ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় আমাদের বাংলা কিংবা সমাজ বইয়ে পর্যটক ভাসকো দা গামার একটা ছবি ছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীর পর্তুগীজ পোশাকে ভাসকো দা গামা বেশ পোজ মেরে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবিটা দেখে আমার বন্ধু মাহতাব একটা ছড়া বানিয়ে ফেলল। "ভাসকো দা গামা / ওয়াজ মাই মামা / হি হ্যাড এ ডিসকো জামা"। লোকটা ডিসকো জামা পরুক আর যাই পরুক তার ভ্রমণের নেশা ছিল বোঝা যায়। শুধুমাত্র মশলার খোঁজে নিজের জীবন বিপন্ন করে অজানা পথে কেউ পাড়ি দেবে এটা আমার ঠিক বিশ্বাস হয়না। ইবন্ বতুতা, জেমস কুক, ক্রিস্তোফার কোলাম্বাস, মারকো পোলো, জন ক্যাবোট সহ আরো কত কত মানুষ কিসের টানে যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ত সেটা বোঝা খুব মুশকিল। তবে টান যে একটা থাকে সেটা বোঝা যায়। মাধ্যাকর্ষণ টানের মতই এটা শক্তিশালী। কেবল নীচের দিকে না হয়ে এই টানটা হয় পৃথিবীর সারফেস বরাবর। ফিজিক্সে সারফেস টেনশন আমরা সবাই পড়েছি। এটাও কিছুটা সেরকম।
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া আমি অল্প কিছু জায়গাতেই ঘুরেছি। তাতেই বেশ বুঝতে পেরেছি যে ঘোরার নেশা আর ঘোড়ার নেশা আসলে একই। দুটোই বেশ ভাল খরচের ব্যাপার। ঘোরাঘুরিতে যে পরমানন্দ পাওয়া যায় তাতে খরচের ব্যাপারটা কিছুটা পুষিয়ে যায়। কিন্তু কেউ যদি ভেবে থাকে আনন্দই ভ্রমণের একমাত্র লব্ধ অর্জন সেটা সম্পূর্ণ ভুল। বেড়াতে বের হয়ে উদ্ভট, উদ্ভটতর এবং উদ্ভটতম তিন ধরণের সমস্যারই উদ্ভব হয়। বিশেষ করে আমি ঘুরতে গেলে তো কথাই নেই। আমি নিশ্চিত এটা সবারই হয়। কেউ হয়ত পাত্তা দেয়। আমি দিইনা। তবে মাঝে মাঝে ব্যাপারগুলো হজম করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।
২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাস। জীবনে প্রথম দিল্লী যাচ্ছি কোলকাতা থেকে ট্রেনে। চমৎকার ট্রেন। এক বাঙালী পরিবার বসেছে আমার আর বহ্নির উলটো দিকে। ট্রেনের দু'দিকের দেয়ালে তিনটি করে মোট ছয়টা লম্বা সীট ছয়জনের জন্য। আমি আর বহ্নি দুই দেয়ালে দুটো মাঝের সীট পেয়েছি। যদিও অন্য যাত্রী নেই বলে নীচের একটা সীটেই আপাতত ভাগাভাগি করে বসে আছি আমরা। উলটো দিকের বাঙালী ভদ্রমহিলা তাঁর মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছেন দিল্লী। দিল্লীতে আমরা কোন হোটেল বুক করিনি। তাদের কাছ থেকেই কথায় কথায় জানতে পারলাম দিল্লীর পাহাড়গঞ্জ নামের একটা জায়গায় অনেক হোটেল আছে। দিল্লী স্টেশন থেকে নেমেই পাহাড়গঞ্জ পড়বে। সেখানেই কোন একটা হোটেলে আমরা থাকতে পারি। ট্রেন চলছে বেশ সুন্দর ভাবে। এমন সময় টিকেট চেকার এসে আমাদের টিকেট চেক করে বলল, "আপকো আপগ্রেড হো গিয়া"। আপগ্রেড হো গিয়া? মানে কি? আমি হিন্দিতে শেয়ালের স্ট্যান্ডার্ডে কথা বলতে পারি। মানে হল হুক্কা হুয়া এর জবাবে বড় জোর ক্যায়া হুয়া বলতে পারি। এর বেশী বিদ্যা আমার নেই। আমার সহযাত্রী মহিলা টিকেট চেকারের সাথে কথা বলে জানালেন যে আমাদের অন্য একটা কম্পার্টমেন্টে টু-টিয়ার সীট দেয়া হয়েছে। আমরা এখন যেটাতে আছি সেটা থ্রী-টিয়ার কামরা। টু-টিয়ার কামরায় চারজন যাত্রী থাকে, এর চেয়ে বেটার এবং আরো আরামদায়ক। কোন কারণ ছাড়া কেন আমাদের আপগ্রেড হয়ে গেল কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু চেকারের কথার উপর কথা বলার সাহস হলনা। গেলাম তার পিছে পিছে। গিয়ে দেখি নীচের দুই দেয়ালের দুই সীট দখল করে আছে এক বয়স্ক শিখ পরিবার। আমাদের সীট উপরে দুই দেয়ালে। কি আর করা, উঠলাম উপরে। শিখ মহিলা বেশ মিশুক। তাঁরা স্বামী স্ত্রী দুজন যাচ্ছেন দিল্লী। উপর থেকে নীচে কথা চালানো বেশ ঝামেলা। তারপরও মহিলা আমাদের অনেক কিছু টুকটাক জিজ্ঞেস করলেন। কোথা থেকে এসেছি। কোথায় যাব। কি করি এসব আরকি। আমি আমার শেয়ালের স্ট্যান্ডার্ডে তার সাথে মোটামুটি চালিয়ে গেলাম। আটকে গেলে ইংরেজীতে বলছিলাম। শিখ ভদ্রলোক এক মনে পেপার পড়ছিলেন। তেমন কথা টথা বলছিলেন না। হাওড়া স্টেশনে ট্রেনে ওঠার আগে দেখি এক হকার ব্র্যাড-শ বিক্রি করছে। ট্রেন তখন প্রায় ছেড়ে দেবে দেবে। আমি দৌড়ে গিয়ে একটা কিনে ফেলি। ফেলুদাও ব্র্যাড-শ পড়ত ট্রেনে উঠে। এ জিনিষ যে এখনও কিনতে পাওয়া যায় সেটা ভাবিনি। সেটাই এখন ঘাটাচ্ছি বসে বসে। বেশ মজার জিনিশ এই ব্র্যাড-শ। ইন্ডিয়ার রেল লাইন বিশাল। এই বিশাল রেল লাইনে কোন ট্রেন কোথায় যাচ্ছে এটা বোঝার জন্য এই জিনিষের কোন তুলনা হয়না। প্রতিটা স্টেশনের নাম, এক স্টেশন থেকে পরবর্তী স্টেশনের দূরত্ব, পৌঁছানোর সম্ভাব্য সময়, টিকিটের দাম, কোন কামরা এসি নাকি নন-এসি এসব ছাড়াও আরো অনেক ইন্টারেস্টিং জিনিষ থাকে এই বইতে। ট্রেনটা প্রচন্ড গতিতে চলছে। এমনিতেই বাইরে শীত। তার উপর এসি বেশ ঠান্ডা। জ্যাকেটের কলার উঠিয়ে দিয়ে বসেছি। কিছু কিছু স্টেশনের নাম দেখে কৌতূহল হচ্ছে। কোথায় আছি সেটাও মাঝে মাঝে বুঝতে পারছিনা। টুকটাক প্রশ্ন করে মহিলার কাছ থেকে এসব জেনে নিচ্ছিলাম। আমি ইংরেজীতেই প্রশ্ন করছিলাম। মহিলা হিন্দিতে উত্তর দিচ্ছিলেন। হঠাৎ শিখ ব্যাটা কেন জানি ক্ষেপে গেল। হিন্দিতে আমাকে সে যা বলল তার বঙ্গানুবাদ দাঁড়ায়, তুমি হিন্দিতে কথা বলছ না কেন? আমি বিনয়ের সাথে ইংরেজীতে বললাম যে আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, হিন্দি আমি মোটামুটি বুঝি কিন্তু বলতে পারিনা। এটা শুনে সে আরো ক্ষেপে গেল। তার