'গান্ধারীর আবেদন'য়ে দুর্যোধন বলেছে,'সুখ চাহি নাই মহারাজ/জয়!জয় চেয়েছিনু,জয়ী আমি আজ।/ক্ষুদ্র সুখে ভরে নাকো ক্ষত্রিয়ের ক্ষুদা'।কিন্তু এই খিদেটা কারো ছিল আসলে?শুধুই দুর্যোধনের?যুধিষ্ঠিরের ছিল না খিদে?অর্জুনের ছিল না খিদে?দ্রৌপদীর ছিল না খিদে?সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথের জয়ের খিদে ছিল না?
রাক্ষুসে খিদেটা বুঝি রবীন্দ্রনাথেরই সবচে বেশি ছিল।তিনি তো কুমু কে মুক্তি দিতে পারতেন।লড়াইয়ের পথটা খোলা রাখতে পারতেন। রাখেন নি।তিনি সমাজের আয়না ছিলেন,আর সময়ের আয়নাও।সে কারণেই কি জিতিয়ে দিয়েছিলেন সেই সময়ের পুরুষতান্ত্রিক আর পিতৃতান্ত্রিকতা কে?সে কারণেই কি হেরে গেল বিপ্রদাস?বিপ্রদাসের আদরের বোন কুমু?অন্যদিকে বিনোদিনী কি জিতেছিলেন?আসলেই?সত্যিই কি জিতেছিল বিনোদিনী ?এমন জয় কি বিনোদিনী সত্যিই চেয়েছিল?
রবীন্দ্রনাথ যতোটা সময়ের,যতোটা স্থানের,যতোটা সমাজের তিনি ততোটা কি নারীর?ততোটা নারী কি তিনি ছিলেন?কেন পোস্টমাস্টার, রতন কে নিয়ে ফিরলেন না?সুভাকে বা কেন মরতে হলো?প্রতাপ কেন তাকে সঙ্গী করলো না?চন্দরা ই বা কেন এতোটা অভিমান করলো ছিদামের উপর?নাকি অভিমানটা ছিল পুরো ব্যবস্থাটার উপর।সেই ব্যবস্থার উপর,যেই ব্যবস্থাটা বেটা ছেলেরা নিজের মর্জি মতন চালায়।অপু কেন নির্জীব রইল?যতীন লাল ই বা কেন পালিয়ে গেল?রবীন্দ্রনাথ কেন সবাই কে মহামায়া বানালেন না?কেন গিরিবালা আর মৃণাল বানালেন না?
তিনি যুদ্ধটা দিলেন,লড়াই টা দিলেন।কিন্তু জয়টা নয়।মুক্তিটা নয়।কেন?তার কি সেই শক্তি ছিল না?অব্যশই রবীন্দ্রনাথের সে শক্তি ছিল।তার সার্মথ্য ছিল সমাজের সাথে লড়াইয়ের।এবং সেই লড়াই তে তিনিই জিততেন।
কিন্তু তিনি লড়েন নি, কারণ তিনি চেয়েছিলেন মেয়েমানুষেরা নিজেদের লড়াইটা নিজেরাই লড়ুক।নিজের ইচ্ছেতে তারা প্রকাশ হোক।ফুল ফুটাক।গন্ধ ছড়াক।চারুকে কেন অপেক্ষা করতে হবে ভূপতির 'চলো,চারু,আমার সঙ্গেই চলো।' বলার?তার আগেই চারুলতা কেন সাহস পেলো না ভূপতিকে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে কথা বলার?কারণ রবীন্দ্রনাথ না ছিল অমল,না ভূপতি,না চারুলতা।
তবে চারুলতার প্রতি রবীন্দ্রনাথের পক্ষপাতিতা ছিল,ছিল ভালোবাসা।আর একধরনের সহমর্মিতা।সে কারণেই তিনি চারুলতাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন ডিসিশন নেয়ার।শূন্যতা আর বিরহ টা ছিল চারুলতার একান্তই নিজস্ব সিদ্ধান্ত।এখানে ভূপতির বলার কিছু ছিল না,বলার থাকতে পারে না।এখানে রবীন্দ্রনাথেরও বলার কিছু থাকতে পারে না।জীবনটা চারুলতার।আর লড়াইটাও।
পুনশ্চ-রক্ত করবীতে অধ্যাপক নন্দিনী বলছেন,'সুন্দরী,তুমি যে-সোনা সে তো ধুলোর নয়, সে-যে আলোর।/দরকারের বাঁধনে তাকে কে বাঁধবে।'