-কে ! কে ওখানে ?
-ইয়ে আমি , জনাব।
-সামনে আসুন । আপনাকে তো চিনি বলে মনে হচ্ছে না
-আমাকে আপনি চেনেন কিনা জানিনা , তবে আমি আপনাকে চিনি জনাব
-বেশ ! বলুন কি আপনার অভিপ্রায় ... আর হ্যাঁ , 'জনাব' না বললেও চলবে
-ধন্যবাদ ! আমার মনে হয়েছিল আগেই
-কি মনে হয়েছিল ?
-মনে হয়েছিল আপনি বিনয়ী এবং সম্ভবত বুদ্ধিমান
-তাও বেশ ! এবার আপনার মাঝরাতে ঠোকাটুকির বেপারটা খোলাসা করলে ভালো লাগতো
-আসলে ভালো লাগা বেপারটা বড়ই গেঞ্জামে বুঝলেন জনাব ? এখন এই মুহূর্তে আপনার যা ভাল্লাগছে , একটু পরে হয়তো তার উল্টাটাই লাগবে । যেমন, ধরেন আপনি এখন আড়ামে ঘুমাতে চাচ্ছেন / চাচ্ছেন যে উদ্ভট লোকটা বিদায় হোক
-বটে
-হাহা আমি জানি
-কিন্তু আমি জানি না
-কি জানেন না ?
-রাত ২ টার সময় একজন অপরিচিত লোকের দরজায় ঠোকাঠুকির কারন
-অপরিচিত তো নয় জনাব ! আমি আপনাকে চিনি , এবং বলেওছি একবার
-কিন্তু আমি আপনাকে চিনি না
-সমস্যা সেখানে না
-সমস্যা কোথায় ??
-সমস্যা হচ্ছে আপনি সচেতন নন অর্থাৎ অবচেতন কিংবা ঘুমে অচেতন এবং যথেষ্ট অসতর্ক !
-ধন্যবাদ
-কি হেতু ?
-আমাকে সতর্ক করার জন্য রাতের ঘুম নষ্ট করেছেন বলে এবং ধন্যবাদটা আমি আবার ফেরত নিচ্ছি আমার ঘুমটা নষ্ট করার কারনে
-বেশ ! তবে আপনি কিন্তু এখনো জানেন না যে কেন আপনি অচেতন কিংবা অসতর্ক এবং কি নিয়ে
-আশা করছি শীঘ্র জেনে যাবো । তবে এখন আপনাকে আর সময় দিতে পারছিনা । আপনি সোফা ছাড়তে পারেন
-যদি ততক্ষন অক্ষত থাকেন !
-আচ্ছা , আপনার উদ্দেশ্য কি বলুন তো ??
-আপাতত আপনাকে সতর্ক করা । পরবর্তী উদ্দেশ্য সময় হলে জানবেন । আচ্ছা, গত সপ্তাহে আপনি দুবাই থেকে স্বর্ণের চালানটা এনেছেন সেটার হ্যান্ডওভার ডকুমেন্ট গুলি যে শুধু আপনার হাতেই আছে তা কি আপনি নিশ্চিত ?
-কি বলতে চান আপনি !? আপনি আমাকে স্বর্ণচোরালানে জড়িত বলতে চান !?!
-মোটেও না জনাব । আপনি অত্যন্ত ভদ্র , সুশীল এবং সমাজসেবী ব্যাক্তিত্য । এটা সব্বাই জানে । কিন্তু , গত তিন সপ্তাহ থেকে আপনার মত উচ্চ পর্যায়ের একজন শিল্পপতির এই সাধারন ভাড়া বাসায় দিনাতিপাত কি তাদের চোখে একটুও রেখাপাত করবে না ?
-দেখুন , আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন ! আমি কি করব , কোথায় কার শশুড় বাড়িতে থাকব সেটা আপনি বলে দেবেন না !
