সেদিন সম্মানিত জানা ম্যাডাম লিখলেন আমরা কি নিরাপত্তাহীনতার ঘেরাটোপে আটকে যাচ্ছি?? বেলা' প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী এবি সিদ্দিককে কে/কারা উদ্ধার করলো? প্রশাসনের ভূমিকা কি? নাকি তঁাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তাই তিনি ফিরে এসেছেন। মিডিয়ার সংবাদগুলো বড্ড বিভ্রান্তিকর!
তিনি ফিরে আসায় পুরো পরিবার সহ দেশের মানুষ যেমন একদিকে স্বস্তি পেলেন তেমনি একটি শংকাতেও আড়ষ্ঠ হয়ে গেলেন। রিজওয়ানা আপা এবং তার পরিবার কি এখন নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারবেন? নিশ্চয়তাটি কোথায়? সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তাটুকু কে নিশ্চিত করবে? অপহৃত হওয়া সব মানুষগুলোইতো আর ফিরে আসে না। আবার ওদিকে বেচারা প্রশাসনও কানা, খোঁড়া, বোবা এবং কালা! তাহলে একটি সভ্যদেশে, গণতান্ত্রিক দেশে, স্বাধীন দেশে এভাবে গুম, হত্যা, অপহরণ আর অবিচার পাকা পোক্ত জায়গা করে নেবে!!!
সিদ্দিক সাহেব ফিরে আসাতেই আমাদের যাবতীয় উৎকন্ঠা ফুরিয়ে যায় না, বরং আমাদের দায়িত্বশীলতা বোধ করি আরও বেড়ে যায়। আমরা, দেশের সর্বসাধারণ নিরাপদ জীবন-মৃত্যু'র নিশ্চয়তা চাই। মানবিকতায় বাসযোগ্য বিশ্বস্ততা চাই।
সম্মানিত জানা ম্যাডামের উৎকন্ঠা ছিল সত্য এবং সত্যি দুশ্চিন্তা করার মতো। কারণ গতকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম আলোর কিছু সংবাদ দেখে রীতিমত চমকে উঠলাম। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মতো আমিও ভীত , হতাশ , নির্বাক এবং আতঙ্কগ্রস্ত।
আমরা সবাই এর মধ্যেই জেনেছি নারায়ণগঞ্জকে গুমের রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। “জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রায় ৩০০ ব্যক্তিকে হত্যা, গুম ও অপহরণ করা হয়েছে। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলছে " গুমের সংখ্যার আনুপাতিক হার নারায়ণগঞ্জকে বছরের তুলনায় কম, গুম নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।" তার মানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন অন্যান্য বছরের গুম হওয়ার আনুপাতিক হার বেশি ছিলো।
আপনি কি এই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে মন্ত্রী কি বলবেন? গুমের আনুপাতিক হার যিনি নির্ধারণ করেন এবং চলতি বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় কম বলে চিন্তা না করতে বলেন তিনি আমাদের মন্ত্রী । তাই আমাদের গুম হওয়ায় স্বাভাবিক।
রেজোয়ানার স্বামীকে গুম করার পর থেকে এখন পর্যন্ত গুম নিয়ে পুরা দেশের মানুষ ভীত হলেও সরকার আগুলো কোন আমলে নিচ্ছেন বলে হচ্ছেনা। তার প্রমাণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য।
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কলাগাছিয়ার শান্তিনগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে আজ সকালে ( বৃহস্পতিবার) আরো একটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে এটি প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের গাড়ির ড্রাইভার জাহাঙ্গীরের লাশ। এ নিয়ে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭-এ। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী এই ঘটনার জন্য নারায়ণগঞ্জের গডফাদারদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, গডফাদাররা নারায়ণগঞ্জের সব প্রতিবাদী মানুষকে হত্যা করে তাদের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। এ দিকে অপহরণের পর যাদের নামে নজরুল ইসলামের পরিবার মামলা দায়ের করেছে তাদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও হাত রয়েছে। তাদেরকে দিয়েই গডফাদাররা এই অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে সবিনয়ে জানতে চাই দিনে কমপক্ষে কত জন গুম হওয়ার পর খুন হলে আপনারা চিন্তিত হবেন?
মার্চ মাসে লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গাওয়ার জন্য জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮০ লাখ টাকা গ্রহণ করে সরকার। পরে তীব্র প্রতিবাদ, সমালোচনা ও নিন্দার মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে সে টাকা সরকার ফিরিয়ে দিলেও এপ্রিল মাসের শেষে এসে আবারো ইসলামী ব্যাংক এর টাকার টকা লোভে পড়ে সরকার। খবরে প্রকাশ পায় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ২০০০ কোটি টাকা ইসলামী ব্যাংক থেকে নিচ্ছে সরকার। টকা দিলে রাজাকারকে মুক্তিযুদ্ধের সনদপত্র বিতরণ করা হয়। সে আর নতুন কি?
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, কার্যরত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ চাওয়ায় তিনি কোনো 'সমস্যা' দেখছেন না। সমালোচনা ওঠায় 'লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলায়' ইসলামী ব্যাংকের অর্থ না নেয়া এবং এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তদন্তের উদ্যোগের মধ্যেই ইসলামী ব্যাংকের অর্থ নিলে নতুন করে বিতর্ক হলেও তা উপেক্ষা করেই বহু প্রতীক্ষিত এই সেতু নির্মাণে এগিয়ে যেতে চান পরিকল্পনামন্ত্রী। মুস্তফা কামাল বলেন, ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে আমি পদ্মা সেতুর জন্য ১ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। তিনি আমাকে কথা দিয়েছেন, এই ১ হাজার কোটি টাকা তারা পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করবেন।
প্রিয় পাঠক আবার খেয়াল করুন সমালোচনা ওঠায় 'লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলায়' ইসলামী ব্যাংকের অর্থ না নেয়া এবং এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তদন্তের উদ্যোগের মধ্যেই ইসলামী ব্যাংকের অর্থ নিলে নতুন করে বিতর্ক হলেও তা উপেক্ষা করেই বহু প্রতীক্ষিত এই সেতু নির্মাণে এগিয়ে যেতে চান পরিকল্পনামন্ত্রী। এতে প্রমাণিত হয় ইসলামী ব্যাংক যদি সরকারকে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য ২০০০ কোটি টাকা দেয় তবে কোন সমস্যা নেই। তাদের অনিয়ম এবং দুর্নীতি বৈধতা পাবে।
মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আমি সবিয়ে জানতে চাই জামাত নেতা দেওয়ার দেলোয়ার হোসেন সাইদীর ফাঁসি সহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কি টাকার বিনিময়ে মওকুপ করে দিবেন ?
এই কথা বলছি কারণ, গণজাগরণ মঞ্চ চিহ্নিত 'যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠান' ইসলামী ব্যাংকের অর্থ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির সম্ভাবনার বিষয়টি মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হলে তার জবাবও দেন তিনি। বিতর্কের মধ্যেই আমাদের চলতে হবে। সব বিতর্কে কান দিলে দেশের উন্নয়ন হবে না। ইসলামী ব্যাংক দেশে সফলভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে- তাতে কোনো সমস্যা নেই; আর তাদের টাকা পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ হলে বিতর্ক হবে- এটা আমি মেনে নিতে পারি না। গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংক অর্থ দেয়ার পর গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন তার প্রতিবাদ জানায়। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতীয় সংগীতের অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংকের কোনো অর্থ খবর করা হচ্ছে না। ইসলামী ব্যাংকটির মালিকানা কাঠামোয় জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের বক্তব্য। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলী ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ জাহের মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম এলাকায় আল বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আব্দুল হান্নানও জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এর সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. সালেহ জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের ভাই। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগে থাকার পর এই প্রথম মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মুস্তফা কামাল বলেন, ইসলামী ব্যাংক আইডিবির (ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক) সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পে আইডিবি'র সহায়তা নিচ্ছি; তাতে কোন সমস্যা নেই। ইসলামী ব্যাংকের টাকা নিলে সমস্যা হবে কেন, বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। মুস্তফা কামাল বিসিবির সভাপতি থাকাকালে ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজনের সময় ঢাকাকে সাজাতে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ নেয়া হয়, যা নিয়েও তখন সমালোচনা ওঠেছিল। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তদন্তের মধ্যে সঙ্কটে পড়া ইসলামী ব্যাংককে দেশের বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্পের অংশীদার করা হলে তা ব্যাংকটিকে নিজেদের বড় ধরনের বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচারের সুযোগ এনে দেবে বলে অনেকে মনে করেন। ২৯০ কোটি ডলারে (২২০০০ কোটি টাকা) ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে মূল অর্থ যোগানদাতা বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আইডিবিও ছিল। এই সংস্থাটির দেয়ার কথা ছিল ১৪ কোটি ডলার। আইডিবির ১৪ কোটি ডলারের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার কোটি টাকার কোনো সম্পর্ক আছে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, না, আইডিবির ওই টাকার সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের এই ১ হাজার টাকার কোনো সম্পর্ক নেই।
মাননীয় মন্ত্রী, সরকার এবং চেতনাবাজদের কাছে আমি আবারো সবিনয়ে জানতে চাই ৭১ এর মানবতা বিরোধিতার সরাসরি জড়িত থাকা প্রমাণিত হওয়ার পরও উন্নয়নের দোহায় দিয়ে তাদের পরিচালিত ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া যদি বৈধ হয় তাহলে টাকার বিনিময়ে সাইদী কেও কি আপনারা মুক্তি দিবেন? যেখানে তার জন্য শতাধিক মানুষ প্রাণ দিয়েছে সেখানে জামাত তাকে বাঁচাতে তাদের মোট অর্থের ১ তৃতীয়াংশ দিতে রাজি আছে বলে আমার মনে হয়। শুধু তাই নয় সাইদী জামাতের কাছে এতই মূল্যবান যে তাকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে আপনারা যা চাইবেন তাই পাবেন। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে রাজাকারদের টাকা নেওয়া বৈধ হলে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে টাকার বিনিময়ে অন্য এক রাজাকারকে মুক্তি দেওয়া কেন বৈধ হবেনা ?
