সামনে তাকাতে আর ইচ্ছা করছে না। শেষবার একটা ট্রাককে প্রচন্ড গতিতে নিজের দিকেই আসতে দেখেছিলো ফাহাদ। হাতে মনে হয় আর কয়েক সেকেন্ড আছে। এর মাঝেই চোখ ভয়ে বন্ধ করে ফেললো ফাহাদ। মিথিলার কথা মনে পড়ছে খুব। প্রচন্ড জোরে একটা শব্দ ওর কাছে আসছে মনে হয়!!! তীব্র ধাক্কা খেলো মনে হয় ফাহাদ। তারপর আর কিছুই মনে নেই তার।
সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ফাহাদের। একি ভয়ানক দু:স্বপ্ন দেখলো সে!!! এরকম স্বপ্ন তো সে আগে কখনো দেখেনি!!! একটু ভয় পেয়ে গেলো মনে মনে। এরকম স্বপ্নকে সে আসলেই অনেক ভয় পায়।
ঘড়ি দেখে সময়টা দেখলো ফাহাদ। আরে বাপরে!! সকাল ১০টা বেজে গেছে!! ১২টায় মিথিলার সাথে দেখা করার কথা তার। আর দেরী করা যাবে না। মেয়েটা ৫মিনিট দেরী করলেই রাগ করে বসে। আজব এক দেমাগ পেয়েছে মেয়েটা!!! একটা ফোন দেই।
মিথিলা: হ্যা...কি বলবে বলো ??
ফাহাদ: ফোন ধরে কি প্রথমে একবার হ্যালো বলা যায়না!!! সবসময় তোমার কথার ভাব এমন কেন ??
মিথিলা: ঢং বাদ দাও....একটা কাজে আছি। ১২টার দিকে চলে এসো। আমি টিএসসির সামনে থাকবো। আজকে দেরী করলে কিন্তু খবর আছে।
ফাহাদ: জ্বি ম্যাডাম...আমি জানি। আপনার মেজাজের ঠিকানা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। আপনার সাথে আ........
মিথিলা: ফালতু কথা বন্ধ করো। রাখলাম এখন।
মিথিলা ফাহাদের কথা আর শেষ করতে দিলো না। কথার মাঝখানেই ফোন রেখে দিলো।
ফাহাদ আর কি করবে বেচারা!!! পুতুল বানিয়ে রেখেছে মেয়েটা ওকে। সারাক্ষণ রাগারাগি। কিছু বলতেও পারে না। সাহসে কুলায় না ওর।
ফাহাদ কোনমতে নাস্তা করে যাচ্ছিল। এমন সময় আম্মার ঝাড়ি!!
আম্মা: এমন গরুর মতো খাচ্ছিস কেনো ?? আস্তে খা। পরে আবার সেদিনের মতো গলায় আটকে আরেক নাটক করবি!!!
ফাহাদ(মুখে একগাল খাবার চিবাতে চিবাতে): সবসময় ডাক দিয়ো নাতো আম্মা। তোমাদের ডাকে আর পারিনা। কাজ আছে...শান্তিমতো খেতে দাও।
আম্মা: শোন বাইরে যাবার আগে বিলের কাগজগুলো নিয়ে যাবি মনে করে। বিল দিয়ে তারপর জাহান্নামে যাস আমার সমস্যা নাই।
ফাহাদ: আরে না আজকে না!!! আজকে একেবারেই পারবো না। দেরী হয়ে যাবে আমার। কোনমতেই সম্ভব না আজকে।
ফাহাদ এখন বিলের বিশাল লাইনে দাড়িয়ে আছে। এত কাহিনী করেও শেষ রক্ষা হলো না। আম্মা ঠিক বিল দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন!! এখন বিল দেয়া শেষ করবে কখন আর মিথিলার কাছে যাবেই কখন!!! আম্মা আর মিথিলা এই দুজন মহিলার যন্ত্রনায় জীবনটা তার শেষ। কপাল একটা আমার!!!!
টিএসসির সামনে দাড়িয়ে আছে মিথিলা। ১২টায় আসার কথা ফাহাদের। আর এখন বাজে প্রায় ১টা!!! ছেলেটা জীবনে কোন কিছুকেই সিরিয়াসলি নিলো না!! আজিব একটা কেয়ারল্যাস ছেলে!!! মনে হয় ইচ্ছে করেই এখন দেরী করে!!!!
এদিকে ফাহাদের অবস্হা বেশী ভালো না। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেছে একেবারে। যেখানে মিথিলা মাত্র ১৫মিনিট দেরী হলেই রাগারাগি শুরু করে সেখানে আজ সে একদম ১ঘন্টার উপর দেরী করে ফেলেছে। কাছাকাছিই চলে এসেছে ফাহাদ। আজকে মনে হয় মিথিলা মনে হয় ওর খবর করেই ছাড়বে!!!
