কাজটা হলো চরের মানুষকে কনভিন্স করা। প্রতিটা রাতই কিছু না কিছু শিখেছি, কোন না কোন ভয়ে পার করেছি। হয় শেয়ালের ভয়ে, সাপের ভয়ে নয়তো মানুষের!
এর সপ্তমরাত ছিলো সবচেয়ে ভয়ংকর। আল্লাহকে শুধু ডাকছি কখন ভোর হবে, কখন কিভাবে আমি এই চর থেকে বের হবো। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের মনপুরার কথা মনে পড়ছিলো বারবার। সেখানে একটা সোনাই ছিলো। এখানে সবাই সেই ল্যান্ডওনার এর ছেলে সোনাই! প্রত্যেকেই কোন না কোন আসামী!
নতুন জায়গায় গেলে আমি দুইটা কাজ করি, প্রথমে চায়ের দোকানে ঢুকি, পরে মসজিদে। তাহলে এলাকার মানুষ সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায়। নতুন চরে কোন চায়ের দোকান নেই, মসজিদ আছে। সেখানে ইমাম দাঁড়িয়ে থাকে মুসল্লির আশায়। আমাদের দেখে আমাদের ২ জন ডেকে জামাত করে। জামাতের পর শুনলাম এই মসজিদে ইমাম বেশিদিন থাকেনা। এলাকার সবাই এই জায়গায় পলিয়ে আছে। এদের সবাই নাম করা ডাকাত, সাগরের মাছের বোটে ডাকাতি করেই জীবিকা চালায়। রেকি করে কিছুই বুঝলাম না।কোন আইডিয়া ছাড়াই রাত যাপনের সিদ্ধান্ত নিলাম।
রাতে আজকে ফিস্ট। একটু খানাপিনা হবে৷ ভাত, রাজহাস খেয়ে পায়েস বানালাম। খেজুরের রস, মহিষের দুধ আর বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া দুই মুঠ পোলাও- র চাল দিয়ে। এমন সময় খবর আসলো গ্রামের সবাই একত্র হয়েছে আমাদের মাইর দিতে! কিছু মানুষের জমায়েতও দেখা যাচ্ছে! আমরা এখনে ঢুকলাম কয়েক ঘন্টা হলো। এর মাঝে ক্যাম্পসাইট থেকে বাইরেও যাইনি, কোথাও কোন অঘটন ঘটবে তার সুযোগও নেই। তবুও ঝামেলাটা কই পাকালাম বুঝার চেষ্টা করছি। মোবাইলে নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছেনা, কোথাও ফোন দিবো সেই উপায় নেই। সাথে সেলফ ডিফেন্সের জন্য একটা ছুরি আছে তাও রাজহাস কাটার পর সালাদও কাটা যাচ্ছিলোনা। পরে আমাদের হোস্ট সাহাবুদ্দিন চাচার এর থেকে শুনলাম ঘটনা, লোকজন ভাবছে আমরা মার্ডার করে চরে চরে ঘুরে বেড়াচ্ছি! পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য। আমরা বলেছিলাম আমরা ঘুরতে আসছি। চরে দেখার মতো কিছুই নাই। আছে বলতে স্বপ্নের মতো সুন্দর সুন্দর খাল আর একটা ম্যানগ্রোভ আছে। কিছু হরিনও বেঁচে আছে তাদের শিকার করে খাওাদাওার পর। দেখার মত কিছুই নেই! এই চরে কখনো কোন "ট্যুরিস্ট" আসেনাই। আমরা যাবো কি দেখতে? তার মানে তারা সমীকরণ মিলালো যে আমরা তাদের মতোই পলাতক।



