দাড়া=আত্মতত্ত্ব
যে জন সুক্ষধর্ম করেছে সার। তার সাথে পাল্লা খাটে কার।
সে হিংসানিন্দা তেজ্য করে, হয়েছে সে পরাৎপর ॥
যে করে সুক্ষ্ম ধর্ম, সে জানে কাজের মর্ম
নাইকো তার ধর্মাধর্ম, সুক্ষ্মজ্ঞানে করে বিচার ॥
সে ধর্মে নাইকো বিভেদ, শুধু আছে মর্ম অন্তর্ভেদ
নাই কোন ভেদাভেদ, কেবল একমনে করে নেহার ॥
সে ধর্মে এমনি বিচার, নিজ দোষ খোঁজে বারবার
লালন কয় হয় যেন মোর, সিরাজ সার চরণ সার ॥
শব্দার্থ: সুক্ষ্মধর্ম - মানুষ সর্ব সার মত। পাল্লা - বাজী। হিংসানিন্দা - তমঃগুণ। তেজ্য - ত্যাগ। পরাৎপর - মরমেশ্বর, সর্বশ্রেষ্ট। বিভেদ - ভিন্নভেদ। অন্তর্ভেদ - অন্তরের বিষয় অবগত হওয়া। নেহার - অবলোকন। নিজ দোষ - আপন ত্রুটি। চরণ সার - পদ সারাৎসার।
ভাবার্থ: এই পদটি “আত্মতত্ত্ব বা আপ্ততত্ত্ব” দাড়ার আওতাভুক্ত। আত্মার গতি-প্রকৃতি পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করা বা অবগত হওয়াই আপ্ত বা নিজ তত্ত্ব। আত্মানাং বিদ্ধি (আত্মায় ব্রহ্মা) আত্মজ্ঞানের অর্থই হচ্ছে ব্রহ্মজ্ঞানের সূচনা। নিজাত্মায় পরমাত্মার রূপ দর্শন প্রয়াসই ফকিরদের মূল সাধনা। বহির্মুখীন বিক্ষিপ্ত মনকে সাধন ক্ষমতা বলে অন্তর্মুখীন করাটাই ফকিরীতত্ত্ব বা সাধুতত্ত্ব। এখানে বলা হচ্ছে যে, যে ব্যক্তি মানুষকে ভজনা করাকে সার কর্ম বলে মেনে নিয়েছে, তার সঙ্গে কারো তুলনা করা চলে না। সে সংসারের যাবতীয় হিংসা-নিন্দা জলাঞ্জনী দিয়ে অধর সাঁই‘র কৃপাদৃষ্টি লাভের আশায় গুরুর নির্দেশনাবলী অন্তরে ধারণ করে এক ধেয়ানে বসে আছে। “মানবই কেবলং” বৈষ্ণবের এই তত্ত্ববাক্যটিও সাধুতত্ত্ব বা সুক্ষ্মধর্মের সার কথা বলে মান্য করা হয়ে থাকে। নিজের দোঝ-ত্রুটি খুঁজে বের, করে তার সংশোধন করাও এই ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পরিশেষে মহাত্মা লালন ফকির বলছেন যে, শেষের দিনে ঐ চরণ দুটিই যেন মম জীবনের সার কর্ম হয়।
(নিয়ামত মাষ্টারের ১১০৯ টি লালনগীতির ভাবার্থ থেকে সংকলিত)
বিঃদ্রঃ প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল অথবা বুধবারে লেখাগুলো পডুন এবং দোষ-ত্রুটিগুলি সমালোচনা করুন লেখাগুলোর উন্নয়ন কল্পে।
আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।