বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল ( Chalan Beel ) । বৃহৎ বিলটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, এবং পাবনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বিস্তৃত অংশ জুড়ে যে জলভূমি, বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে দেখা যায় সেটাই বিখ্যাত চলনবিল। শুকনা মৌসুমে এসব বিলে জল থাকে না। তখন চাষাবাদ চলে বিলের জমিনে। তবে বর্ষায় কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ যৌবনা হয়ে রূপের পসরা সাজিয়ে বসে। ভরা বর্ষায় সাতচল্লিশটি নদী ও অন্যান্য জলপথ চলনবিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলনবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
□ গঠন শৈলী:
চলন বিলের গঠন ঐতিহাসিকভাবেই আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্রাই নদী ছিল চলন বিলের প্রধান যোগান দানকারী প্রণালী যা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার উত্তরাংশ ও দিনাজপুর এলাকার জল নিষ্কাশন করত। বড়াল চলন বিল থেকে জল নির্গম পথ হিসেবে কাজ করে এবং বিলের পানি বহন করে যমুনা নদীতে ফেলে। চলন বিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- করতোয়া, আত্রাই, গুড়, বড়াল, মরা বড়াল, তুলসী, ভাদাই, চিকনাই, বরোনজা, তেলকুপি ইত্যাদি।
□ আয়তন
সময়ের আবর্তনে ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়েই চলনবিলের সৃষ্টি। গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে। চলনবিলের আয়তন ৫০০ বর্গমাইল বা প্রায় ১৪২৪ বর্গকিলোমিটার। আবার কোন জরিপ মতে চলনবিলের আয়তন ৮০০ বর্গমাইল বা প্রায় ২০৭২ কিলোমিটার। বর্তমানে চলনবিল অনেকখানি হ্রাস পেয়ে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১১৫০ বর্গকিলেমিটারে।
□ বিলসমূহ
আসলে চলনবিল হল অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। বর্ষায় এই বিলগুলোতে জলপ্রবাহ বেড়ে একসঙ্গে বিশাল এক বিলের সৃষ্টি হয়। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ, পাবনা জেলার চাটমোহর এবং নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা জুড়ে এ বিলের বিস্তৃতি। যতদুর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। থৈ থৈ পানি দেখার এই এক অন্যরকম অপূর্ব দৃর্শ্য !
বড় আকারের বিলগুলির বেশিরভাগই পাবনা জেলায় অবস্থিত, যেমন- গজনা বিল, বড়বিল, সোনাপাতিলা বিল, ঘুঘুদহ, চিরল বিল এবং গুরকা বিল। গজনা বিল দুলাই-এর দক্ষিণে ১২৩ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। বড়বিলের আয়তন ৩১ বর্গ কিমি। প্রায় ৩৫ বর্গ কিমি আয়তনের সোনাপাতিলা বিল পাবনা জেলার উত্তরাংশ জুড়ে অবস্থিত। চাটমোহর উপজেলায় কুরলিয়া ও দিক্ষিবিল দুটি যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। চিরল ও গুরকা বিল- উভয়েরই আয়তন ৮ বর্গ কিমি এবং ঘুঘুদহ ৪ বর্গ কিমি।
□ নাটোরের চলনবিল
চলনবিলের সবচেয়ে বড় অংশ পড়েছে নাটোরে। জেলার সিংড়া উপজেলায় রয়েছে চলনবিলের বড় একটি অংশ। এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের বুকেই।
সড়কের দুপাশে এ সময়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু অথৈ জলরাশি। এ পথে চলতে চলতে সড়কের দুপাশে চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় দুচোখ ভরে। নিজস্ব গাড়িতে গেলে ইচ্ছামতো থেমে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। এছাড়া চলনবিলের আকর্ষণীয় একটি বিল ‘হাইতি বিল’। এটি নলডাঙ্গা উপজেলায়। জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে এ বিলের অবস্থান।
হাইতিকে দেশের সবচেয়ে গভীর বিল বলা হয়। প্রায় ১২ মিটার গভীর এই বিলে সারাবছরই পানি থাকে। বর্ষায় পানির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক বেশি।
□ যাতায়াত, থাকা ও খরচাপাতি :
ঢাকার গাবতলি থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, ন্যাশনাল পরিবহন প্রভৃতি বাসে নাটোর যাওয়া যায়। এছাড়া রাজশাহীগামী যে কোনো বাসেই নাটোর আসা সম্ভব। ভাড়া ৩শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা। নাটোরের চলনবিল দেখতে গেলে থাকতে হবে নাটোর জেলা সদরে। শহরে থাকার জন্য আছে চকরামপুরে হোটেল ও ভিআইপি হোটেল এবং মাদ্রাসা রোডের হোটেল উত্তরা ও হোটেল মিল্লাত। ভাড়া তিনশো’ টাকা থেকে সাতশো’ টাকা।
Ω সতর্কতা :
যারা সাঁতার কম জানেন কিংবা একদম জানেন না, তারা চলনবিলে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট কিংবা অন্য কোন জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা সাথে নিবেন।। নৌকায় ভ্রমণকালে হৈ চৈ, লাফালাফি করবেন না। এতে করে নৌকা তার ভারসাম্য হারিয়ে পানিতে ডুবে যেতে পারে এবং আপনার আনন্দদায়ক ভ্রমনটি অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হৃদয়বিদারক হতে পারে। ঝড়ো বাতাস উঠলে চলনবিলের পানিতে বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। বিলের মধ্যে পানির গভীরতা না বুঝে যেখানে সেখানে নামতে যাবেন না। সান গ্লাস, টুপি ও সাথে শখের ক্যামেরা নিয়ে যেতে ভুল করবেন না।
রাজশাহী ভ্রমণের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান সমুহঃ
এশিয়ার বৃহত্তম কানসাট আম বাজার
কারুকাজময় পুঠিয়ার প্রাচীন গোবিন্দ মন্দির
সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন
পতিসর রবীন্দ্র কুঠি বাড়ী
কবি গুরুর নাগর নদী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস (রাবি)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১১