somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচেনা দিগন্ত (পর্ব-৪)

১৮ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নায়লা ধূলিময় বাতাসে চোখ সরু করে তাকাল। বিশাল এক মরুভূমির মাঝখানে, যেখানে শুধু বালির ঢেউ আর নীরবতা থাকার কথা, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল মন্দির, যার গায়ে প্রাচীন চিত্রলিপির ছাপ। তার চারপাশে কয়েকটি বিশালাকার পিরামিড, যেন হাজার বছরের নিঃস্তব্ধ পাহারাদার।

"আলিজা, এই স্থাপনাগুলো কেমন দেখাচ্ছে?" নায়লা দ্রুততার সাথে নিজের যোগাযোগ যন্ত্রে বলল।

"এসব কাঠামো কয়েক মিলেনিয়া পুরনো বলে মনে হচ্ছে," আলিজার যান্ত্রিক কণ্ঠ বলল, "কিন্তু আশেপাশে কারিগরি অবকাঠামোর চিহ্ন নেই। এটি যেন এক প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন।"

নায়লার গা শিরশির করে উঠল।

এই মন্দির কোথা থেকে এল? কে তৈরি করেছিল?

সে এলিজাকে এগিয়ে এসে সবসময় তার কাছাকাছি থাকার নির্দেশ দিল। মন্দিরের প্রবেশদ্বারটি এত বিশাল যে মনে হচ্ছিল দৈত্যাকার কোনো কিছু এটি ব্যবহার করত। বিশাল পাথরের স্তম্ভগুলোতে খোদাই করা প্রতিচিত্রগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠছিল—একদল প্রাণীকে দেখা যাচ্ছিল যারা আকাশের দিকে হাত তুলেছে, তাদের ওপরে ভাসমান এক রহস্যময় অবয়ব, যার চেহারা অস্পষ্ট, কিন্তু তার চারপাশ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যুতের রেখার মতো শক্তি।

নায়লার গলা শুকিয়ে এল।

"এটা কি ধর্মীয় স্থান, না বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র?" সে ফিসফিস করে বলল।

"এটা দুইয়ের মিশ্রণ হতে পারে," আলিজা বলল, "তবে আমি কিছু সত্তার অস্তিত্ব শনাক্ত করছি... তারা জীবিত, কিন্তু জৈবিক নয়।"

নায়লার শ্বাস আটকে গেল।

সে ধীরে ধীরে যান থেকে নেমে প্রবেশদ্বার পার হয়ে মন্দিরের ভেতরে ঢুকল। মুহূর্তেই গা ছমছমে অনুভূতি হলো। বাইরের রুক্ষ মরুভূমির গরম বাতাসের পরিবর্তে, ভেতরের বাতাস ঠান্ডা, আর্দ্র এবং ভারী।

তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হচ্ছিল।

"আমি নিশ্চিত এখানে কিছু আছে," নায়লা ফিসফিস করে বলল।

"তাদের কোনো পরিচিত জীবন-উপাদান নেই, কিন্তু তারা এখানে রয়েছে," আলিজার কণ্ঠ নিস্তরঙ্গ। "ভয় পেলে দ্রুত যানে ফিরে আসুন, আমি রেডি আছি।"

কিন্তু তার কৌতূহল তাকে আটকে রাখল।

সে আরেক পা সামনে বাড়াতেই, মন্দিরের মাঝখানের বিশাল স্তম্ভটি থেকে লালচে আলো বিচ্ছুরিত হতে শুরু করল।

তার গা শিউরে উঠল।

হঠাৎই, পাথরের মেঝেতে একসঙ্গে অসংখ্য চিড় ধরতে শুরু করল, যেন ভেতর থেকে কেউ উঠে আসতে চাইছে।

তার সামনে, বিশাল এক পাথরের কফিনের মতো কাঠামো ফাটল ধরে খুলে গেল।

ভেতর থেকে একদল লম্বা ছায়ামূর্তি উঠে এলো, চোখে তাদের অন্ধকারের শিখা, গায়ে শতাব্দীর পুরোনো ধুলো, এবং মুখে এক গম্ভীর, অনিশ্চিত অভিব্যক্তি।

নায়লার শ্বাস বন্ধ হয়ে এল।

"তোমরা কে?" সে কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করল।

একজন সামনে এসে দাঁড়ালো, লম্বা, কঙ্কালসার দেহ, চামড়ার রং মলিন কালচে, কিন্তু চোখ দুটি যেন জ্বলছিল অভিশপ্ত আগুনে।

তার মনের ভাষা গভীর, অথচ করুণ—"তুমি আমাদের মুক্ত করে দিলে..."