-বেশ ! আমি বলছিও না । আমাকে শুধু বলুন যে , যে ছেলেমেয়েদুটোকে আপনি গত মাসে আশ্রয় দিয়েছেন অবৈধভাবে তারা এখন কি অবস্থায় আছে , জানি কোথায় রেখেছেন বলবেন না । শুধু এটুকু বলি যে মেয়েটার বাবা অত্যন্ত প্রভাবশালী লোক ! তিনি তার সর্বস্বের বিনিময়ে হলেও মেয়েকে খুঁজে বের করবেন । আর আপনি বা ছেলেটা কারো জন্যই সেটা ভালো হবে না ।
-আপনি কি হুমকি দিচ্ছেন আমাকে ?!
-মোটেও না । আমি চাই যে ওরা ভালো থাকুক । নাথিং এলস আর যেহেতু বেশ ভালো উপকার আপনি আমার করেছেন কয়েকবার নিজের অজান্তে , সেহেতু কেঁচো খুড়তে সাপ না বের হয়ে পড়ুক । সেজন্যই জানতে চাইছি
-বেশ ! আমি কখনো আপনার উপকার করেছি বলে মনে পড়ে না , তবে ছেলেমেয়ে দুটোর যদি ভালো চান তবে জেনে রাখুন ওরা ভালো আছে , নিরাপদে আছে এবং আমি কোনভাবেই তাদের একটা সুব্যবস্থা না করে শেয়ালের হাতে মুরগি তুলে দিচ্ছি না ।
আর সবচে বড় কথা হচ্ছে ওরা এখন বিবাহিত !
-বাহ ! চমৎকার ! এতোটা আশা করিনি । বেশ , কয়লা যখন নিয়েছেন আপনার ময়লা হাতে , দয়া করে সময়ের আগেই ছেড়ে দেবেন না । সেক্ষেত্রে দুটো ফুল ঝরে যাবে আপনার মত পুরানা পাপীর নিরবুদ্ধিতার মাশুল গুনতে গিয়ে । আর সেক্ষেত্রে , সবার চোখ ফাকি দিলেও আমাকে আপনি এড়াতে পারবেন না !
ওরা পার হয়ে গেলে আপনি আপনার পাপের বস্তা নিয়ে চুলায় যান , চলি ।
-আপনাকেও মনে থাকলো আমার , সময় মত কথা হবে ... !
::::::::::::::::::দ্বিতীয় রাত : ২ টা ১৫ মিনিট::::::::::::::::::
-আবার কে ? আপনি ? আবার কি শুনাতে এসেছেন ?
-পারডন মি স্যার ! আমি কামরুল হাসান ডাবল বিতে এমাসে জয়েন করেছি ৬ তারিখ । দুবাই “ব্ল্যাক ডায়মন্ডস এন্ড কোং” এ একটা রিপোর্ট নিয়ে এসেছি । আরজেন্ট স্যার ! আপনি তো “ডাবল বি”র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোর্শেদ ইকবাল ?
-জি ! কি জন্য বলুন তো ? ব্ল্যাক ডায়মন্ডস এর তো এই মুহূর্তে আমাকে দরকার হবার কথা না !
- স্যার , যদি ভেতরে আসতে বলতেন , কয়েকটা জরুরী বেপার ছিল ... এক্সকিউজ আস স্যার আরজেন্ট বলেই এই মুহূর্তে আপনাকে ডিস্টার্ব করতে হল এখানে ... আমার দশ মিনিট হলেই চলবে
- ওকে কাম ইন ।
- স্যার , ব্ল্যাক ডায়মন্ডস থেকে আপনার যে ডেলিভারিটা এই মাসে পাবার কথা সেটা এয়ারপোর্টে আটক হয়েছে ! আপনি প্লীজ অতি সত্তর পাসপোর্ট চেঞ্জ করুন এবং যত শীঘ্রি পসিবল ডকুমেন্টগুলো ধংস করতে বলুন । সম্ভব হলে কাল সকালের মধ্যেই আমাদের টেম্পোরারী সাইট -৩ ছেড়ে দিতে হবে একেবারে । নইলে বাকিগুলোও ধরা পরে যাবে ! আর আমাকে কাইন্ডলি সাইট- ৫ এর আইটি এক্সপার্টের কোডটা দিন !