কথা হল বাংলাদেশ থেকে এসেছ আর রাষ্ট্রভাষায় কথা বলতে পারনা, ফাজলামো নাকি? সে সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশকে গুলিয়ে ফেলেছিল। আমি তাকে যতই বোঝানোর চেষ্টা করি, সে ততই রেগে ওঠে। পাশের কামরায় এক ইউরোপীয় দল উঠেছে। হাসি ঠাট্টার সাথে সাথে মাঝে মাঝে তাদের হিন্দিতে কথা বলার হাস্যকর চেষ্টা শোনা যাচ্ছিল। শিখ ব্যাটা আমাকে বলে, ওই ফরেনাররা হিন্দিতে কথা বলছে আর তুমি কোথাকার কোন নবাব যে হিন্দি জাননা? বহ্নি বেচারা দেখি পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সেটা ছিল তার প্রথম বিদেশ যাত্রা। সেও কয়েকবার তাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। গোঁয়ারটা আপন মনেই রাগে গজগজ করছিল। তার স্ত্রীও তাকে শান্ত করতে পারছিলনা। বুঝলাম সম্ভবত এর মানসিক সমস্যা আছে। একে না ঘাটানোই ভাল হবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কোলকাতা থেকে দিল্লী পনেরোশো কিলোমিটারের প্রায় পুরোটা পথ সে থেমে থেমে আমাদেরকে গালাগালি করেছে। মাঝে মাঝে সে ঘুমিয়েছেও। তাও এত জোরে নাক ডেকে যে আমি বাধ্য হয়ে টিকেট চেকারকে গিয়ে রিকোয়েস্ট করলাম আমাদের অন্য কামরায় সীট দেবার জন্য। দুঃখজনক ব্যাপার হল আর কোথাও দুটো পাশাপাশি সীট খালি ছিলনা। আমি চেকারকে বললাম তাহলে তুমি গিয়ে ওকে কিছু বল। সেতো ঘুম ভাঙ্গলেই আমাদের গালাগালি করছে। টিকেট চেকার দেখি আমার হাত ধরে বারবার মাফ চায়। সে ওকে ঘাটাতে পারবেনা। তার ভাষায় ওই ব্যাটা "খতরনাক আদমি"। রাতে ডিনারে "আলু মটর", "ফুল গোভি"-র তরকারি, ভাত আর রুটি ছিল। বহ্নি রাগে দুঃখে কিছুই খেলনা। কোলকাতা থেকে দিল্লী পুরোটা রাস্তা সে কয়েকটা বিস্কুট খেয়ে কাটাল। এরপর ঘটল আরেক ঘটনা। মড়ার উপর সাধারণত খাঁড়ার ঘা পড়ে। আমাদের বেলায় মড়ার উপর গিলোটিন পড়ল। এক সকালে ট্রেনে উঠেছিলাম। ট্রেন দিল্লী পোঁছানোর কথা পরের দিন সকাল আটটায়। কোথায় জানি লাইনে সমস্যার কারণে আমাদের ট্রেন কোন এক নাম না জানা স্টেশনে কচ্ছপের মত দাঁড়িয়ে গেল। এবং দাঁড়িয়েই থাকল ঘন্টার পর ঘন্টা। শেষ পর্যন্ত আমরা দিল্লী যখন পৌঁছালাম তখন প্রায় বিকেল চারটা। এর মধ্যে একটাই আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে। সেই শিখ আমার কাছে তার দূর্ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছে।
