অদৃশ্য সত্তারা আজ খুব চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে!এ ওকে বলে তো সে তাকে!!খুব মেজাজ খারাপ হতে থাকে সত্তাদের!!একে অন্যের কথা ছাপিয়ে যেয়ে কেউ ই কাউকে শুনতে পারছেনা!যেন সবাই একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লেগেছে!!কিন্তু তখন দুই সত্তা নিজেদের মাঝে কথোপকথনে নিমগ্ন!!
-আচ্ছা,বলতো আমি যদি অদৃশ্য হয়ে যাই,কি হবে?
--কি আর হবে,তুমি অদৃশ্য হয়ে যাবে!!
-সত্যি অদৃশ্য হয়ে যাব?
--নয়তো কি?থাকতে চাও নাকি?
-না ঠিক ,থাকতে চাইনা!!তবে নাই যে সেটায় কি হয় তা অনুভব করতে চাই!
--হা হা,হিপোক্রেট!!
-হতে পারে!সবাই ই তো কম বেশি হিপোক্রেট
--হুম!তা ঠিক!তা কি চাও তুমি?
-কিছুনা,থাকতে চাই এটা বলবনা,কিন্তু জানতে চাই,আমি যে নাই এটা কার কার মনে থাকে!কার কার খেয়াল হয় যে আমি নাই?
--এটা কি খুব জরুরি?
-নাহ,জরুরি না!কিন্তু কেন জানি জানতে ইচ্ছা করে !এত দিনের যেই মানুষটা খিল খিল করে হাসত,সেই শব্দটা নাই কার কার মনে পরে?
বৃষ্টি হলে যেই মেয়েটা দৌড়ে ছাদে যেয়ে পানিতে পা ভিজিয়ে দুইপাশে দুই হাত তুলে প্রজাপতির মত করে নেচে যেত,সেই পরিচিত বৃষ্টিটা যখন পরে,একটা ছোট মেয়ে যে ভিজছেনা এটা কত জনের মনে পরে?
যেই মেয়েটা দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি এবং একমাত্র যেই আকাশ টাকে হিংসা করত,আর মনে করত-আকাশটা এত সুন্দর কেন?সেই আকাশের দিকে তাকায়ে কতজনের মনে পরবে এই আকাশটা তাদের সাথে আরও একজন তার ছলছল চোঁখে তাকিয়ে দেখত,সে আর নাই?যেই বাতাসে তারা শ্বাস নিচ্ছে, সেখানে সেই পরিচিত একজন অংশীদার কমে গেছে,সেটা কার কার মনে পরবে?
খুব জানতে ইচ্ছা করে
--তোমাকে কেউ মনে করবে এটা এত আশা কর কেন?
-জানিনা কেন!কেন জানি,মরে গেলে কেউ কাঁদবে এই ভাবনাটাও শান্তি দেয়!এটা বোধহয় সংকীর্ণতা!অথবা স্বার্থপরতা!কারো কাছে একটু বেশি প্রাধান্য পাবার লোভ!!
--এটার জন্যই কি তুমি কাউকে অনুভব কর?
-না ,এর জন্য করিনা,যতজনকে অনুভব করি,নিজের জন্যই করি!তাদের কে কিছু দেয়ার জন্য না!বরং তাদের দিয়ে কাউকে দিতে পারি এই অনুভুতি পাওয়ার জন্য!!তাদের কে উজাড় করে নিজের সব দিতে ভাললাগে বলে!!
তাদের এটা বুঝানোর জন্য না যে তাদের ভালবাসি,শুধু ভালবাসতে ভালবাসি বলেই বাসি!!আর কোন কারণে না!কোন প্রাপ্তির আশা করিনা হয়তো,,
অকারণে ভালবাসি এটাই সবচেয়ে বড় কারণ আমার!
কিন্তু এই যে জানতে ইচ্ছা হওয়াটা কি প্রাপ্তির পর্যায়ে পরে?
--খানিকটা!তুমি তাদের ভালবাসবা তোমার নিজের ভালবাসার তাগিদে,তারা তোমাকে মনে করে কি করেনা,মনে করলে কি হবে ,না করলে কি হবে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না!
-কিন্তু আমার যে জানতে ইচ্ছা করে!!আমি অদৃশ্য হলে কয়জন আমার অদৃশ্য হওয়াটা টের পায়,,লোকের ভিড়ে আমি নাই কয়জনের এটা মনে পরে?
--তা করতে পারে,কিন্তু কারও কাছে কিছু প্রত্যাশা করোনা!
জানো তো,যার কাছে প্রত্যাশা করবা সে যদি না করে তা,সে যদি না বুঝে তা সবচেয়ে বেশি কষ্ট টা তুমিই পাবা!!কাছের মানুষের কাছ থেকে কষ্টটা বড় ভয়ানক!তাই প্রত্যাশা না করাই ভাল!!
