"গরীবের চেয়েও গরীব " এই বাক্যকে যদি কেউ এক কথায় সংকোচন করতে বলা হয় তাহলে উত্তর আসবে আলাউদ্দিন।
বেচারা এত গরীব, এত গরীব, এত গরীব সে, যে বাজারের ফকিরেরাও তাকে দেখলে দুইটা পয়সা ছুড়ে মারে।
নিজের বাড়িঘর তার নেই, তাই সে রফিক মেম্বারের গোয়াল ঘরে ঘুমায়। বিনিময়ে সকাল বিকাল দুইবেলা মেম্বারের দুধেল গরু দুলারীর দুধ দুইয়ে দেয়, গোসল করিয়ে দেয়, রাত হলে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে , মশা মাছি তাড়িয়ে দেয়। বিনিময়ে মেম্বারের বাড়িতে সে দুইবেলা ভাতের ফ্যান খায়। ভাত তার কপালে জোটে না।
আলাউদ্দিন যে এই পরিমান গরীব তা মেম্বারের গরূও জানে, তাই প্রায়ই আলাউদ্দিনকে সুযোগমত লাত্থি গুতা দেয়। বিশেষ করে রাত্রি বেলা যখন সারা দিনের হাড়ভাংগা খাটুনি শেষে আলাউদ্দিনের চোখ বুজে আসে। তখন এই বজ্জাত গরূর লাত্থি গুতা বেড়ে যায়। আলাউদ্দিন ঘুমিয়ে পড়লে তার গায়ের মশা মাছি তাড়াবে কে? তার গায়ে বাতাস করবে কে? হাজার হলেও সে দুধেল গাই, সকাল বিকাল ১৫ লিটার দুধ দেয়। আলাউদ্দিন কি তা দেয়? নাকি তার পক্ষে দেয়া সম্ভব। গর্বে দুলারীর ল্যাজ দুলে উঠে।
তো এক রাতে দুলারীর পাছা চুলকে দিতে দিতেই আলাউদ্দিন এক আশ্চর্য জিনিশ পেলো গোবরের গাদায়!! একটা প্রদীপ!! হয়তোবা মেম্বারের ছোটমেয়ের হাড়িপাতিলের খেলনা হবে। তাই ভেবে আলাউদ্দিন তা পরিস্কার করার জন্য ঘশা দিলো। এবং তারপরেই......
হু হু হা হা, আমি প্রদীপের আশ্চর্য জ্বীন, হাজার বছর পরে কে জাগালো আমার ঘুম, কে বের করলো আমাকে প্রদীপ থেকে?? কে সেই ভাগ্যবান। হা হা হা হু হু হু
আলাউদ্দিনের পেটে সন্ধ্যায় খাওয়া যতটুকু ফ্যান ছিল তা বের হয়ে গেছে দুস্ট বায়ু রূপে। এ কি আজাব। ইয়া খোদা।
ভুল হয়া গেছে স্যার। মাফ কইরা দেন। আমি গরিব মূর্খ বুঝতে পারিনাই।
ইয়া মালিক, আপনি ভয় পাবেন না। আমি ওই প্রদীপের জ্বীন আপনার গোলাম আপনার তিনটা ইচ্ছা পূরন করবো আমি। আমাকে আপনার ইচ্ছা বলুন মালিক।
আলাউদ্দিন একটু ঢোক গিললো, বলেকি! এই ষন্ডাগন্ডা লোকটা। আলাউদ্দিনের পেটে বাকী যতটুকু ফ্যান ছিল, তাও দুস্ট বায়ূ হয়ে বের হয়ে গোবরের গন্ধের সাথে মিশে গেল।
তিনটা ইচ্ছা বলুন মালিক। আমি প্রদীপের জ্বীন, প্রদীপের বাইরে বেশীক্ষণ থাকতে আমার কস্ট হয়।
আসলেই দিবেন, স্যার??
হ্যা মালিক আপনি যা চাইবেন তাই দিবো আপনি শুধু বলুন।
আমার লাউ দিয়া ভাত খাইতে মন চায়। বহুদিন খাইনা।
জ্বীনদের চিন্তা বুদ্ধি কম। কে ধন সম্পদ চাইল আর কে লাউ দিয়া ভাত খেতে চাইল তা নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই, সে ইচ্ছা পূরন করে প্রদীপে ঢুকে যেতে পারলেই খুশী।
তথাস্তু বলে সে লাউ দিয়ে ভাত হাজির করলো। অর্পন বহুদিন পরে আরাম করে ভাত খেলো।
মালিক দ্বিতীয় ইচ্ছা বলুন।
আমার পরনের গামছা টা যায়গায় যায়গায় ছিড়া, লজ্জা ঢাকতে পারিনা। যদি একটা যাকাতের লুংগী দিতেন জনাব।
তথাস্তু, চকচকে লুংগী হাজির।
মালিক তিন নাম্বার ইচ্ছাটা যদি বলতেন।
জনাব আপনার প্রতি শুকরিয়া, লুংগীর সাথে একটা নয়া গামছা যদি দিতেন। তাহলে ভাল হইত, এই পুরান গামছা দিয়া গরূর গা ডলি, আমার টাও ডলি। কস্ট হয়।
তথাস্তু।
প্রদীপ সহ দৈত্য বিলীন হইল।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩১