দৌড়ের উপরে আছি। সহজ বাংলায় বলতে গেলে এভাবেই বলতে হয়। আসুন গত সপ্তাহের কাহিনি বলি আপনাদের।
অক্টোবরে শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ কাজের প্রচন্ত ব্যাস্ততা ছিলো। তার মাঝেই আবার কম্পানির দেওয়া বাসা ছেড়ে বাইরে বাস করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটার জন্য বাড়ী দেখা, এজেন্টের সাথে কথা, নতুন নতুন কত কিছুই না শিখলাম গত ২ সপ্তাহে, সেটা নিয়ে পারলে আরেকটা লেখা দেবো।
শারমিনের খালা, খালু বেড়াতে আসবে, ভাগনী জামাই হিসেবে আমার দায়িত্ব তাদের যথাসাধ্য সাহাজ্য করা।

বিদেশে পরিচিত কেউ থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয় যেটা একা একা বেড়াতে গেলে করা হয় না।
তাদের বিমান বন্দর থেকে আনার জন্য অফিস থেকে তার ৮টার পরে রওনা দিলাম, গুগুলে ১ ঘন্টা জ্যাম দেখাচ্ছিলো। ৩০ মিনিট অপেক্ষার পরে খালা, খালু বের হলেন। ব্যাগ নিয়ে বারির পথে রওনা দিলাম। এয়ারপোর্টের পার্কিং এ ঘন্টা ৪০দিরহাম। বের হয়ে পথ ভুলে আবার পার্কিং এ ঢুকে ২ বার পাকিং ফি দিলাম ২য়বার আরো ৫ দিরহাম।

পরের দিন আমার বন্ধ। সবাই মিলে বেড়াতে গেলাম গ্লবাল ভিলেজে।
আমাদের দেশের বানিজ্য মেলার মতন কিন্তু এটা আসল বানিজ্য মেলা। বিশ্বের প্রায় সব বড় দেশের স্টলই এতে আছে।
বিশ্বের ৭৮ জাতীর বিভিন্ন স্টল আছে ২৭টি পেভিলয়নে( UAE, KSA, Qatar, Bahrain, Kuwait, Afghanistan, Africa, Americas, China, Egypt, Europe, India, Iran, Oman, Japan, South Korea, Lebanon, Morocco, Pakistan, Palestine, Syria, Thailand, Turkey, Yemen, Russia. )
পুরা মেলা জুড়ে ২০০ এর মতন রেস্টুরেন্ট, কিয়স্ক, স্ট্রিট ফুডের দোকান আছে। যেখানে অনেক নতুন খাবার পাবেন যেটা সচারচর আপনি হাতের কাছে পাবেনা।
শনিবারের বিকেলে ৪ টার দিকে রওয়ানা হলাম। কিন্তু এতো লম্বা ট্রাফিক জ্যামে পড়বো ভাবিনাই। প্রায় ১ কিমি লম্বা লাইন ধরে গাড়ি পার্কিং করলাম।
থাইল্যান্ডের প্যাভেলিয়ান
পুলাপাইনের খেলার জন্য অনেক আয়োজন আছে, স্থানীয়রা অনেক খরচ করে এখানে।
এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাভেলিয়ান আছে তাই এই সিজনে পর্যটকেরা ১ দিন এখানে ঘুরতে আসে। এখানে সব কিছরই ব্যবস্থা আছে, বাচ্চাদের জন্য খেলা, নানান রকমের খাবারের দোকান, ২৭টা পেভেলিয়ান, কয়েকশত ছোট দোকান, বিভিন্ন স্টেজ সো।
শারমিন আফ্রিকান স্টোলে কোকোয়া বাটার ওয়ালা গায়ে মাখা লোসন কিনলো, ডানা খেলনা কিনলো।
আগে এখানে দোকান ভাড়া কম ছিলো তখন জিনিস পত্রের দাম কম ছিলো এখন অনেক বেশি।
গ্লবাল ভিলেজ ঘুরা শেষে ঠিক করলাম এরাবিক মান্দি খেতে যাবো। চলে গেলাম আলকুজ ইন্ড্রাস্রিয়াল এরিয়াতে একটা দোকানে।
আগের একটা ভিডিও ছিলো ঐটা দিলাম। আমার কাছে এইবারের ছবি নাই।
তারপরের দিন মেহমানদের পাঠালাম মরুভুমিতে সাফারী করতে, মরুর দেশে এসে যদি মরুভূমি না দেখে তা কি হয়???
জনপ্রতি ১০০ দিরহাম, বাসা থেকে নিয়ে যাবে এবং ভ্রমন শেষে নামিয়ে দিয়ে যাবে, বেলি ডিন্স, তুরনা ডান্স, বুফে খাবার, উটে চড়া, মেহেন্দি লাগানো, স্থানীয় অতিয্যবাহী পোষাকে ছবি তোলা, সব মিলিয়ে দুবাই এলে অবশ্যই ১বার ট্রাই করার মতন জিনিস।
খালু মরুভুমিতে বালির টিলার উপর দিয়ে গাড়ী চালানোর সময় ভয় পাইছিলো, বাকি সব একটিভিটি সবাই উপভোগ করেছে।
দুবাই এসে কেউ বুর্জ খলিফা দেখবে না সেটা তো হতে পারেনা। সবাই মিলে গেলাম বিশ্বের সবচেয়ে উচু টাউয়ার দেখতে।
দুবাই মলে ওয়াটার ফাউন্টেনের সো দেখার জন্য প্রচন্ড ভীড়, মজার বিষয় হইলো সবাই মোবাইলেই ভিডিও করতেছে, পেছন থেকে দেখলে শুধুই মোবাইল আর মোবাইলে...

