somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড ইউনুসের রিসেট বাটন নিয়ে ফ্যাসিবাদীদের প্রপাগান্ডা

০৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড. ইউনূসের "রিসেট বাটন" পুশ করার বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা।

আসুন দেখি রিসেট বাটন পুশ করা বলতে কী বুঝিয়েছেন ড. ইউনূস।

সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, “অনেকেই বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারা ফ্যাসিবাদের আইকন হিসাবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বীকৃত। এ ব্যাপারে আপনার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থাপকের এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।



উত্তর না দিয়ে বরং উপস্থাপককে বলেন, “আপনি পুরোনো দিনের কথাবার্তা বলছেন। এর মাঝে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল। আপনার বোধহয় স্মরণে নেই। আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন এসব ঘটনা ঘটেইনি। নতুন ভঙ্গিতে যা হচ্ছে, সেটিকে দেখতে হবে তো।”

“কত ছেলে প্রাণ দিলো, সেটা নিয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন নেই। কেন প্রাণ দিলো?” তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন।

এর পরেই তিনি বলেন, “প্রথম স্বীকার করতে হবে যে ছাত্ররা বলেছে, আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; সবকিছু শেষ; অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলব। দেশের মানুষও তা চায়। সেই নতুন ভঙ্গিতে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংস্কার করতে হবে।”

‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত তার এই মন্তব্য ঘিরেই।



"রিসেট বাটন" পুশ করা বলতে ড. ইউনূস কখনোই বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার কথা বোঝাতে চাননি। তিনি যে রিসেটের কথা বলেছেন, তা আসলে ৫ আগস্টের ঘটনার মাধ্যমে গত ১৫ বছর ধরে চলে আসা ফ্যাসিবাদী শাসন ও নির্মম দমননীতির অবসানকেই নির্দেশ করে।

গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামীলীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সোল এজেন্ট বানিয়ে দেশটাকে নিজের বাপের সম্পত্তি মনে করে এক ভয়াবহ অবস্থা তৈরী করেছিল। মানুষের কোন বাক স্বাধীনতা ছিলনা। দেশজুড়ে বিরুদ্ধ মতের মানুষদের গুম করা হয়েছে, বিরোধী নেতাকর্মীদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখা হয়েছিল, চাঁদাবাজির মহোৎসব চলেছিল। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল, উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প তৈরী করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছিল, রিজার্ভ খালি করা হয়েছিল— এই সবকিছুই আওয়ামী লুটেরাদের সময়ের বাস্তব চিত্র। সরকারি দপ্তরগুলোতে ঘুষ ও দুর্নীতির চক্র তৈরি হয়েছিল, সাধারণ মানুষের ভূমি দখল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। মোট কথা দেশে তখন আওয়ামী জাহেলিয়া যুগ কায়েম করা হয়েছিল।



ড. ইউনূস যখন "রিসেট বাটন" পুশ করার কথা বলেছেন, তিনি মূলত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী যুগের অবসানকেই নির্দেশ করেছেন। তার ভাষায়, এই রিসেট বাটনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ তাদের জীবন থেকে অস্বাভাবিকতা, দমননীতি, এবং ভীতির পরিবেশ দূর করে একটি স্বাভাবিক, সুস্থ, এবং সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। ড. ইউনূস মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন—একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি ঘটেছে, সামনে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে এবং আর কখনো ফিরে আসবে না। রিসেট বাটনের চাপেই ফ্যাসিবাদের নির্মম দাপট ইতিহাসের গর্ভে বিলীন হয়েছে, আর এই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো স্থান নেই। পুরনো গ্লানি মুছে দিয়ে নতুনভাবে জাতিকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।


এই বক্তব্য ফ্যাসিবাদের রক্ষকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা কখনোই কল্পনা করেনি যে তাদের তথাকথিত "আওয়ামী জাহেলিয়া যুগ" এত দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। ছাত্র জনতা যখন একযোগে রিসেট বাটন পুশ করে তাদের অন্যায়, নিপীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, তখন তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। এখন তারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে, মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং গুজব রটাচ্ছে, যাতে দেশের মানুষকে আবারো অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া যায়।

তবে, জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে এবং ফ্যাসিস্টদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে তাদের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ জনগণই এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে, এবং এই বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:২৮
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সঠিক ইতিহাসে জানতে হলে মেজর ডালিমকেও আমলে নিতে হবে

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯

সঠিক ইতিহাস জানতে হলে যেমন আপনাকে মেজর ডালিমের বক্তব্যকে আমলে নিতে হবে তেমনি ‌শেখ মুজিবের বক্তব্যও নিতে হবে।

আপনি একজনের ১৭ বছর একই ওয়াজ করা বক্তব্যকে বাইবেল আর মেজর ডালিমের বক্তব্যকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার ঘোষক কে?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:২৭

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে "আসসালামুয়ালাইকুম" বলে পাকিস্তানকে বিদায় জানানোর ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। তিনি তখন পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার, ভাষা, ও স্বাধীনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেলিম অনোয়ারের ব্যান নিয়ে আপনি কিছু বলছেন না কেন?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৩৫



এই ব্লগে কাকে ব্যান, সেমিব্যান, কমেন্ট ব্যান করলে আপনি খুশী হয়ে থাকেন? চাঁদগাজী/সোনাগাজীকে নিশ্চয়ই; এটা ভালো! চাঁদগাজী/সোনাগাজী "ব্যক্তি আক্রমণ" করে থাকে। সেলিম আনোয়ার কি আক্রমণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ষড়যন্ত্র করে অন্য দেশের সাহায্য নেয়া আওয়ামীলীগের পুরানো অভ্যাস

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:২৭

বহুদিন পর্যন্ত এই দেশের লোক জানতো যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মিথ্যা ছিল। জনগণের ধারণা ছিল শেখ সাহেবকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের শাসকরা এই মামলা সাজিয়ে ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুনির মুখে ইতিহাস শিক্ষা ও অধঃপতিত মানস

লিখেছেন sabbir2cool, ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩৪


বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর শরিফুল হক ডালিমকে প্রকাশ্যে এনেছেন আলোচিত ফেসবুক-সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। গত রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে ইলিয়াস ‘বিশেষ লাইভে যুক্ত আছেন বীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×