-তা ঠিক!!প্রতিটা মানুষ দিনের শেষে নিজেকে নিয়েই বাঁচে,নিজের জন্যই!!মাঝে মধ্যে কেন জানি এটা খেয়াল থাকে না!!যাদের কে আমি আমার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ন ভাবি তারা কি সেরকম ই ভাবে?নাহ,হয়তো না!!এবং তাদের এটা ভাবাটা জরুরিও না!বরং তুমি যদি চাও,তাহলে এটাই হয়তো তোমার ভুল!
--হুম........
জানোনা,স্রষ্টা যখন পৃথিবীর সমীকরণ করছিলেন,তখন তিনি একটা অসীম সমীকরণ করে ছিলেন,
ধর,তুমি যদি ক হও,আর তোমার সবচেয়ে প্রথম প্রায়োরিটির মানুষ হয় খ,
তাহলে এক্ষেত্রে
ক>খ>গ...............এভাবেই চলতে থাকে!!!
এখানে গ হচ্ছে খ এর প্রায়োরিটি!!গ এর প্রায়োরিটি ও হয়তো অন্য কেউ!"ক "এর প্রাধান্য দেয়াটা হয়তো "খ"বুঝেনা,বুঝলেও সে আর "ক" কে তার সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়না,সে ছুটে "গ" এর পিছনে!!!এভাবেই কেটে যায়!!
এভাবে কেউ ই আর তার সবচেয়ে ভালবাসার মানুষের সর্বোচ্চ ভালবাসা বোধয় পায়না!আর যারা পায় তাদের বেলায় সমীকরণটা থেমে যায় কিভাবে যেন!!কোন এক অদৃশ্য কারণেই যেন স্হায়িত্ব জিনিসটা পছন্দ নয় প্রকৃতির!!
তার জন্যই সমীকরণ টা চলতে থাকে,না হলে কিন্তু এভাবে আটকেই যেত!!!থেমে যেত!!
-কিন্তু এটাই কি ভালো হত না? তাহলে তো পৃথিবীর সবগুলো মানুষ ভাল থাকত,তাইনা?
(একটু রাগে গজগজ করে)
খারাপ কিছুতো হত না!!
--হয়তো,,হয়তো ভালই হত!কিন্তু তখন কি আর সেই মানুষগুলো জানত যে তারা ভাল আছে?
-মানে কি?মানে ঠিক বুঝলামনা!!
--মানে হচ্ছে,যদি কেউ শুধু হেসে যেত,তাহলে কি সে জানত এটা হাসি?সে ভাবত এটা শুধু মুখটাকে একটু বিস্তৃত করা!শুধুই শারীরিক একটা ক্রিয়া!!
তখন সে ভাবত এটাই!!
হাসি নামটাও আসতনা!
একই ভাবে কান্না!!কেউ যদি সবসময় কাঁদতই সে কি জানত যে এটা বাদেও কিছু আছে!সে ভাবত এটা বুঝি তাঁর চোঁখের দোষ-যে কিছু হলেই শুধু পানি বেরোয়!!!
-হা হা!!তা যা বলেছ!!তুমি বলতে চাচ্ছ দুটার মানে জানবার জন্য দুটোরই উপস্হিতি প্রয়োজন?
--অবশ্যই!না হলে চোঁখ থেকে গড়িয়ে পরা সেই পানিটার পর মুখ বিস্তৃত করার সুখ টা এত বেশি হতনা!!
-হুম!আরে আমরা তো অন্য কথায় চলে গেলাম!!বললে না যে-- আমার অদৃশ্য হওয়া?আমি না থাকলে কেউ কি ভাববে ,কেউ কতটা মনে করবে সেটা জানতে চাওয়াটা?
--সেটা জানতে চাওয়া ঠিক আছে!কিন্তু চাওয়া টা ঠিক না!!
তবে ভালোই হয়েছে এটা কেউ জানতে পারেনা!!
-কেন কেন?
--ওমা!মৃত্যুর পর কেউ তোমাকে মনে করছেনা এটা জানলেও তোমার যেমন কষ্ট হবে,তোমাকে মনে করে কেউ কাঁদছে জানলেও ঠিক ততটাই অসহায় লাগবে,যে তাঁর কান্নাটা তুমি মুছতে পারছোনা!তাঁর কান্না থামিয়ে দেয়ার সে ক্ষমতাও তোমার আর নেই-এটাও কি কম কষ্টের?
(বেশ কিছুক্ষণ নীরব থেকে )
-হুম!!তোমার কথায় এখন তাই মনে হচ্ছে!!ভাগ্যিস আমি জানব না!!
কাছের মানুষগুলো কে দূরে যেতে দেখতে তো আমারও ভালো লাগবেনা!!
যদি সম্পর্ক আর কাছের মানুষদেরও expire date থাকে,সেটা না জানলেই বা দোষ কি!!
পৃথিবীর সবকিছু যে আমার জানতে হবে এমন তো কোন কথা নাই,
কিছু জিনিস না জানা থাকলেই বোধহয় ভাল!!!