বাঙ্গালি জাতির মত এত সহনশীল জাতি আর আছে বলিয়া আমি মনে করি না। ইহারা প্রতিনিয়ত নানাবিধ অত্যাচার সহ্য করিয়া, দৈনন্দিন ভোগান্তি মানিয়া নিয়া, অধিকারবঞ্ছিত হইয়াও কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাইয়া থাকে না।
দ্রব্যমূল্য হু হু করিয়া বাড়িয়া চলিলেও ইহারা বরঞ্চ কম খাইয়া থাকিবে তবু কিছুই বলিবে না, ভাঙ্গা রাস্তা পার হইতে গিয়ে শরীর ব্যাথা হইলে উহ শব্দ করিয়াই ক্ষান্ত যাইবে, রাস্তায় পানি উঠিলে কাপড় তুলিয়া কাকভেজা হইয়া অফিসে গিয়া একটু বিরক্তি প্রকাশ করিয়াই কষ্ট ভুলিয়া যাইবে, যানজট তো দৈনন্দিন জীবনের অংশ হইয়া উঠিয়াছে, যেখানে যেখানে ঘুষ/চাঁদা দেয়া দরকার দিয়া নিজ কর্ম উদ্ধার করিতে পারিলেই খুশি, ছিনতাইকারী ধরিলে উন্মুক্তহস্তে সব দিয়া আসিবে পুলিশে রিপোর্ট পর্যন্ত করিবে না।
রাষ্ট্র চুরি হইয়া গেলেও ইহারা থাকে নির্বিকার, রাষ্ট্রের কাজে অনিয়ম হইলেও চুপ, সরকার কতৃক রাষ্ট্রের কারো উপর জুলুমেও চুপ, অধিকার বঞ্চিত করিলেও চুপ, ভোট দিতে না দিলেও মন খারাপ করে ফিরে আসিবে তারপরেও চুপ। বাঙ্গালির সহনশীলতার জন্য আসলেই শান্তিতে নোবেল দেয়া দরকার। ইহাদের মত শান্তিপ্রিয় জাতি আর কে আছে?
অথচ অন্যান্য দেশের সরকার ভয়ে ভয়ে কাজ করিতে হয়। পাছে জনগণ না অসন্তুষ্ট হইয়া খেপিয়া যায়। এইতো বেশ কিছুদিন থেকে ফ্রান্সে চলিতেছে ইয়েলো ভেস্ট প্রোটেস্ট। তেলের দাম বাড়া নিয়া এই আন্দোলন দুই মাসেরও বেশী হইয়া গেলো এখনো রাস্তা থেকে উঠাইতে পারিল না। এমন আন্দোলন আরো দেখিয়াছি। এমনো দেখিয়াছি যে সরকার একটা নতুন আইন বা বাজেট করিবার পূর্বে ভোটের ব্যবস্থা করিয়া থাকে। ইহাতে জনগণের পছন্দে অপছন্দের গুরুত্ব দেয়া হইয়া থাকে, যাহাতে জনগণ পরবর্তীতে খেপিয়া না যায়।
আমরা অনেক সময় বড় আন্দোলনের জন্য দিবা স্বপ্ন দেখিয়া থাকি। যাহারা নিজের অধিকার নিয়া কথা বলিতে চাহে না, তাহারা কেমনে করিবে বড় আন্দোলন। ক্ষমতার মসনদে যাহারা বসিয়া, তাহারা আমাদিগের মনোজগণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছে। তাহারা ভালো করিয়াই জানে যে, তাহারা যাহা কিছুই করিয়া থাকুকনা কেনো মানুষ কিছুই বলিবে না, করিবেও না। দু চারিজনের দু একটি প্রতিবাদ তাহাদের কিছু যাইবে আসিবে না। দু চারজনকে দমন করিতে যে তাহাদের বেগ পাইতে হইবে না, তা তাহারা ভালো করিয়াই জানে।
সুতরাং এমন সহনশীল জাতিকে শাসন করিবার স্বপ্ন কেই বা হাতছাড়া করিতে চাহে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৯