১.
বিবিএ পড়বার সময় ছেলেপেলে পড়ানো, ডাটা এন্ট্রি সহ বহু কাজ করেছি। বিবিএ-এর একদম শেষ দিকে এসে ধরলাম ওয়েব ডিজাইন, ডোমেইন হোস্টিং ব্যবসা। ডোমেইন হোস্টিংটা সামুর হাত ধরেই শুরু হয়েছিলো। একটা দুইটা ব্লগ পোষ্ট লিখে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলাম, এবং বেশ অনেক ক্লায়েন্ট পেয়েছিলাম।
ওয়েব ডিজাইন শুরু করেছিলাম তারও বেশ কিছু আগে। প্রথম ক্লায়েন্ট ছিলো আম্রিকান। তার বাংলাদেশী পার্টনারকে দিয়ে একটা ওয়েব সাইট করিয়ে নেয়। তারপর সে আমাকে আরও অনেক গুলি ওয়েব সাইটের কাজ দেয়। তাদের হিসাবে সস্তা, আর আমার হিসাবে বিপুল টাকার সার্ভিস দিয়েই যাত্রা শুরু। মনে আছে প্রথম ১০টি ওয়েব সাইটের মধ্যে ৮টিই ছিলো বিদেশি।
হোস্টিং ব্যবসা শুরু করবার মাত্র ২ বছরের মধ্যে আমার প্রায় ৪৫০ ক্লায়েন্ট হয়ে যায়। এই ক্লায়েন্টরা বিভিন্ন এমাউন্টের হোস্টিং নিতো। গড়ে আমাকে ২.২৭ ডলার দিতো প্রতিজন। মাসে আমার চোখ বুজে এভারেজ ৭০০+ ডলার হয়ে যেতো।* তখন ডলার ৭৮+ করে হিসাব হতো। সো... মাস শেষে আমার ৫০ হাজারের মত ইনকাম শুধু হোস্টিং থেকে। আর ডোমেইন থেকে টুকটাক কিছু থাকতো। খরচ ছিলো ৩০ ডলারের একটা ভিপিএস!
হোস্টিং ব্যবসায় একটা সুবিধা হচ্ছে আজকে যে সার্ভিস কিনবে, আগামী বছর সে ঐ একই বা বেশী টাকা দিয়ে সার্ভিস রিনিউ করবে। *সো টাকার ফ্লো কোন মাসে একটু কম, কোন মাসে একটু বেশী। এজন্যই উপরে বলেছি এভারেজে ৭০০+ ডলার হয়ে যেতো।
২.
বিবিএ, এমবিএ শেষ করে চাকরীতে না ঢুকে এই ব্যবসাতেই থেকে গেলাম। কোন হালায় আছে যে আমাকে তখন মাসে ৫০+ বেতন দিবে? বন্ধুর পাল্লায় পড়ে ঢুকলাম একটা পত্রিকাতে। যেহেতু সারাদিন অলস সময় কাটাই, তার উপরে সন্ধ্যা হলেতো কোন কাজই নাই, তাই সাংবাদিকতা শুরু করতে খুব একটা চিন্তা করতে হলো না। মাসে ১৫ হাজার টাকা বাড়তি আসবে, কিছু লোকজনের সাথে নিয়মিত বসে আড্ডা দেওয়া যাবে, আর সাথে বাড়বে নেটওয়ার্ক।
ঐ সময় শুরু হলো হরতাল, বিম্পি-জামাত দিন নাই রাত নাই হরতালের উপরে হরতাল দিতে থাকলো। তখন অফিসে যাতায়েতের জন্য আমাদের সিএনজি দেওয়া হতো। একাধিক সাংবাদিককে একটা সিএনজি অফিসে নিয়ে আসতো, আবার রাত্রে তাদের বাসায় পৌছে দিয়ে আসতো।
একদিন আমি আর এক সাংবাদিক ভাই সিএনজিতে কদ্দুর যাওয়ার পর সিএনজি ক্রাশ করলো! আর স্টার্ট হয় না। সে নানান চেষ্টা-চরিত্র করে তার ওস্তাদকে ফোন দিলো। ওপাশ থেকে ফোন ধরতেই সে বললো, ওস্তাদ, সিএনজি স্টার্ট লয় লয়, লয় না!
ওপাশের লোকটি নির্ঘাত বোকা বনে গিয়েছিলো, কারণ তখন আমাদের ড্রাইভারকে বলতে শুনলাম, আরে বুঝলেন না, স্টার্ট দিলে ঘর ঘর শব্দ করে, তারপর আর স্টার্ট হয় না!
এরপর থেকে আমরা কোন জিনিষ শুরু হতে হতে শুরু না হলে মজা করে বলতাম, স্টার্ট লয় লয়, লয় না!
৩.
ঐ হরতাল গুলির জন্য বেকায়দায় পড়ে গেলাম। ক্লায়েন্টদের অনেকেরই ছোট ব্যবসা ছিলো, তারা একে একে ব্যবসায় লস দিতে শুরু করলো। তাদের লস মানে ডোমেইন-হোস্টিং রিনিউ বন্ধ। তার মানে আমার টাকার ফ্লো কমা শুরু করলো।
বাধ্য হয়ে অন্য ছোট ছোট কিছু ব্যবসার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সব খানেই মন্দা। সবই স্টার্ট লয় লয়, লয় না!
৪.
মাঝে মধ্যে মনে করি, দেশে ফিরলে কি করবো? তখন মনে হয় চটপটির ব্যবসা করবো। কারণ, চটপটি বিক্রি করে কেউ কখনও দেউলিয়া হয়নি!
৫.
আমি সাধারণত নিউজ পড়ি না, পড়ি নিউজের টাইটেল। গত কয়েকদিন থেকে টাইটেল গুলি পড়ে অস্থিরতা বাড়ছে। সেই দিন গুলির কথা মনে পড়ছে। একটা আতঙ্ক কাজ করতো মনে।
মাঝে মধ্যেই দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু এমন সব নানান ঘটনা-কর্মকান্ড দেখে সেই ইচ্ছাও স্টার্ট লয় লয়, লয় না!
Photo by isi martínez on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:২৮