তারপরের দিন গেলাম ব্লু ওয়াটার আইল্যান্ড আর মাছ ভাজা খেতে।
আঈন দুবাই, বিশ্বের সব চেয়ে বড় নাগর দোলা বলা যায়। ২৫০ মিটার উচু যেটা লন্ডন আই থেকে প্রায় দুগুন উচু। এটা বানাতে প্রায় ৮ বছর লেগেছে এবং বর্তমানে আবার কি জানি কোন সমস্যার জন্য বন্ধ করে রেখেছে।
টিকিট ১৩০ দিরহাম, কয়েকটা ক্যাপসুলে লাইসেন্সড বারও নাকি থাকবে

https://www.instagram.com/p/Ck8-PdFjbrw/
এখানে কিছুক্ষন থেকে ছবি তুলে গেলাম মাছ ভাজা খেতে।
বুর্জ আল আরব হোটেলের কাছেই জুমাইরা রোডে বু কাতার নামের একটা অনেক পুরানো রেস্টুরেন্ট আছে, ১৯৮০ সালে ছাপড়া ঘরের মতন করে ভাজা মাছ বিক্রি দিয়ে শুরু হয়ে বর্তমানে দুবাইয়ের ১ নং ফিস ফ্রাই খাবার রেস্টুরেন্টে স্থান করে নিয়েছে।
ঐখানে রাত ৯/১০ টায় গিয়েও লাইনে দাড়িয়ে মাছ অর্ডার করতে হবে এবং টেবিলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ঐখানে মাছা পরিস্কার করে, ম্যারিনেট করে রেখেছে। আপনি পছন্দ করে কেজি দরে দাম পরিশোধ করবেন। ওরা ডুবো তেলে মচমচা করে ভেজে পরিবেশন করবে।
আমরা ২টা হামুর মাছ এবং ৩০০ গ্রাম চিংড়ি মাছ নিয়েছিলাম আমাদের ৬ জনের গ্রুপের জন্য।
খাবার জন্য পোলাও ভাত অথবা লাচ্চা পরটা নেওয়া যায়। আমরা ৪টা পরাটা আর পোলাও নিয়েছিলাম।
সবাই মিলে ২খানা মাছের পুরোটাই খেয়ে নিলাম আমরা। যেই ভাবে খেয়েছিলাম তাতে প্লেটের কাটা দেখে বেড়ালেও মন খারাপ হয়ে যেতো।

তারপরে বাসায় এসে ঘুম।
আগামী পর্বে সময় পেলে দুবাইয়ের সিটি অফ গোল্ডের কথা লিখবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৫২