somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাকিস্তানের দুঃখই পত্রিকায় আসবে, মনির ওস্তাদদের দুঃখটা আসবে না? (এম তানজিলের ফেসবুক পোস্ট)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রথম আলো প্রথম পাতায় নিউজ করেছে,"মীর কাসেমের ফাঁসিতে পাকিস্তানের দুঃখ।"


নিউজটা সত্য। কিন্তু এর সাথে আরো যে সত্য, এই ফাঁসিটার বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ অনেকেই সোচ্চার ছিলো, সেগুলো যায়গা পায় নি। পাকিস্তানের নিউজটা দেয়ার কারন এতে তাকে পাকিস্তানের দালাল বানানোটা সহজ হবে।

কাশিমপুর কারাগারে এক বিডিআর ছিলেন,মনির ওস্তাদ। বুক বাইন্ডিং দফায় কাজ করতেন। পিলখানার ঘটনায় যে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের স্বপ্ন সাধ ধুলিস্যাত হয়ে গেছে তাদের একজন। আকাশভাই এর কাকাবাবু সমগ্র ধার করে পড়তে গিয়ে ছিড়ে ফেললাম। কি বাজে ব্যাপার! কাচুমাচু ভংগিতে বান্ডিং দফায় গিয়ে বললাম ওস্তাদ, আমার বইটা বাধাই করে দেবেন?

এভাবেই পরিচয়। জানলাম পিলখানার ঘটনার দিনে কোন কিছু না জেনেও জেল খাটছেন আরও অনেকের মতই। নিয়তি মেনে নিয়ে নিজেকে শপে দিয়েছেন তার কাছে। ছেলেকে বুয়েটে পড়ানোর স্বপ্ন। আমাকে পেয়ে খুশি হলেন খুব। বললেন এই জেল খানায় তো বুয়েটের আরেকজন আছে।

অবাক হলাম । আবার কোন হতভাগা? মাহমুদুর রহমান, আমার দেশ সম্পাদক। দেখা করিয়ে দেয়ার জন্য জেদ ধরলাম। মাহমুদুর রহমান ভি আই পি ডিভিশন সেলে থাকেন। ফাঁকা পেয়ে একদিন তার কাছে নিয়েও গেলেন। মাহমুদুর রহমান থাকতেন শেরে বাংলা হলেই, আমার ঠিক ওপরের রুমে, কেমিকেলের ছাত্র হওয়ায় ক্লাসও করতেন আমার একই বিল্ডিঙে। খুব মিশুক মানুষ, বুয়েটিয়ান একজন পেয়ে ব্যাক্তিগত আলাপই জমিয়ে দিলেন। তার বুয়েট লাইফের কথা, তখনকার স্যারদের কথা। এখন আর বুয়েটের খোঁজ তেমন রাখা হয় না তাও বললেন।

একটা কথা খুব ভালো মনে আছে। বলেছিলেন, "তানজিল, সময় মানুষকে কোথায় নিয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। বুয়েটে পড়েছি, কখনোই চিন্তা করিনি রাজনীতিবিদ হবো, মন্ত্রী মর্যাদার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়েছিলাম। লেখক হবো ভাবিনি, আমার বই বেস্ট সেলার হয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ী হবো ভাবি নি, সিরামিক শিল্পের বিশাল উদ্যক্তা হয়ে গিয়েছি। মানুষের ভালোবাসা পাবো ভাবি নি, অথচ দেশের ক্ষুদ্র একটা অংশ ঘৃনা করলেও অর্ধেকের বেশি তরুনের কাছে আইডল হয়ে গিয়েছি।

যা পাবার তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়ে গেছি। তাই সাহস বেশি। আর কিছু পাবারও নেই হারাবারও নেই। সব চেয়ে মজার ব্যাপার জেল খাটবো ভাবিনি, সেই আমি কয়েকটা বছর কাটিয়ে দিলাম এখানে।"

মনির ওস্তাদের কাছে একদিন দেখি অনেকগুলো গুড়োদুধের প্যাকেট। জিজ্ঞেস করলাম এগুলো কি করবেন? বললেন, এই জেলে একজন ধারনার চেয়ে ভালো মানুষ আছে। আমাদের মতো যে সব হতভাগার এখন পরিবার চালানোর কথা, অথচ জেলখানায় পড়ে আছি তাদের অবলম্বন তিনি। অক্ষমদের প্রায়ই এটা ওটা দেন। সামনে রমজান মাস তো, তাই আমাদের সবার জন্য এক প্যাকেট করে দিয়েছেন।


দু দিন পরে এক সকালে দেখি মনির ওস্তাদ খুব খুশি। কি ব্যাপার? বললেন স্ত্রীর চিকিৎসা যেন ফ্রি করে দেয় তার জন্য একটা লিখিত নিবো ভেবেছিলাম স্যারের কাছ থেকে। আজ পেয়েছি, সব সময় যাওয়ার সুযোগ হয় না তো!

