দাড়া=ভাব-ভক্তি
সে ভাব সবাই কি জানে।
যে ভাবে শ্যাম আছে বাঁধা, গোপীকার সনে ॥
গোপী প্রেম জানে যারা, শুদ্ধ রসের রসিক তারা
পাপ-পূণ্যের জ্ঞান থাকেনা, কৃষ্ণ দরশনে ॥
গোপী অনুগত যারা, ব্রজের সে ভাব জানে তারা
নিহেতু ভাব অধর ধরা, গোপীকা সনে ॥
টলে জীব অটলে ঈশ্বর, জানলে হয় রসিক নাগর
লালন কয় সাধক বিভোর, রস ভিয়ানে ॥
শব্দার্থ: শ্যাম = শ্রীকৃষ্ণ। গোপীকা = গোপের ললনাগণ। শুদ্ধরস = অটল ও নিষিক্ত রস (গু,ধ,জা)। ভ্রমর = মধুকর। দরশনে = দেখলে। গোপী অনুগত = গোপীকার বাধ্য যে। ব্রজের ভাব = ব্রজলীলার ভাব। নিহেতু ভাব = হেতুশুন্য বা রতি নিরোধি ভাব। অধর ধরা = অধর চাঁদকে আয়ত্ব করা। গোপীদের সনে = গোপীকার ভাব পদ্ধতিতে। টলে জীব = জীবের রতিস্খলন হয়। অটলে ঈশ্বর = সাঁই‘র টলাটল নাই। জানলে হয় রসিক নাগর = টলাটল রপ্ত করে সুটল হলে রসিক হওয়া যায়। রসভিয়ান = রসের তাক জানা।
ভাবার্থ: এই পদটি “ভাব-ভক্তি” দাড়ার অন্তর্গত। ভাব হচ্ছে অন্তরের নির্মল অভিব্যক্তি। সত্ত্বঃগুণ দ্বারা আত্মশুদ্ধি হলে অন্তরটি সুভাবের উপযুক্ত হয় এবং জাগতিক চিন্তা-ভাবনা হতে অন্তরকে বিচ্ছিন্ন করে সাঁই‘র চিন্তা ভাবনার নিমগ্ন করে এবং এই নিমগ্নতার নামই একান্ত ভক্তি। এখানে বলা হচ্ছে যে, ব্রজগোপীগণ যে ভাবে বা রসের আশ্বাদনে শ্রীকৃষ্ণকে বেঁধে রেখেছিল তা অন্যে জানে না। গোপী ভাবের ভাবুকগণ টলাটল ছাড়িয়ে সুটল হয়ে ভক্তিরসের খেলা করে। যে গোপীভাব জানে সে কৃষ্ণময় হয়ে যায়। তাকে পেলে গোপীগণ কৃষ্ণপ্রাপ্তীর আশ্বাদ মিটিয়ে নেয়। তখন তাদের পাপ পূণ্যের জ্ঞান থাকে না। কৃষ্ণ প্রাপ্তির সব থেকে সহজ ভাব হচ্ছে, গোপী ভাব। গোপীভাব হচ্ছে নিহেতু ভাব। অধররূপী সাঁইকে অটল সাধকই সহজেই বাঁধতে পারে। জীব টলে যায় কিন্তু ঈশ্বর অটল। মানুষ যখন অটল হয়ে যায় তখন সে ঈশ্বরের অংশ হয়ে পড়ে। তাকেই কেবল রসিক বলা যায়।
পরিশেষে মহাত্মা লালন ফকির বলছেন যে, রসোসিক্ত রসিক জনই কেবল রসভিয়ানে মগ্ন থাকে এবং রসের ভিয়ান তথা তাক জানে।
(নিয়ামত মাষ্টারের ১১০৯ টি লালনগীতির ভাবার্থ থেকে সংকলিত)