somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দৃষ্টি ফেরাই ওদের দিকেও

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দৃষ্টি ফেরাই ওদের দিকেও

‘খেতে পেলে কে চোর হয়?’- বঙ্কিমচন্দ্রের এই কথাটি যেমন সত্য তেমনি বাস্তব। মধ্যম আয়ের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এখনো এদেশে দরিদ্রের হার ২৫.৬%। প্রতিনিয়ত এখানে ঝরে পড়ছে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ, কখনো পেটের দায়ে কখনো সুযোগের অভাবে। শিশুর মাঝে দেশের উন্নতি সুপ্ত থাকলেও তারাই এদেশে সবথেকে বেশি অবহেলিত। গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহর, নগর পর্যন্ত প্রতিটি স্থানে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার শিশু। শিক্ষার আলো তো দূরের কথা দু’বেলা অন্ন যোগাতে অস্বাভাবিক পরিশ্রম করে তাদের ফিরতে হচ্ছে অন্ধকারের পথে। অথচ আমাদের সামান্য সহযোগিতাই দেশের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। বদলে দিতে পারে আগামী বাংলাদেশের সংজ্ঞা।
শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদটি তৈরি হলেও আজও তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আজও লক্ষ লক্ষ শিশু শিক্ষার নূন্যতম সুবিধা থেকে অনেক দূরে। পারিবারিক দারিদ্রতার কষাঘাতে অধিকাংশ শিশুই বেছে নিয়েছে জীবিকা নির্বাহের জন্য অনুপযোগী পেশা। ভেবে দেখার বিষয় হলো- একটি দেশ শুধু একপক্ষের সহায়তায় সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছাতে পারে না। তার জন্য প্রয়োজন সকলের মিলিত প্রচেষ্টা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী নিঃস্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের কর্মজীবী ও গরীব শিশুদের শিক্ষার অধিকার কিছুটা হলেও পূরণ করার জন্য। ২০০৮ সালে ফয়সাল আহামেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষাদানের একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। অনেক অনুরোধ উপরোধের পর ৩জন বাদাম বিক্রেতা শিশু পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। ভিত্তি রচিত হয় ‘তরী’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির। সারা দিন কাজ করে বিকেল বেলা ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ার পাশে শুরু হয় শিক্ষাদান। অ, আ, থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে একজনকে স্কুলেও ভর্তি করতে সক্ষম হন তিনি। দিন গড়িয়ে যায়। স্বেচ্ছাসেবী বন্ধুবান্ধবদের সাহায্যে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা। তিন থেকে পাঁচ, পাঁচ থেকে পনেরো এভাবে শুধু শিক্ষার সুবিধা বঞ্চিত শিশুই নয়, বাড়তি টিউশনির অভাবে, টাকার অভাবে যারা পড়ালেখা ছেড়ে দিতে চাইছিলো তারাও এসে যোগ দেয় এই ছোট্ট সংগঠনটিতে। ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তাদের শিক্ষাকে সহজ করে তোলে ‘তরী’। ৭ বছরের ব্যবধানে আজ সংগঠনটির মোট শিক্ষার্থী শতাধিক। শিক্ষক সংখ্যাও অর্ধশত। শিক্ষকদের যতেœ পাঠদান ও ‘তরী’র প্রাক্তন সদস্যদের সহায়তায় আজ জাবি ক্যাম্পাসের আশেপাশের গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো পাচ্ছে। তাদের চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন, বুকে প্রত্যয় ভালো মানুষ হয়ে দেশের সেবা করার। ‘তরী’ শিক্ষকদের মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্যাম্পাসের শিক্ষকবৃন্দ ও উপাচার্য। শুধু তাই নয় আশেপাশের দোকানে কর্মরত ছোট ছোট শিশুরাও কিছু সময়ের জন্য ছুটি নিয়ে ‘তরী’তে পড়তে আসার সুযোগ পাচ্ছে। সাহায্য করছেন তাদের দোকান মালিক ও সর্বস্তরের মানুষ। যখন ক্যাফেটেরিয়ার চত্বরে একসাথে অনেক গরীব শিশু লেখাপড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন তাদের প্রফুল্ল মুখ আর মনোযোগ দেখলে মনে হয় এই তো সমৃদ্ধ বাংলার ভবিষ্যৎ। এরাই তো আগামীর সম্ভাবনা।
একবার চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাংলাদেশের একটি ছোট্ট অংশের এই প্রচেষ্টা যদি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে তবে কোন শিশুই আর অশিক্ষিত হয়ে বেড়ে উঠবে না। অকালে ঝরে পড়বে না। এই সামান্য প্রচেষ্টা আমরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই করতে পারি। নিজ এলাকার গরীব শিশুদের নিয়ে গড়ে তুলতে পারি আরেকটি ‘তরী’। কর্মজীবী দরিদ্র মানুষকে বোঝাতে পারি শিক্ষার গুরুত্ব। তাদের অধীনে কর্মরত শিশুকে শিক্ষাদানের সুযোগ করে দিতে অনুরোধ জানাতে পারি। প্রতিটি শিক্ষিত মানুষ যদি একজন বঞ্চিত শিশুকেও শিক্ষার আলো দান করতে পারে তবে বাংলাদেশে আর নিরক্ষর বলে কোন শিশু থাকবে না। শিক্ষার আলো না পেলে এরা হয়ে থাকবে অশিক্ষিত, অসচেতনতা আর কুসংস্কারে পরিপূর্ণ। অগ্রগতির এই যুগে জাতির একাংশ নিমজ্জিত হবে অন্ধকারে। চাকুরির অভাবে বেছে নেবে অপরাধের পথ। সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্নকে নস্যাৎ করতে এটুকুই যথেষ্ট। অথচ একটু সচেতনতা ও সামান্য সহযোগীতাই এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। আমাদের সচেতনতাই পারে রাজন, রাকিব, ইয়াসিনের মত শিশুদের অকালে ঝরে পড়া থেকে বাঁচাতে। শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারলে একদিকে তারাও যেমন উপকৃত হবে তেমনি অপরদিকে নিরক্ষতার কবল থেকে মুক্ত হবে দেশ।
দায়ভার এড়ানো খুব সহজ কিন্তু সেই প্রকৃত মানুষ, যে দায়িত্ব না এড়িয়ে তাকে পালন করতে বদ্ধ পরিকর। একথা অনস্বিকার্য যে আজকের শিশুর শিক্ষাই আগামীর সমৃদ্ধির চাবিকাঠি আর শিক্ষা ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়। ঘৃণ্য রাজনীতি, দুর্নীতি, কূটনীতি, স্বর্থপরতা আর হিংসায় আজ দেশ অস্থির। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যা যেমন সৃষ্টি হচ্ছে তার প্রতিকার করার চেষ্টাও তেমনি চলছে। সংসদে পাশ হচ্ছে নতুন নতুন বিল। কোনটা আংশিক বাস্তবায়িত হচ্ছে আবার অনেক সমস্যা সমস্যাই থেকে যাচ্ছে। এই অজ¯্র সমস্যার মাঝে বঞ্চিত শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার কথা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। মুখে মুখে, এমনকি কাগজ পত্রেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অথচ ভবিষ্যতের জন্য এটিই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নয়ণের এই যুগে অন্য সব বিষয়ের সাথে বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার বিষয়টিকেও তাই গুরুত্ব দিতে হবে। নিজের সাধ্য অনুযায়ী নিজ অবস্থানে থেকে চেষ্টা করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশকে সমৃদ্ধ করে তোলার দায়িত্ব আমাদেরও।


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×