সেদিনও বুঝতে পারিনি কার কথা বলছেন। কয়েকদিন পরে বললেন, আজকে স্যারের কাছ থেকে চাকুরির একটা সুপারিশ লিখে রাখলাম। দেখি, বের হতে পারি যদি কখনো, কে আর চাকুরী দিবে সেই বয়সে। স্যারের সুপারিশে যদি কিছু হয়।

কেন? তখন নিবেন! এবার হু হু করে কেঁদে নিলেন মনির ওস্তাদ। ভাই রে! ততদিনে লোকটারে যদি ফাঁসি দিয়ে দেয়?

এতদিন খুব একটা আগ্রহ পাইনি। আজ জিজ্ঞাসা করলাম, কে উনি?

মীর কাসিম আলী স্যার। খুব দয়ালু মানুষ। উনি এই জেলে আসার পরে কত মানুষকে যে কত কিছু দিয়েছেন?

এমন মানুষকে দেখার আগ্রহ না জন্মে পারে? কনডেম সেলে কারো সাথে দেখা করা বেশ কঠিন। তার পরেও মনির ওস্তাদ ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ফাঁসির জন্য অপেক্ষমান একজন মানুষের চোখে আমি জীবনের যে হাতছানি দেখেছি, স্বপ্নের মেঘ খেলতে দেখেছি, খুব আফসোস হয়েছে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের এর দশ ভাগের একভাগ যদি থাকতো!

ঈদের দুদিন আগে দেখি মনির ওস্তাদ মনের খুশিতে পাঞ্জাবী বিলি করে বেড়াচ্ছেন তার মতো অন্যান্য অসহায়দের মাঝে। স্যারের দেয়া পাঞ্জাবী।

শুধু পাকিস্তানের দুঃখটাই প্রথম পাতায় স্থান পাবে? মামলার সাক্ষ্মী একজনের জন্ম ৭৭ সালে তা পত্রিকায় আসবে না? যাদের নির্যাতনের অভিযোগ তাদের মধ্যেই কেউ কেউ বেঁচে আছেন, তারপরেও সাক্ষ্মী হিসেবে তাদের আনা হয় নি, সেগুলো স্থান পাবে না?

মীর কাসেম আলীর ব্যরিস্টার ছেলে কয়েকদিন ধরে গুম হয়ে আছে, তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এই খবরটা কি প্রথম পাতায় যায়গা পেয়েছিলো?

পাকিস্তানের দুঃখই পত্রিকায় আসবে, মনির ওস্তাদদের দুঃখটা আসবে না?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ড. ইউনুসের সরকার..........দীর্ঘ সময় দরকার!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫



সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির সারজিস আলম ড. ইউনুস সম্পর্কে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে। সে মোটাদাগে যা বলতে চেয়েছে তা হলো, ড. ইউনুসের আরো পাচ বছর ক্ষমতায় থাকা উচিত। অত্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেমন মুসলিম ??

লিখেছেন আরোগ্য, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:০৫



বিলাসিতায় মগ্ন মুসলিম জাতি তার আরেক মুসলিম ভাইয়ের নির্মম হত্যার সংবাদ শুনে কেবল একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেদের রাজভোজ আর খোশগল্পে মনোনিবেশ করে। হায় আফসোস! কোথায় সেই মহামানব যিনি বলেছিলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবাবিল পাখি আরবদেরকে চর্বিত তৃণের ন্যয় করবে! ছবি ব্লগ

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯


ফিলিস্তিনকে বোমা মেরে ছাতু বানিয়ে ফেললো ইসরাইল, অর্ধলক্ষ মানুষকে পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করলো তারপরও মধ্যপ্রাচ্যের এতোগুলো আরব রাস্ট্র শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে আর ভাবছে আমার তো কিছুই... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সাদা ফুলের মতই হউক তোমার মন= (ছB Bloগ)

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৭

০১।


=মন রাখো সাদা ফুলের মত পবিত্র=
যত কুঠিলতা দূর করো, মন করো সাদা নয়নতারার মত,
তুমি হতে থাকবে দূর দুঃখ যত।

০২। =মন করে নাও সাদা=
হিংসাগুলো করো দূর
মন উঠোনে করবে বিরাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা (বোনাস পর্ব)

লিখেছেন সামিয়া, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮



চারদিক হাততালিতে ভরে উঠলো।
বর্ষা আপু চিৎকার করে বলে উঠলো, "ইশান-অহনা!! অফিস কাপল অফ দ্য ইয়ার!!"
বুলবুল ভাই অহনাকে বললেন, “এখন বলো আসলেই সাগরে ঝাঁপ দিবা, না এই হ্যান্ডসাম যুবকটারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×