মিথিলা ফাহাদকে আসতে দেখলো। আস্তে আস্তে হেটে আসছেন সাহেব!! গায়ে কটকটা হলুদ রংয়ের একটা শার্ট!! কোন পুরুষ মানুষ এরকম কটকটা রংয়ের শার্ট পড়তে পারে সেটা মিথিলার মাথায়তেই ঢুকলো না। কিন্তু ফাহাদ পারবে। ওর পোশাকজ্ঞান সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা হয়ে গেছে এতদিনে। মিথিলার মুখে হাসি চলে এসেছিলো। সাথে সাথে আবার মুখ গম্ভীর করে ফেললো। হাসি দেখলে লাই পেয়ে যাবে। মিথিলা সামনেই পার্কের দিকে হাটতে লাগলো।
ফাহাদ মিথিলার সাথে সাথেই হেটে যাচ্ছে। বেচারার মুখ-টুখ চিপসে গেছে। ফাহাদ দু-একটা কথা বলার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত মিথিলা কোন কথার জবাবও দেয়নি আর কথাও বলেনি। কপালে খারাপি আজকে আছে ওর। একেবারে ১.৩০ঘন্টা দেরী হয়েছে আজকে!!!
দুজনে পার্কের খোলা জায়গায় বসে আছে। ফাহাদ কি বলে কথা শুরু করবে ভরসা পাচ্ছে না। মিথিলার রিমান্ড খুব ভয়ানক। একবার শুরু করলে আর থামে না।
মিথিলা একটা পিচ্চির কাছে থেকে বাদাম কিনে খেতে লাগলো। ফাহাদও কি মনে করে পিচ্চিটার কাছ থেকে নিজেও বাদাম কিনলো। চুপচাপ আর কতক্ষণ বসা যায় ?? বাদাম খেতে খেতেই মাথায় একটা সস্তা টাইপের বুদ্ধি আসলো। মোবাইলটা বের করে মিথিলাকে একটা মেসেজ লিখলো...
" বিশ্বাস করো ঠিক সময়েই বের হয়েছিলাম। রাস্তায় আজকে একদম সবগুলো সিগনালে পড়তে হয়েছে। আশেপাশে মানুষজন না থাকলে কানে ধরে মাফ চেতাম। সামনে আর হবে না। এবারের মতো ক্ষমাপ্রার্থী। "
মিথিলারও আরেক আজব সমস্যা!! বেশীক্ষণ ফাহাদের সাথে কথা না বলে থাকতে পারেনা। অনেক রাগ দিয়ে শুরু হলেও তাদের এই মান-অভিমান পর্ব বেশিদূর গেলো না আর সেদিন। কিছুক্ষণ পরেই আবার সব ঠিক।
রাত ১০টার মতো বাজে। ফাহাদ বাসাতেই আছে। মিথিলার সাথে কথা বলছে।
মিথিলা: আন্টির খবর কি ?? ভালো আছেন ?
ফাহাদ: উনি সবসময়ই ভালো থাকেন। ভালো না থাকলে আমাকে সবসময় ঝাড়বে কে ??
এমন সময় ফাহাদের আম্মা এসে ঢুকলো রূমে।
আম্মা: ফাহাদ.....বিলগুলো দিয়েছিলি!!!!
ফাহাদ(থতমত খেয়ে গেছে): আচ্ছা দোস্ত...কিসের কথা যেন বললি!!! কালকে স্যারের সব কিন্তু....আচ্ছা দাড়া আম্মার সাথে একটু কথা বলে নেই।
মিথিলা জানে ফোনের ওইপাশে কি হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই এরকম হয়। প্রতিবারই ওর হাসি আসে। কিসব অদ্ভূত কথা যে বলে ফাহাদ তখন ফোনে!!!
কোনমতে আম্মাকে রূম থেকে বিদায় করলো ফাহাদ। রূম থেকে বের হয়ে যাবার সময় ফাহাদের আম্মাও মুচকি হাসি হাসতে লাগলেন। তিনি অনেক আগেই জানেন ছেলে ফোনে কার সাথে কথা বলছে। মাঝে মাঝে ছেলেটার এরকম বোকামী দেখে খুব মজা পান তিনি। ছেলেটা আর বড় হলো না।
ফাহাদ আবার মিথিলার সাথে কথা বলতে লাগলো। অর্থহীন সব কথাবার্তা তাদের!!! তারপরও সারাদিন কথা বলে যেতে ইচ্ছে হয় তাদের।
গল্প এখানেই শেষ আমার। একটি কথা ভাবলাম সবাইকে জানিয়ে রাখা ভালো। দু:স্বপ্ন দেখে ফাহাদের ঘুম ভেঙ্গে উঠা থেকে রাতে মোবাইলে কথোপকথন এগুলো ৩মাস আগের ঘটনা। এক্সিডেন্টটি মাত্র ২দিন আগের ঘটনা। এক্সিডেন্টটি ফাহাদের কোন দু:স্বপ্ন ছিলো না। ৩মাস আগে ফাহাদ হয়তো অন্যকোন দু:স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছিলো। ফাহাদ আর বেচে নেই। মারা গেছে সে সেই এক্সিডেন্টে।
একটা গান দিলাম। গানটার নাম কষ্ট বেচে যাই । শুনে দেখুন। ভালো লাগতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৩