ক্যারিয়ার,জীবন আর প্রত্যহ ঘোড়ার লাগামের ন্যায় চাহিদার উর্ধগতির জন্য জীবন যখন যায় যায় অবস্থা তখন স্বপ্নের ন্যায় এক কন্যা এসে হাজির ।তাহার বাসা-বাড়ি কোথায় না জানিয়া কিছু না বলিয়াই নিজের গন্তব্যে পৌছাইতে গাড়ি খুজিতে লাগিলাম । ভাগ্য আর ভাগ্য! কি যে ভাগ্য আমার ! একটা গাড়িও খুজিয়া পাইলাম না । না পাওয়ার অন্যরকম কারণ ছিল বৃষ্টি ।যদিও এই জিনিসটা আমার খুব পছন্দের তবুও ঐ নির্দিষ্ট সময়ে আমার কাছে ব্যাপক অসহ্যকর একটা ব্যাপার মনে হইতেছিল । কি করা উচিত বুঝিতে না পারিয়া নিজের পা'এর দিকে দৃষ্টিক্ষেপণ করিয়া বলিলাম --'চলেন দেখি,কতদূর যাওয়া যায় !' আমাদের অফিসে তো অনেকেই কাজ করে ,কিন্তু আজকে তো কাউকে রাস্তায়ও দেখছি না যে লিফট চাইব,ধুর্বাল ! প্রভাতে যে কাহার মুখচন্দ্র দেখিয়া জাগ্রত হয়েছিলুম !! পরিশেষে একখানা রিকশা যথাযোগ্য ভাড়ায় যোগাড় করিতে পারিয়া নিজেকে পলাশীর যুদ্ধজয়ী মনে হইতেছিল । এহেনভাবে নিজেকে সিরাজউদ্দৌলা ভাবিতে ভাবিতে ভাবনায় কোথা হতে যেন ঘসেটি বেগম হাজির হইয়া গেল । আমার ভাবনায় এহেন ছেদ পড়াতে আমি যারপরনাই ক্ষুদ্ব,কিন্তু ঐ ঘসেটি বেগম তাহা না দেখিয়া আমাকে লিফট দিতে বলিলেন । আমি অত্যন্ত ক্রুদ্ব হইয়া বলিলাম--'ইহা কি ইউরোপ পাইয়াছেন ,যে আমি BMW নিয়ে যাচ্ছি আর লিফট বিলি করে বেড়াচ্ছি ? নাকি কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের মেডিকেল সার্টিফিকেট ?'
অত্যন্ত রাগবশত কিছু বাক্য বিনিময় করিয়া নিজেকে ছোট মনে হইতে লাগিল । তবে যাহাকে ঘসেটি বেগম বলিতেছিলাম তাহার চেহারার পানে দৃষ্টিপাত করিয়া মনে হইল আমার মঙ্খানার মধ্যে কেহ যেন মাখন লাগাইয়া দিল । ছোটবেলায় ঘসেটি নামটা শুনলেই একজন মোটা,গাল ফুলা,অসম্ভবভাবে নাক খাড়া মহিলার কথা চিন্তায় উঁকি মারে কিন্তু এই যে ইনি তো বিপরীত । হাসিমুখে যখন লিফটের কথা বলিতেছিল তখন গালে খুব সুন্দর একটা টোল পড়াটা চোখে না পড়ার যথোচিত কারণ রয়েছে কিন্তু চোখের মধ্যে আকুতি দেখিয়া না করার কোন ক্ষমতা থাকিল না । আমি আবার মেয়ে মানুষ একটূ ভয় পাই কিনা ! অনেক কিছু ভাবিবার পর মনে হইল-কিশোরীর অকৃর্ত্রিম-বিলাস-লক্ষণ শূণ্য প্রণয়ে হৃদয় স্নিগ্ধ হয় ।নিজের এহেন জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পাওয়ার সময়ে বঙ্কিমদার একটা কথা মনে আসিল -'পুরুষেরা যখন মহিলাগণের মোহিনীশক্তির বশীভূত হইয়া তাহাদিগের রূপের বর্ণারম্ভ করেন তখন তাহার যে কি বলেন ভাবিলেও বিষ্মিত হইতে হয় !'
পাশে বসা মেয়েটিকে বিওন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়া নিজের সদ্য ক্রয় করা মুঠোফোনট বাহির করিয়া মুখচ্ছবি ব্যাবহার করিতে লাগিলাম । ততক্ষণে রিক্সা আমার বাসার সম্মুখে পৌছাইয়া গেল,আমি ভাড়া মিটাইতে চাহিলাম কিন্তু আমাকে অবাক করিয়া দিয়া মেয়েটি নেমে আমার বাসার গেটে দৌড়াইয়া যাইয়া বলিল-আপনি ভাড়া মিটাইয়া দেন । আমি বাসা থেকে আপনার নিকট ক্কখাণিকক্ষণ বাদেই পাঠিয়ে দিচ্ছি । আমি ঘটনার আকষ্মিকতায় অবাক হইয়াও হইতে পারিলাম না । কারণ এতে আমার সদ্য আয় করা ভাবের বেলুনখান ফুটিয়া যাইবে । শুধু মনে মনে ঐ রমণীর কপটতার কথা চিন্তা করিতে লাগিলাম যে--আমও খেল,খোসাও ফেলিল না ।
তবে মনের বা দিকের একটু উত্তর-পশ্চিম কোণাতে মেয়েটির জন্য পোলাও,কাবাব,কোফতার সুগন্ধের ন্যায় মৃদু ফুটফুটবুটবুট টগবগধ্বনি উঠিতে লাগিল ।
বয়েস তো আর কম হয়নি । বড়সড় একুখানা কর্ম্ম ও করি । মেয়েটির সাথে বিয়ে থা করে ফেলিলে কেমন হয় ?বাবা-মার প্রবর্তনায়,তাহাদের বাসায় সন্ধান লাগাইবার চিন্তা করিলাম ,তাহারা আমাকে চপেটাঘাত করিবার ভয়ে পিছাইয়া যাই ।
চিন্তা করিলাম-মেয়েটিকেই বলি,তাহার আকার-আকৃতি দেখিয়া আমার মনে হইয়াছিল তাহার বিবাহের বয়স হইয়াছে তবে কি সে বিবাহের কাজ সারিয়া ফেলিয়াছে ?হৃদয়খানার মধ্যে জ্বলিয়া ওঠা টিউবলাইটটি হঠায় নিভিয়া গেল । পরদিন মেয়েটিকে উপরের তলা হতে নামিতে দেখিয়া তাহার পিছু নিলাম । তিনি ব্যাপারখান আঁচ করিতে পারিয়া কিছুদূর অতিক্রম করিবার পর হঠাত পেছন ফিরে একখানা চাহনি দিলেন । আমি তাতেই কাত বলিলেন-পিছু ধরেছেন কেন ?
আমি- আপনার বিবাহ সম্পন্ন হইয়াছে ?
উনি-আপনি ঘটক ?
আমি-না,বর ।
উনি-আপনার মত গবেটকে আমি কি ভাবিয়া বিবাহ করিব?
আমি-আজ্ঞে,জামাই ভাবিয়া। তথাপি আমি গবেট নই ।
উনি-আপনি গবেট বৈকি আর কিছু নন আপনার মুঠোফোনে বিগত কয়টা প্রেমিউকার ক্ষুদেবার্তা আর নম্বর আছে তার হিসাবই তো দিতে পারিবেন না ।
এক বছর পর কোন গল্প লিখিলাম । ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।