রানা প্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার এক বছর পার হয়ে গেলো নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের কি হবে তা বলা যাচ্ছেনা। এমনকি নির্ধারিত হয়নি ক্ষতিপূরণের পরিমাণও।
যদিও বলা হচ্ছে রানা প্লাজায় প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির জন্য ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা পরিমাণের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে । কিন্তু তা আদৌ তারা পাবে কিনা আমি বুঝতে পারছিনা। আর এই সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা কি পর্যাপ্ত? একজন মৃত শ্রমিকের জীবনের মূল্য কি সাড়ে চৌদ্দ লক্ষ টাকা দিয়ে নির্ধারিত হয়? প্রথম আলোতে পড়লাম কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ইচ্ছাকৃত বা অবহেলাজনিত কারণে কারও মৃত্যু ঘটলে তাকে ‘রংফুল ডেথ’ বা অবৈধ মৃত্যু বলা হয়। মালিকের অবহেলায় কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে নিঃসন্দেহে তা অবৈধ মৃত্যু। এ ধরনের মৃত্যুর জন্য দেওয়ানি আদালতের শরণাপন্ন হয়ে ‘টর্ট’ আইনের অধীনে মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়। রানা প্লাজায় এক হাজার ১৩৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ও সহস্রাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার পেছনে রয়েছে মালিকের অমার্জনীয় অবহেলা। তাই আহত-নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ মূলত ভবন ও কারখানার মালিকদেরই দিতে হবে। একই সঙ্গে দণ্ডবিধির আওতায় ‘রংফুল ডেথ’ ও ‘রংফুল ইনজুরি’ ঘটানোর অপরাধে মালিকদের শাস্তি হওয়াও জরুরি।
অবৈধ মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হলো সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ আয়ের বর্তমান মূল্য (discounted value of future flow of earnings), যা সারা পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে মৃত ব্যক্তি বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে সে যা আয় করতে পারত, তার বর্তমান মূল্যই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
এ ধরনের ডিসকাউন্টিং (discounting) পদ্ধতিতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের ওপর: মৃতের বয়স, তার ভবিষ্যৎ আয়-ক্ষমতা এবং সুদের হার বা ডিসকাউন্ট রেট। মৃত ব্যক্তির অল্প বয়স হলে তাদের বেশি দিন বেঁচে থাকার এবং উপার্জন করার সম্ভাবনা থাকে। অবশ্যই লেখাপড়া, দক্ষতা ও যোগ্যতার ওপরও তাদের আয়ের ক্ষমতা নির্ভর করে। সুদের হার বেশি হলে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ আয়ের বর্তমান মূল্য কম হবে। অন্যভাবে বলতে গেলে, সুদের হার বেশি হলে অপেক্ষাকৃত সামান্য অর্থ বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতে অধিক প্রতিদান পাওয়া সম্ভব।
তবে কেউ যুক্তি দিতে পারেন যে তৈরি পোশাকশিল্পের বর্তমান ন্যূনতম বেতন অনেক কম, তাই প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ অযৌক্তিক নয়। কিন্তু অধিকাংশ শ্রমিকেরই বেতন-ভাতা ন্যূনতম মজুরি থেকে বেশি। এ ছাড়া অনেক মৃত শ্রমিকেরই অতিরিক্ত আয়ের উৎস ছিল। তাই কিছু কিছু শ্রমিকের জন্য প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য হলেও অধিকাংশ শ্রমিকের জন্য তা যৌক্তিক বলে মনে হয় না।
কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ইচ্ছাকৃত বা অবহেলাজনিত কারণে কারও মৃত্যু ঘটলে তাকে ‘রংফুল ডেথ’ বা অবৈধ মৃত্যু বলা হয়। মালিকের অবহেলায় কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে নিঃসন্দেহে তা অবৈধ মৃত্যু। এ ধরনের মৃত্যুর জন্য দেওয়ানি আদালতের শরণাপন্ন হয়ে ‘টর্ট’ আইনের অধীনে মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়। রানা প্লাজায় এক হাজার ১৩৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ও সহস্রাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার পেছনে রয়েছে মালিকের অমার্জনীয় অবহেলা। তাই আহত-নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ মূলত ভবন ও কারখানার মালিকদেরই দিতে হবে। একই সঙ্গে দণ্ডবিধির আওতায় ‘রংফুল ডেথ’ ও ‘রংফুল ইনজুরি’ ঘটানোর অপরাধে মালিকদের শাস্তি হওয়াও জরুরি।
যখন আমি পত্রিকায় পড়ি সোহেল রানার জামিন ৭ দিনের জন্য স্থগিত তখন মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে আমি সবিনয়ে জানতে চাই যেখানে আপনারা ঘাতক সোহলকে শাস্তি না দিয়ে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবছেন সেখানে আমরা কি করে বিশ্বাস করবো রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হবেনা? ট্রাজেডির ১ বছর পরেও যেখানে ক্ষতি পূরণের ব্যাপারটা সুরাহা হয়নি সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবার তাদের ন্যায্য ক্ষতি পূরণ পাবে তার নিশ্চয়তা কি?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর একটা ব্যাপার নিয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি বুঝতে পারছিনা ভারতের প্রতি কেন আপনি এতো দুর্বল। তিস্তা তো বি এন পি জামাতের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। তিস্তা নদীর অপমৃত্যুর জন্য দায়ী কে তা বুঝতে পারার পরও কেন আপনি না বুঝার ভান করছেন? অবিলম্বে তিস্তার ন্যায্য হিস্যার সুরাহা করুন। ২০৩৫ সালে হয়তো আপনি থাকবেন না। আপনার সন্তান তার আমেরিকান বউ নিয়ে থাকবে আমেরিকা। কিন্তু এদেশের সাধারণ মানুষ ২০৩৫ সালে পানির জন্য হাহাকার করবে বলে ভাবছেন আন্তর্জাতিক পানি বিশেষজ্ঞরা। আমি একজন সামান্য ব্লগার হয়ে বুঝতে পারছি তিস্তা সহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে হবে কিন্তু আপনে তা না করে তাদের উপর ভর করে রাজনীতি করছেন। এসব কি?
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জনতা ফুঁসছে । বিদ্রোহ অতি সন্নিকটে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। এদেশের জনগণের জান ও মাল এর নিশ্চিত করা আপনার নৈতিক দায়িত্ব। আপনি দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনি তাদের অভিভাবক।
অবিলম্বে ফরমালিন এর অপ-ব্যবহারকারীদের শাস্তির আওতাধীন করুন। প্রশ্ন পত্র ফাঁস করা বন্ধ করুন। প্রশ্নপত্র ফাঁস করা মানে এদেশের মেধা গুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া। আপনার অযোগ্য মন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে মিথ্যাচার করে নিজের দোষ ডাকতে চাচ্ছেন। আমরা এখন অনেক সচেতন। আই সি টির ৫৭ ধারার কালো থাবার মাধ্যমে আমাদের কণ্ঠ রোধ করা যাবেনা। হলুদ সাংবাদিকরা দালালি করে টাকা খেয়ে সত্য গোপন করলেও ব্লগাররা দালালি করেনা। আমরা ঠিকই সত্য বের করে এনে প্রকাশ করি।
যাত্রীবাহী ফেরি ডুবির ঘটনায় সরকারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে তুমুল সমালোচনার প্রেক্ষিতে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চাং হং-ওন। আর আপনি ? বলতে লজ্জা লাগে। তাজরিন দুর্ঘটনায় এতো গুলো মানুষ পোড়ে কয়লা হয়ে গেলো , রানা প্লাজায় এখনো মৃত মানুষের লাশের গন্ধ উঠছে। অথচ বলছেন রানা প্লাজার শ্রমিকরা কারখানার মূল্যবান জিনিস পত্র সরাতে গিয়েছিলো। চাং হং-ওন ও প্রধানমন্ত্রী আপনিও প্রধানমন্ত্রী । চাং হং-ওন কে গোটা বিশ্ব সম্মানের সাথে স্মরণ করছে আর আপনি বি বি সি - সি এন - এন এ দেওয়া সাক্ষাতকারে কি বলছেন আপনার কি মনে আছে?
আপনার সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। দেশ ও দেশের মানুষের যে দায়িত্ব আপনে নিয়েছেন তা যথাযথ ভাবে পালন করুন। আমরা আপনার সাথে থেকে সহযোগিতা করবো।