-কি বলছেন এসব ! আপনারা করেছেন কি ! দুদিন আগেই রিপোর্ট করা উচিত ছিল ! কিন্তু , এখন তো আমি এখান থেকে নড়তে পারবো না !! ঝামেলা আছে !
-কিন্তু স্যার ! তাহলে , আপনিও বিপদে পড়ে যেতে পারেন !
-সেটা আমি বুঝব , আপনি এই মুহূর্তে এখান থেকে বিদায় হোন ! আর হ্যাঁ কন্টাক্ট গুলো নিয়ে যান
::::::::::::::::::::::তৃতীয় রাত : ২ টা ৫৩::::::::::::::::::::::
ইকবাল সাহেব আজ শুতে যান নি । কেন যেন মনে হচ্ছে আজ ঘুম হবে না ! বাঁধানো ডায়েরিটা নিয়ে বসলেন ।
কিছু একটা মিলছে না ! কেউ একজন বেঈমানী করেছে !
কিন্তু , তিনি তো কোন বেঈমানকে এলাউ করেন নি । সব বাছা বাছা ঝানু লোক ! নইলে কি একের পর এক চালান সাকসেসের সাথে হাইলি সিকিউরড সব রুটে পাচার করে দিতে পারতেন ?
কলিং বেল বাজলো !
কিন্তু ইকবাল সাহেব চেয়ার ছাড়লেন না ! কে হতে পারে ??
কেন যেন তার মনে হচ্ছে আজকে দরজা খোলাটা উচিত হবে না !
বেল বেজে চলেছে ... একবার ... দুইবার ... তিনবার !
আজ তিনি দরজা খুলবেন না । ঠিক করে ফেললেন , যেই আসুক !
কাজের ছেলেটা ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দিতে গেল বোধহয় ! ডাইনিং রুম থেকে তার টেবিলে ধাক্কা খাবার আওয়াজ কানে আসলো !
ইকবাল সাহেব ছেলেটার নাম ধরে ডেকে উঠতে যাচ্ছিলেন ...
কিন্তু তার স্টাডির দরজায় এসে দাঁড়ানো ভারি বুট জোড়ায় চোখ পড়তে থেমে গেলেন , দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা না না তার পেছনে আরো কয়েকজন আছে !
লোকগুলো আগাগোড়া কালো ইউনিফরম পড়া ! সশস্ত্র বাহিনীর লোক এবং রেব !!
-খুব ভালো একটা জায়গা বেছেছিলেন জনাব ! খুজেই পেতাম না আপনাকে !
কিন্তু কপালটা এবার আপনার নেহাতই মন্দ ! ধরা পরে গেলেন ! ইউ আর আন্ডার এরেস্ট সিনর !
-হাহা !
ছোট্ট একচিলতে হাসি ফুটে উঠলো ইকবাল সাহেবের ঠোটের কোনে !
হাসিটা ক্রূড় হাসি ! সামনে হ্যান্ডকাফ হাতে দাঁড়ানো লোকটা যেন কেমন কুচকে গেল !
কিন্তু , ইকবাল সাহেবের মনটা প্রশান্ত একেবারেই !
জীবনে পাপের কোন রাস্তা খালি রাখেন নি ! কিন্তু , এমুহূরতে এমন অদ্ভুত একটা স্বস্তি পাচ্ছেন যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না !
হাজার হোক দুটো ফুলকে তিনি এক করে পৌঁছে দিয়েছেন মুক্তির বাগানে ! কিংবা দুটো রঙিন প্রজাপতি !
ওরা যতোই ফুলে ফুলে মধু খাবে উড়ে উড়ে তার কৃত পাপ আর কালিমা গুলো ধুয়ে মুছে যাবে একে একে ... !
দামী রোলেক্স ঘড়িরটার দিকে তাকালেন ইকবাল সাহেব ...
হুম ! এতোক্ষনে ওরা পৌঁছে গেছে নিরাপদ জায়গায় ... !
আর ভয় নেই ... !!
এবার তিনি নিশ্চিন্তে হ্যান্ডকাফ পড়বেন ... !