নায়লার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।

"তোমরা... বন্দী ছিলে?"

আরেকটি ছায়ামূর্তি কফিন থেকে বেরিয়ে এলো, তার ভাষা ছিল কষ্টে ভরা, "হাজার বছর... আমরা শৃঙ্খলিত ছিলাম। এই মন্দির ছিল আমাদের কারাগার।"

নায়লার মাথার মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল।

"কিন্তু কেন?"

প্রথম ছায়ামূর্তিটি এক পাথরের স্তম্ভের দিকে ইঙ্গিত করল, যেখানে জ্বলজ্বল করছিল সেই লালচে প্রতীকগুলো।

"আমাদেরই লোকেরা... আমাদেরই রক্তের উত্তরাধিকারীরা।"

"কিন্তু কেন?"

"কারণ আমরা সত্যকে জানতাম।"

নায়লার নিঃশ্বাস আটকে গেল।

তৃতীয় এক বন্দী, যার মুখটা আধা-ঢাকা কালচে মুখোশে, ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। তার ভাষা ছিল নিম্নমুখী, যেন গভীর অতল থেকে উঠে আসছে—"এই মন্দির এক সময় শক্তির কেন্দ্র ছিল। আমাদের পূর্বপুরুষরা এমন এক শক্তির সন্ধান পেয়েছিল যা সময়ের নিয়ম মানতো না। কিন্তু... তাদের লোভ আমাদের ধ্বংস করে দিয়েছে।"

নায়লার শরীর কাঁপছিল।

"কোন শক্তি?"

তারা একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর প্রথম জন আবার বলল, "সেই শক্তি যা জীবন এবং মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।"

নায়লা বুঝতে পারছিল, সে এমন কিছুতে হাত দিয়েছে যা তার ধারণার বাইরে।

"আমি কি ভুল করেছি?" তার কণ্ঠস্বর ফিসফিস করে বের হলো।

প্রথম ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এলো। তার ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত, করুণ হাসি।

"তুমি আমাদের মুক্ত করেছ, কিন্তু আমরা জানি না—এটা আশীর্বাদ, না অভিশাপ।"

আর ঠিক তখনই, মন্দিরের গভীর থেকে এক বিকট গর্জন উঠল, যেন দূরের কোথাও কোনো বিশাল দানব তার কারাগারের দরজা ভেঙে ফেলেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:১৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও আমার অপারগতা

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪১

সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত খবর অনুযায়ী আজ নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের সুপারিশ জমা দেয়ার কথা। তাদের প্রস্তাবিত কিছু বিষয় পড়ার পর আমার মনে বিষয়গুলো নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ : দেশের উন্নয়নের জন্য আসন বাড়ানোর বিকল্প নেই

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৮


নারী অধিকার নিয়ে কথা উঠলেই কিছু ভদ্রলোকের ঘুম ভেঙে যায়। রাষ্ট্র নড়েচড়ে বসে—একটু যেন ‘স্মার্ট’ ভাব ধরে। সেই ভাবেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সুপারিশ করলো, সংসদের আসন সংখ্যা ৬০০ করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প : মহম্মদ ইউনুস কি ভারতের বা মোদির হাতের পুতুল ?

লিখেছেন গেছো দাদা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৩

মোদীর ওপর গোসা করে মাটিতে খায় ভাত। হ্যাঁ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এইটাই হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের জন্য মালবাহী বিমানযোগে ট্র্যানশিপমেন্ট ফ্যাসিলিটি বন্ধ করে দেওয়াতে এমনিতেই পোশাক শিল্পের ওপর বড়সড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদীতার নামে ইসলামোফোবিয়া

লিখেছেন মারুফ তারেক, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৩:৩১



ইসলামে নারী ও পুরুষের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভূমিকায় বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। যারা নিজেদের মুসলিম হিসেবে দাবি করবে, তাদের উপর ইসলামের মৌলিক নিয়মগুলো আবশ্যিকভাবে বর্তাবে। ইসলামের কোন মৌলিক আইন বাতিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী কম পায় না, বরং সবটাই পায়—নিজের জন্য

লিখেছেন বক, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৫



ভাই নাঈম আর বোন নাবিলা
নাঈম ও নাবিলা দুই ভাই-বোন।
তাদের বাবা মারা গেলেন এবং রেখে গেলেন উত্তরাধিকার হিসাবে ১৮ লাখ টাকা।

ইসলামি বণ্টন অনুযায়ী:

ভাই নাঈম পাবেন: ১২ লাখ টাকা

বোন নাবিলা পাবেন:... ...বাকিটুকু পড়ুন

×