somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে মৎস্য বর্জ্য

১৫ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে মৎস্য বর্জ্য। সাহসী বিনিয়োগ, দক্ষ জনবল আর প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি নিশ্চিত করা গেলে বছরে আয় হতে পারে ৮ হাজার কোটি টাকা।

মৎস্য বর্জ্য ব্যবহারে নতুন সুযোগ বের করার জন্য বাংলাদেশ চিংড়ি ও মৎস্য ফাউন্ডেশন (বিএসএফএফ) প্রশিক্ষক তৈরির কাজ শুরু করেছে। জাকিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় এতে সহায়তা করছে।

বিশ্বে সবচে সফলভাবে মৎস্য বর্জ্য ব্যবহারকরা দেশ আইসল্যান্ড । দেশটি ২০০৪ সালে মৎস্য বর্জ্য নিয়ে কাজ শুরু করে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রডাক্টেও এনেছে বৈচিত্র ।

মূল ইংরেজি খবরটি পড়তে ক্লিক করুণ---http://www.theindependentbd.com/post/43927

আইসল্যান্ড ফিস লিভার থেকে ওষুধ গ্রেড, ফুড গ্রেড এবং কসমেটিকস গ্রেডের কাঁচামাল তৈরি করছে। মাছের চামড়া দিয়ে তারা বেল্ট, মানি ব্যাগের মত সৌখিন পণ্যও তৈরি করছে। আফ্রিকায় মাছের মাথা রপ্তানি করছে। যেটি আফ্রিকা অঞ্চলের স্থানীয় সুপের উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে আমরা এখনই তা করতে পারবো না। তাই আমাদের নজর দিতে হবে শুরুর দিকে। যেখানে ফিশ মিল বা মাছের খাবার তৈরি দিয়েই শুরু করতে পারি।

তবে বাংলাদেশ আপাতত বাই প্রডাক্ট হিসাবে ফিস মিল তৈরি করতে চায়। পুষ্টিগুণ ঠিক রেখে এটি করতে পারলে দেশটি লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিএসএফএফ'র চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক।

তার মতে, বাংলাদেশ এখন যে পরিমাণ মৎস্য বর্জ্য তৈরি হচ্ছে , তার এক তৃতীয়াংশও যদি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করে বাই প্রডাক্ট হিসাবে ব্যবহার করা যায় তাহলেও কমপক্ষে ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আয় সম্ভব। বিদেশে একটন মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি হচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার ডলারে। সে হিসাবে এক মিলিয়ন বা দশলক্ষ মেট্রিক মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি করা গেলে ৮ হাজার কোটি টাকা আয় সম্ভব। (১ ডলার সমান ৮০ টাকা হিসাবে)। এ জন্য পরিকল্পনাটাই জরুরী।

সৈয়দ মাহমুদুল হক দি ইনডিপেনডেন্টকে বলছেন, আমরা নতুন সুযোগের তৈরি করতে চাই। উদ্যোক্তা, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সাথে বৈশ্বিক সংযোগ তৈরি করতে চাই।

সরকারের মৎস্য অধিপ্তরের হিসাবে বর্তমানে দেশে ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। বিএসএফএফ এর এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে উৎপাদিত মাছের ৭১ শতাংশ দেশে ও দেশের বাইরে মানুষের খাবারে ব্যবহৃত হয়ে । ২৯ শতাংশ মৎস্য বর্জ্য হয়ে । যেটাকে বাই প্রডাক্ট হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে একবারই মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি করেছে। সেটি ২০১৪ সালে। এর মূল্যমান ছিল মাত্র ৬৬ হাজার ইউরো। এ খাতকে ব্যাপক সম্ভাবনায় খাত হিসাবে উল্লেখ করে জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর প্রিন্সিপাল ইনভিস্টিগেটর সৈয়দ ইশতিয়াক দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, মাছের চামড়া, মাথা মাথার ফ্রেম, কাঁটা, লিভার, আঁশ প্রভৃতি বাই প্রডাক্ট করা সম্ভব।

তার মতে, বাংলাদেশে এখনো এ জন্য কোনো প্রসেসিং সুবিধা, প্রযুক্তি নেই, যার মাধ্যমে ফিশ বল, ফিশ কাটলেট মত পণ্য তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া মাছের খাদ্য, মাছের তেল, পশু খাদ্য তৈরি প্রযুক্তিও এখন পর্যন্ত আমরা এডপ্ট করতে পারিনি।

জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে দেশে বর্তমানে ৭৮ টি মৎস প্রক্রিয়াজাত প্লান্ট পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৪১ টি প্লান্ট রয়েছে খুলনায়। ৩২ টি চট্টগ্রাম অঞ্চলে। খুলনার ফ্যাক্টরিতে দৈনিক গড়ে দুই হাজার কেজি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই মাছের টুকরো, ব্লক বা স্টিক। ২৫ শতাংশ ফ্রোজেন।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারখানায় দৈনিক ৩৫৬৬ কেজি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যার ৩০ শতাংশ মাছের টুকরো, বা স্ট্রিক। ৭০ শতাংশ আস্ত মাছ। এর মধ্যে থেকে খুলনায় ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ বাই প্রডাক্ট বা ব্যবহারযোগ্য মৎস্য বর্জ্য তৈরি হয়। সে হিসাবে খুণলায় দিনে ৪১ মেট্রিক টন এবং চট্টগ্রামে ৩২ মেট্রিক টন মৎস্য বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

সৈয়দ মাহমুদুল হক দি ইনডিপেনডেন্টকে বলছেন, তারা ক্ষেত্রটি উন্মোচন করতে চাইছেন। সে জন্য তারা চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে একটা প্রশিক্ষণ কর্মসূচীও শূরু করেছেন। যেখানে ২৪ জন অংশ নিচ্ছেন। যারা পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে এখাতের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তুলবেন।

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতটির জন্য নতুন করে মানব সম্পদ তৈরি জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের কারিকুলামেও ফিস ওয়াস্টের বিষয়টি অন্তভূক্ত করার জন্য চেষ্টা করবেন।

২৪ জন প্রশিক্ষক তৈরির জন্য যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তএদর মধ্যে চারজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রয়েছেন। এ সব প্রশিক্ষকের মাধ্যমে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ও সিলেটে আরো দুটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করা হবে।

সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। সে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।

বড় চ্যালেঞ্জ দক্ষ মানবসম্পদ, টেকনলজি এবং ইনভেস্টমেন্ট। তবে প্রশিক্ষতি মানব সম্পদ গড়ে তোলার পাশা্পাশি টেকনলজি করা গেলে খাতটি দাঁড়াবে বলেই মনে করেন মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিককৈর্মকর্তা নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং ইনডিয়া এ খাতে ভালো ব্যবসা করছে। আমাদের সম্ভাবনা আছে। এটাকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ শুরু করেছি।

সৈয়দ মাহমুদুল হক বলছেন, আমাদের এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ফিস মার্কেটের একটা স্ট্রাকটচার করতে হবে। যাতে করে সেখানে মৎস্য বর্জ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।

তার মতে, নগরায়নের কারণে এখন কেউ আর মাছ কাটাকাটির ঝামেলায় যেতে চান না। অন্যদিকে বিদেশে রপ্তারি ক্ষেত্রেও আমরা পুরো মাছ রপ্তানি করছি। এতে করে আমরা ভালো দাম পাচ্ছি না। আমরা যদি এটাকে ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি বা সেল করতে পারি তাহলে এখাতে বেশ ভালো আয় করা সম্ভব।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি মাছ যদি কেউ বিক্রি করেন ১০০ টাকা। তার যদি মাছটি কেটে দেয়ার জন্য ১০ টাকা নেন। আর মাছ থেকে পাওয়া মৎস্য বর্জ্য বিক্রি করতে পারেন ২০ টাকা। তাহলে বিক্রেতার ৩০ শতাংশ লাভ বেশি হচ্ছে। তাকে সেটি বোঝাতে হবে। একই সাথে কিচেন মার্কেট, ফিস প্রসেসিং জোন এবং ফিশারিঘাটগুলোতে স্টোরেজ সিস্টেম ডেভেলপ করলে কাঁচামাল সঙ্কট হবে না।

তবে এখানে শিল্প গড়তে হলে মেটেরিয়ালের কন্টিনজেন্সি রাখতে হবে। এতে এ খাতে সঙ্কট হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন ইশতিয়াক। তার গবেষণার ফলাফল অনুসারে বাংলাদেশে মৎস্য বর্জ্য কাঁচামালের মধ্যে মাছেল চামড়া, আঁশ, লিভার, হাড় বা কাঁটা রয়েছে ৫৭ শতাংশ। মাথা ২৮ শতাংশ এবং অন্য উপাদান ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে চিংড়িতে মাথার অংশ ৯০ শতাংশ এবং খোলস ও পা ১০ শতাংশ। এ সব থেকে বাই প্রডাক্ট তৈরির অন্যতম উপাদান।

তবে এর বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং সঠিক টেকনলজি ইউজ করা সম্ভব হলে ফিশ মিলের খরচও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সৈয়দ মাহমুদুল হক।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×