আমরা পাহাড়গঞ্জে যে হোটেলটায় উঠি সেটার নাম এখন আমার মনে নেই। তবে আরেকটু কনশাস যদি হতাম তাহলে আমরা সেই হোটেলে উঠতাম না। হোটেলটা বাইরে থেকে দেখে যতটা সুন্দর মনে হয়েছিল রুমগুলো মোটেই ততটা সুন্দর ছিলনা। কিন্তু আমাদের তাড়া ছিল। পরের দিন সকালে আমাদের আগ্রা যেতে হবে। কোনরকমে লাগেজ রেখেই আমরা ছুটলাম দিনের আলো থাকতে থাকতে শহরটা যতটুকু পারা যায় দেখে নিতে। ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে হোটেলে যখন ব্যাক করলাম তখন রাত আটটা। এর মধ্যে বলার মত একটাই ব্যাপার ঘটেছে সেটা হল বহ্নি ম্যাকডোনাল্ড এ জাম্বো সাইজের এক গ্লাস স্ট্রবেরী-শেক এক চুমুকে শেষ করেছে। মহারাজা ম্যাক নামে বিশাল একটা বার্গার শেষ করেছে। লিটারেলি সে প্রায় এক দিন না খেয়ে ছিল। এমনিতে তার খোরাক চড়ুই পাখির থেকে সামান্য বেশী। তাই এটা বলার মত একটা বিষয় বটে। হোটেলে এসে দেখি আমাদের রুমের সামনে জটলা। কি ব্যাপার? হোটেল ম্যানেজার আমাদেরকে দেখে এগিয়ে এসে জিগ্যেস করল, তোমরা কি বাইরে যাবার সময় বাথরুমের গীজার চালু রেখে গিয়েছিলে? আমরা বললাম বিলকুল নেহি! আমরা বাথরুমেই যাইনি। কোনরকমে লাগেজ রেখেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাপার কি? জানা গেল, কিভাবে যেন বাথরুমের গীজার চালানো ছিল। হতে পারে আমাদের আগে যারা এই রুমে ছিল তারাই কাজটা করেছে। চেক আউট করার সময় রুম বয়ও সেটা বন্ধ করেনি। এখন অতিরিক্ত গরম হয়ে সেটা বার্স্ট করেছে। সারা বাথরুম ভর্তি গীজারের ভাঙ্গা টুকরা। সেগুলো এখন পরিষ্কার করা হচ্ছে। ম্যানেজার বারবার মাথা নাড়ছে আর বলছে তার বহোত লস হয়ে গেল। আমরা হতভম্ব। এমন ঘটনাও ঘটে! যাই হোক, সবাই চলে যাবার পর লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। এমন সময় বহ্নি বলল আমাদের মেইন লাগেজের কম্বিনেশন লকটা কাজ করছে না। লাগেজ খুলছেনা। সর্বনাশ! আমাদের টাকা পয়সা, জামাকাপড় সব এর মধ্যে। দেখলাম কম্বিনেশন ঠিকই আছে। কিন্তু কোন কারণে লকটা জ্যাম হয়ে গেছে। রাত বাজে নয়টা। এখন এই দিল্লী শহরে আমাকে তালাওয়ালা খুঁজতে যেতে হবে? এই ছিল কপালে? ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়। দেখলাম লকটার একদিকের ক্লিপটা ঠিকই খুলছে। কিন্তু অন্যদিকের ক্লিপটা খুলছেনা। টেবিলে একটা কাঁটাচামচ ছিল। একটু কায়দা করে অন্য ক্লিপটায় কাঁটাচামচ দিয়ে জোরে চাড় দিতেই লকটা খুলে গেল। ভাবলাম আজকের জন্য মনে হয় ক্ষ্যামা পেলাম।
কিন্তু না।
জামাকাপড় চেঞ্জ করে একটু স্থির হয়ে শুয়েছি কেবল। মনে মনে কালকের দিনের প্ল্যান করছি। বহ্নি চুল আঁচড়াচ্ছিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ সে একটা লাফ দিয়ে চীৎকার করে উঠল। আমিও লাফিয়ে উঠে বললাম কি হয়েছে? সে ভীত গলায় বলল, কি যেন একটা আমার পায়ের উপর দিয়ে হেঁটে গেল এইমাত্র। আমি বললাম, কি যে বল। আমার আর কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না। একটু পর বহ্নি লাফিয়ে বিছানায় উঠে বলল দেখ দেখ, ওই যে, ওই যে! তাকিয়ে দেখি গোবদা সাইজের একটা ইঁদুর ঘরের এক দিক থেকে