মাসুম ভাই এর দিকে তাকালাম, এই দূর্গম চরে কোন সার্ভিস বোট নাই। পরিবার ১০টা। মানুষ ৭০ জন! যেকোন সময় ঘিরে ফেলতে পারে আমাদের। নেট যেহেতু নাই লোকেশন শেয়ার করতে পারছিনা। মাথার কোন কিছু কাজ করছিলোনা তখন।
সাহাবুদ্দিন চাচা অভয় দিয়ে বললেন "আমি থাকতে কেউ কিছু করবোনা। আপনারা তাবুত গিয়া ঘুমান।" একটু অভয় নিয়ে ঘুমাইতে গেলাম, তবে কাল সকালেই চর ছেড়ে দিচ্ছি এইটা আমরা দুজনই নিশ্চিত।

সেই দ্বীপের একটা ঘটনা বলি,
আমাদের লোকাল হোস্ট সাহাবুদ্দিন কাকা, যার বাসায় উঠি সেই লোক রাতে আমাদের তিনজন ডাকে। বলে, তার নামে মিথ্যা মামলা দেয়ার গল্প। গল্পটা আমাদের বলার কারন তার ধারনা আমরা শহরের লোক, আমরা হয়তো তাদের এই মিত্থা মামলার গল্প ইন্টারনেটে ছেড়ে দিতে পারবো। আমরা অবশ্যই পারবো, কথাও দিলাম দিবো, তবে সেইটা ফেসবুকে! ঘটনাটা অনেকটা এমন,

চরে একটা মেয়ে থাকে। বাকশক্তিহীন! সেই মেয়ে তার জামাই (সাহাবুদ্দিন চাচার মেয়ের হাসব্যান্ড) কে ধর্ষনের অভিযোগ দেয়, তারপর চরের সবাই তাদের বিয়ে পরিয়ে দেয়। সেই বিয়েকে ছাড়াছাড়িও করায় আমাদের সাহাবুদ্দিন চাচা। তার মতে তার মেয়ের জামাই এই কাজ করেনাই। কিন্তু ঘটনা ত ঘটেছেই কিছু। সেইটার ব্যখাও দিলেন কাকা। -"এই মাগীর লগে জিন আছে। হেতে জিনের লগে মেলামেশা করি মাইন্সের নাম ধরি দেয়। আমার মাইয়ার জামাই ভালা, হেতে এমন কাম করেনাই। এই ছিনালে আমার সম্পদের লোভে হেতেরে ফাসাইসে। আমারেও ফাসাইসে, হেতের কাপড় নষ্ট করছে জিনে। জিনের লগে মেলামেশা করি আমার নাম দিছে। হেতে কাপড় নষ্ট কইরা গেরামের সবার নাম দেয়। যারেই সামনে পায় হেরেরেই দেহায়। আপনি সামনে গেলে আপনের দিকেও আঙ্গুল দিয়া দেহাইবো। মাগীর মাথা ঠিক নাই।"

দূর্গম চরে বাকশক্তিহীন একটা নারীকে ক্রমাগত ধর্ষন করে যাচ্ছে গ্রামের মানুষ, কেউ করছে বিকৃত যৌন চাহিদার জন্য, কেউ ক্ষমতার প্রদর্শন করতে৷ কিন্তু নাম হচ্ছে বেচারা জ্বীন ভুতের৷ অসহায় নারীর মাথায় কি বিচ্ছিরি ট্রমা বেড়ে উঠছে ভাবতেই গা ঠান্ডা হয়ে আসে...

সম্ভবত সেই চরে সবাই কোন না কোন মামলায় জড়িত৷ আমি জানিনা, এতোটা জানার চেষ্টাও করিনি। যেই চরে নিজেরাই মার্ডার কেইস এর পলাতক আসামী, সেখানে কথা না বাড়ানোই ভালো!

(মসজিদের ইমামকে ভুল নাম্বার দিয়ে এসেছিলাম তাৎক্ষণিক বিপদ এড়াতে। তার নাম্বারটা এনেছিলাম। এসে এক সাংবাদিক বন্ধুর মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি মেয়েটাকে বাঁচানো যায় কিনা, ইমাম ফোন ধরলেন। তবে সে সব কিছুই অস্বীকার করে এবং কোন কথা বলতে চায় নি।)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:০২
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×