গত পরশুই তোমাদের সে পুরোনো বাড়িটা থেকে ঘুরে এসেছি
তোমাদের সে বংশিয় ঐতিহ্য গুলো, ও বাড়ির ইট-পাথরে এখনো ঝোলানো আছে জানো?
শুধু মানুষগুলোই কেমন অকালে চলে গেলে এক এক করে!
ঐ যে ঐ দিককের ঘরটার কথা তোমার মনে পড়ে?
ঐ যে, যেখানে তুমি আমি অঘোরে হারিয়ে যেতাম প্রায়ই
রাতের কালিমায়, দুপুরের মিষ্টি রোদে যেখানে তুমি আড়ি পাততে
যেখানে তুমি গল্পে গল্পে হারিয়ে যেতে মনের অজান্তে
তোমার তো মনে থাকার কথা সেসব, সে জায়গাটার কথা।
হ্যা, ঐ জায়গাটার মায়া আমি এখনো ছাড়তে পারিনি
আর বোধহয় ছাড়তেও পারব না কোনোদিন
আর বোধহয় ভুলতেও পারব না ঐসব গল্প, ঐসব পূর্ণিমার রাতের কথা!
কি করে ভুলে যায় বলো?
ওসবেই যে তুমি বেঁচে আছো আজও, ওসবেই যে তুমি ফিরে পায় বারবার
আমার মাঝে, আমার স্বপ্নচারিতায়।
তোমায় গতকালের একটা ঘটনা বলি শোনো...
মাঝ রাত, আকাশ ভর্তি তারা আর আধ ফালি চাঁদ!
ও দিকে দুটো কুকুরের চিৎকারে জেগে থাকা পথ
প্রহরীর ঢুলু ঢুলু ঘুমে ভরা চোখ, মুখে বাশি
বাশিতে হুইসেল এর মতো শব্দ বেজে উঠছিল মাঝে মাঝে
তাতে বোধহয় সে তার নির্ঘুমতার জানান দিয়ে যাচ্ছিল
আর তার সে নির্ঘুমতায় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে অভয়ে ঘুমোচ্ছিল সবাই
শুধু আমিই জেগে ছিলাম তোমার সাথে, হ্যা হ্যা তোমারই সাথে।
তোমার দেওয়া ডাইরিটা হাতে ধরে পায়চারি করছিলাম অনবরত
কোথাকার কি এক অজুহাতে তোমাকে ছুয়ে দেখতে মন চাইল হঠাৎ
হঠাৎ তোমার কাছাকাছি যাওয়ার আকুতিতে মনের প্রশান্তিগুলো উবে গেল এক নিমেষে
ওতো রাতে কোথায় পেতাম তোমায়? তাই ও বাড়িতে ছুটে গেলাম।
ও বাড়ির ইট-পাথরে যে তোমায় পাওয়া যাবেনা তা জানতাম
তবে তোমার ঘ্রাণটা পাওয়া যেত, তোমার স্পর্শ করা জড় পদার্থগুলো
তোমার পদচিহ্ন, তোমার উপস্থিতি অনুভবে পাওয়া যেত, জানতাম।
আর তাইতো ছুটে যায় বারবার, তোমার টানে।
মৃদু পায়ে তোমার দেওয়া পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে পথে নেমে পড়লাম
হাতে একটা টর্চ লাইট আর কাঁধের ব্যাগে তোমার দেওয়া ডাইরিটা
বিলের পথ ধরে তোমাদের বাড়ির কাছাকাছি হেটে এসে পড়েছিলাম
তখনি বা পায়ের সেন্ডেল এর ফিতে টা গেল ছিড়ে!
জুতো জোড়া হাতে নিয়ে হেটে আসছিলাম
পথিমধ্যে পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে কে যেন নাম ধরে ডেঁকে উঠল আমায়
পেছনে ফিরে তাকালাম, কাউকে দেখতে পেলাম না!
ভাবলাম তুমি হইতো নেমে এসেছো লুকোচুরি খেলায়!
মনে মনে হেঁসে ফেললাম, দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল ঠোঠ বেয়ে বুকে
বুকে হাত দিলাম, হাত দিতেই চোখ টা বুজে এলো
চোখটা বন্ধ করতেই তোমাকে অনুভব করলাম
এইতো তুমি, ঠিক যেন এখানে, যেন বুকের মধ্যখানটাই লেপ্টে আছো
তোমার আলতো হাতের মৃদু আলিঙ্গনে যেন আমি সেদিনগুলোতে ফিরে গেলাম
আবারও তোমার সাথে কয়েক পক্ষ দাপাদাপি খেলে নিলাম চোখ বুজে।
তারপর চোখটা মেললাম।
কোথাও তুম নেই, শুধু তোমার ঘ্রাণটা যেন ছড়ানো ছেটানো চারদিকে
আপসোস, সে ঘ্রাণে তোমাকে শুধু অনুভব করা যায় কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায় না।
হাটতে হাটতে তোমাদের বাড়ির দরজাটাই এসে দাড়ালাম শেষে
দরজার সিটকেনিটা মাকড়সার জালে ঢাকা পড়েছে
যেন সেখানে কোনো তালাই নেই, ঠিক যেন আমার অভিমানের মতো
আমার আক্ষেপের মতো, ব্যাগে রাখা ঐ ডাইরিটার মতো
যেন সেসবে কিছু লেখাই নেই, কোনো দাঁগই নেই
চাইলেই যেন যে কেউ ঢুকে যেতে পারে
অথেচ কেউ পারে না, তুমি ছাড়া।
পকেটের রুমালে সে জাল সরিয়ে ব্যাগে রাখা চাবিটা দিয়ে দরজাটা খুললাম
খুলতেই এক পশলা উষ্ণ বাতাস আমাকে গ্রাস করল সহসায়
সহসায় যেন ঘর ভর্তি আক্ষেপ আর অভিমান গুলো আমাকে অভিযোগ জানাতে শুরু করল
আমার যেন তাদের সে অভিমানে সারা দেওয়া চাইই চাই!
অথেচ আমি যে নিজেই অভিমানি হয়ে আছি এতোকাল ধরে
আমার অভিমানের কি তবে কোনো মূল্য পাবো না কোনোকালে?
ভাবতেই চোখটা আবারো ভারি হয়ে এলো।
অতঃপর তাদের সে অভিমানে সারা দিলাম
সারা দিতে দিতে রাত পোহায়ে সকাল হয়ে গেল
আমিও দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ির পথে
আবারো তোমাকে তুলে রেখে বুকে এটে নিলাম
সাথে থাকা ডাইরিটার আরেকটা লেখায়।
তুমি নেই তবুও তুমি আছো
হৃদয়ের বুক পকেটে, অমলিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:০৬