আরেকদিকে দৌড়ে গেল। এরপর মাথা ঠিক রাখা কঠিন। সোজা ম্যানাজারের কাছে গিয়ে নালিশ করলাম। ম্যানেজার যেহেতু। ম্যানেজ করাই তার কাজ। সে আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করতে লাগল। গলায় আধাকেজি মধু ঢেলে সে বলল, চুহা? উয়ো কুছ নেহী। কুছ নেহী মানে? শালা ফাজিল! আমি বললাম আমি ওসব বুঝিনা, প্লীজ চেঞ্জ দ্য রুম। সে মধুর গলায় আবার বলল, ভাইয়া উয়ো কুছ নেহী করেগা, আপ চিন্তা মাত কিজিয়ে। কথাটা এতটা কনফিডেন্টলি সে বলল যেন সেটা তার পোষা ইঁদুর। দেখলাম এর সাথে আর কিছুক্ষণ তর্ক করলে আমার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাবে। রাগ সামলাবার জন্য কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তারপর ভাবলাম এক রাতের তো মামলা। কোন রকম ভাবে ঘুমিয়ে পার করলে পরের দিন আগ্রা। আর ঝামেলা না হয় না-ই করি। রুমে ফিরে এলাম। আমার আর কথা বলার মত অবস্থাও নেই। জাস্ট লাশের মত পড়ে গেলাম বিছানায়। একটু ঘুম। শুধু একটু ঘুম দরকার এখন আমার। কিন্তু ওই যে বললাম। উদ্ভটতম সমস্যা। সেটা তখনও কপালে বাকী ছিল।
গভীর ঘুমে চলে গিয়েছিলাম। স্বপ্নে দেখছি তাজমহলের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছি। দাড়িওয়ালা এক লোক আমাকে তাজমহল ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে। হঠাৎ মনে হল তাজমহল আমার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ল। লাফিয়ে উঠে বসলাম। হোটেলের ঠিক বাইরেই কোথাও প্রচন্ড জোরে ড্রাম বাজাচ্ছে। একটু পর শুরু হল হারমোনিয়াম আর নুপুরের শব্দ। তারপর গান। তারপর নাচের আওয়াজ। কিছুক্ষণ কানে বালিশ চেপে শুয়ে রইলাম। তারপর হোটেল বয়কে ডাকলাম। জানতে চাইলাম বাইরে কি হচ্ছে এসব? সে হাসিমুখে বলল কোন একটা পার্বণ উপলক্ষে এখানে বড়িয়া গানার আয়োজন করা হয়েছে। আমি বললাম আচ্ছা বাত হ্যায়। তা এটা শেষ হবে কখন? সে আমার দিকে ছাগলের মত তাকিয়ে রইল। শেষ? আভিতক তো সুরু নেহি হুয়া! শুরু হয়নি মানে? সে বলল, এটাতো রাত বারোটার সময় শুরু হবে, এখন শুধু তবলার ঠুকঠাক হচ্ছে। আর খতম? হোটেল বয় আমাকে সুখবর দিচ্ছে এমন ভঙ্গিতে বলল, কাল সুব্হা।
------------------------------------------------------------------------------------
আমি আর বহ্নি প্রায়ই আমাদের সেই সফরের গল্প করি আর হাসি। সেটা ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সফরগুলোর একটা। ডিসেম্বর মাস এগিয়ে আসতে থাকে। আর আমাদের পেটের ভেতর গুড়্গুড় শুরু হয়। ইচ্ছা হয় ভাসকো দা গামার মত ভেসে যাই। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কে জানে হয়ত সত্যিই একদিন ভেসে যাব। পাড়ি জমাবো অজানা কোন কালীকট বন্দরের খোঁজে।