- "জাকির ভাই একটু দেখবেন?"
- "কি ব্যাপার?"
- "ম্যাপ জেনারেশনের মেথডটা কেন জানি বাড়ি খাচ্ছে।"
- "বাড়ি খাচ্ছে মানে? বলেন কি! সাড়ে ছয়টার স্ট্যাটাস কলে না বললেন সব ঠিক আছে?"
- "হ্যাঁ জাকির ভাই ঠিকই তো ছিল। একটু আগেও ঠিক ছিল। এখন রান করতে গিয়ে দেখি এই অবস্থা। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।"
আজ বৃহস্পতিবার। আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। আর সাত মিনিট পরে আমাদের ডেমোনস্ট্রেশন কল। আর এখন এই অবস্থা। এসি টা কি ঠান্ডা করতে পারছেনা? এত গরম লাগছে কেন? ঘরের সবাই ভীত চোখে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে। মনিটরে এই মুহূর্তে একটা হরর ছবি চলছে। পুরো রুমে ভৌতিক অবস্থা। আমি মনিরুল ভাইয়ের দিকে তাকালাম। তিনি কেঁদে ফেলার চেষ্টা করছেন বলে মনে হল। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনিটরের সামনে বসলাম। এই হরর মুভি মিন্ডি দেখলেই অজ্ঞান হয়ে যাবে। নাইন ওয়ান ওয়ান কল করতে হবে। তার আগেই কিছু করা দরকার। হাতে আছে সাত মিনিট।
মনিরুল ভাই আমাদের একজন সফটওয়্যার এঞ্জিনীয়ার। অসম্ভব পরিশ্রমী একজন মানুষ। তার অদ্ভুত কিছু সমস্যা আছে। আমরা প্রতিটা বাগকে একটা ইউনিক নাম্বার দেই। আমি যদি বলি, "মনিরুল ভাই, আপনি কোন্ বাগটা নিয়ে কাজ করছেন?" -"এইতো, 27385"। আমি দশ মিনিট ধরে সারা টিএফএস (Team Foundation System) এ খুঁজেও বাগটা পাইনা।
- "মনিরুল ভাই, এই নাম্বারে তো কোন বাগ নেই।"
- "আছে তো, এই যে দেখেন, আমি তো কাজ করছি।"
- "মনিরুল ভাই, এটাতো 27358, 27385 না।"
- "ও আচ্ছা, শেষের ডিজিট দুটো একটু উলটে গেছে।" মনিরুল ভাই দাঁত বের করে বোকার হাসি হাসেন। আমি তাকিয়ে থাকি।
মিটিং এর আগে প্রায়ই বলি, "মনিরুল ভাই, মাইক্রোফোন ঠিক আছে তো? চেক করেছেন তো ঠিক মত?" - "হ্যাঁ হ্যাঁ, সব ঠিক আছে, আমি কয়েকবার চেক করেছি।" মিটিং শুরু হয়।
- "হাই, দিস ইজ মনিরুল।"
- "গুড মর্নিং মনিরুল, হোয়াটস্ ইয়োর স্ট্যাটাস?"
- "টুডে আই ওয়াজ ওয়ার্কিং উইথ......"
হেডফোনে কোন শব্দ নেই। "মনিরুল, আর ইউ দেয়ার?" কোন শব্দ নেই। আমি মনিরুল ভাই কে স্কাইপিতে নক করি, "মনিরুল ভাই, আপনার কথা শোনা যাচ্ছে না"। মনিরুল ভাই জবাব দেন, "মাইকটা কাজ করছে না। কি হল বুঝতে পারছিনা।" কিছুক্ষন মাইক্রোফোনের খসখস, কটকট শব্দের পর মনিরুল ভাইয়ের আওয়াজ শোনা যায়, "হিমাংশু ক্যান ইয়ু হিয়ার মি?" কথা শুনে মনে হয় গ্যালাক্টিক ট্রান্সমিশন হচ্ছে। চাঁদের বুক থেকে নীল আর্মস্ট্রং এর যে ভয়েস শোনা গিয়েছিল, মনিরুল ভাইয়ের গলাটা সেরকম শোনায়। আমরা সবাই হিমাংশুর ইন্ডিয়ান ইংলিশের সাথে সাথে মনিরুল ভাইয়ের মহাকাশীয় বেতার বার্তা গম্ভীর ভাবে শুনতে থাকি।
প্রচন্ড কাজের চাপ যাচ্ছে। রাত জেগে কাজ করতে হচ্ছে। মনিরুল ভাইও প্রচন্ড পরিশ্রম করছেন। কয়েকদিন আগে আমাকে এসএমএস করলেন, "আই উইল বি লেট। আই হ্যাভ ব্রেইন পেইন।" মনিরুল ভাইয়ের ইংলিশে সামান্য সমস্যা আছে। সবারই থাকে। তবে সেই ঘাটতি তিনি পুষিয়ে দেন ক্রিয়েটিভ শব্দচয়ন দিয়ে। আমাদের এখন আর কারো মাথা ব্যাথা হয়না, "ব্রেইন পেইন" হয়। আজ আরেক বৃহস্পতিবার। রাত আটটা পনেরোতে "ব্রেইন পেইন" নিয়েই ডেমোনস্ট্রেশন দেব। অফিসে গেলেই মনিরুল ভাইয়ের সাথে দেখা হবে। আমি বলব, "সব ঠিক আছে তো মনিরুল ভাই?" - "হ্যাঁ হ্যাঁ, সব চেক করে রেখেছি। আজকে আর কোন সমস্য হবে না"। ঠিক রাত আটটা দশ মিনিটে তিনি আমার কাছে আসবেন। গোপন ষড়যন্ত্র করার মত করে গলা নামিয়ে বলবেন, "জাকির ভাই, একটু সময় হবে আপনার?"