somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস: নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন-১০

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১০)
ঐশী আনন্দে নেচে ওঠে- এই তো সোনার ছেলের মতো কথা। তারপর শ্রাবণের হাত ধরে টান দেয়। শ্রাবণ বাধা দিয়ে বলে- দাঁড়াও, একটু পরিপাটি হয়ে পোষাক বদলে নিই।

-বেশ, তাই করুন!

ঐশী অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। শ্রাবণ ঐশীর দুষ্টূমি বুঝতে পেরে মনে মনে হাসে। হাতের কাছের পোষাক নিয়ে বদল করতে করতে বলে- তুমি একটা পাগলী।

-আপনি একটা পাগল।

-আমার পাগলের কী দেখলে?

-আমার পাগলীর কী দেখলেন?

দুজনেই থেমে থাকে কিছুক্ষণ। ঐশী এবার মুখ খোলে- কই, আপনার হলো?

-হ্যাঁ, হলো।

ঐশী শ্রাবণের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।

শ্রাবণ তখনও প্যান্টের চেইন আটকাতে ব্যস্ত। ঐশী এক লাফে আবারও পেছন ফেরে।

চলো।– শ্রাবণ ঐশীর পিঠে হাত রেখে এগোয়। তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে শ্রাবণ প্রশ্ন ছোঁড়ে- আমাকে সাথে করে তোমার বেড়াতে ইচ্ছে হয় ক্যানো?

ঐশী মায়াবি চোখে শ্রাবণের দিকে তাকায়। বলে- ভালো লাগে, তাই।

-যদি কোনোদিন কোনো কারণে আর ভালো না লাগে?

-অমন করে বলবেন না। ভালো লাগবে না কেন?

-বলা তো যায় না! কত কারণ থাকতে পারে!

দ্বীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ঐশী- ভগবান যেন তা না করেন।

একটু পর ঐশী স্বাভাবিক হয়ে বলে- আমাদের একটা ছবি তুললে কেমন হয়? ধরুন একটা স্মৃতি রইলো।

-এভাবে ছবি তোলা ঠিক হবে না।

-ক্যানো? আমার সাথে ছবি তুলতে আপনার আপত্তি?

না, তোমার সাথে নয়, তোমার এ পোশাকের সাথে।

কথায় কথায় রাস্তায় এসে পড়ে ওরা। রিকশার অপেক্ষায় দাঁড়ায়। ঐশী শ্রাবণের কথায় বিব্রতবোধ করে। তবু প্রশ্ন রাখে- এ পোষাকে মানে?

-মানে, এই যে জিনস-এর স্কিন প্যান্ট, স্কিন গেঞ্জি—এই আর কী।

-এ পোষাক আপনার পছন্দ না?

-পছন্দ হবে না ক্যানো? তবে—

-তবে কী?

-ঐ যে দ্যাখো-- শ্রাবণ অদূরে একটা পাগলী মেয়ের দিকে ঐশীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে- ঐ পাগলী মেয়েটিকে দ্যাখো। একটা সালোয়ারের ওপর ঢোলা একটা গেঞ্জি পড়েছে। তবু গুঁটি ধরা বুকটিকে দু’হাতের ভাজে আড়াল করে রেখেছে। ওটাই ওর ভূষণ। ও যে নারী! চলাফেরায়, এমনকি ঘুমের মধ্যেও ও হাতদুটি অমনই থাকবে। এজন্যই মেয়েদের মাঝে ওড়নার প্রচলন। আমি মেয়ে হলে তোমার এ অবস্থায় আমার ওখানটিতে সুড়সুড় করতো। সুড়সুড়ি ভাঙলে যে কুমারিত্ব ঘুচে যায়!

ঐশী ভীষণ লজ্জা পেলো। দুঃখও পেলো। যার জন্যে এ পোষাক, সে কিনা একে ঘৃণা করছে! তবু পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিতর্কে নামে-- আমার বয়েসী অনেক মেয়েই তো আজকাল এ পোষাক পড়ছে। তাছাড়া এসব তো অভিভাবকদের সামনেই সবাই পড়ছে। তারাই তো কিনে দিচ্ছেন।

-তা দিক। সেটা তাঁদের রুচি। কিন্তু আমরা পাড়াগাঁয়ের ছেলে। আমাদের ওদিকে এসব অশ্লীলতা।

-ঠিক আছে। আপনি পছন্দ না করলে, এসব আমি আর পরবো না। যদিও এ পোশাকে অনেকেই আমাকে পছন্দ করে।

-আমিও এ পোশাকে পছন্দ করি। ঘুড়ে বেড়াতে, ঠাট্টা-তামাশায় সময় কাটাতে। কিন্তু যার সাথে আমার ছবি থাকবে, মুরুব্বিরা দেখবে এবং যাকে... না থাক।

-থামলেন কেন? বলুন!

-আমি চাই না তোমার দিকে কেউ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাক। তাহলে আমার কষ্ট লাগে। তুমি তো এমনিতেই অপরূপা।

ঐশী এতক্ষণে শ্রাবণের কথার অর্থ বুঝতে পেরে কিছুটা হালকা হলো। শ্রাবণ ওকে কতখানি ভালোবাসে তা আর বুঝতে কষ্ট হলো না ওর। ওর জন্য শ্রাবণের যেন কোথায় একটু চিনচিনে ব্যাথার উপদ্রব হয়, তা বুঝতে পেরে পুলকিত হয় ঐশী। তারপর অনুনয়ের সুরে বলে-- আমি তো এখনও ছোট। আজকে নাহয় এ পোশাকেই একটা ছবি তুলি! প্লিজ, আপত্তি করবেন না।

শ্রাবণ কিছু বলে না। তবে মনে মনে কিন্তু ভালোই লাগছে ওর, এ পোশাকে একটা মেয়ের সাথে ছবি তুলতে। ছবিটা সেরকম কাউকে না দেখালেই চলবে। এটা নাহয় একটা স্মৃতি হয়েই থাকবে!

দুজনে হাঁটতে হাঁটতে স্টুডিওতে আসে। ভেতরে ঢুকে একটা বিদেশী দৃশ্যের সামনে বসে অন্তরঙ্গ হয়ে ছবি তোলে ওরা। ঐশীর শরীরের কুমারী-উষ্ণতা এই প্রথম অনুভব করলো শ্রাবণ-- প্রাকৃতিক নিয়মে বয়সের দোষে যা হবার, তাই হলো!
(চলবে)

উপন্যাসঃ নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন
লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×