গল্পের শিরোনাম দেখে ভুল করবেন না,গল্পটি সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন আশা করি ,কয়টা মিনিট ই তো লাগবে !
এই নীহাল,হলে যাবি না?
-মা,আরেকটু ঘুমাতে দাও তো,কতদিন এভাবে ঘুমাই না,কয়টা বাজে?
-সাত টা বাজে । তোর মোবাইলটা সকাল থেকে বাজছে । তুই কি ঘুম ঘুমাস? আমি জেগে গেলাম আর তোর কোনো খবর নাই ।
-সাতটা বাজে? আয় হায়! সকালেই ক্লাস আছে ।হলে জিনিসপত্র রেখেই ক্লাসে যেতে হবে । শিট ।আম্মা নাস্তা রেডি কর । ড্রাইভার কে বল গাড়ি বের করতে,আমি ৫ মিনিটের মধ্যে আসছি ।
নাস্তা খেয়ে নীহাল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল । জাবিতে পড়ে সে । আজকেই হলে উঠার কথা ।এতক্ষণে মোবাইল দেখার সময় পেল ,আনলক করেই দেখে ৯ টা মিসড কল,প্রায় সবগুলোই নাতাশার দেয়া,নাতাশা ওর গার্লফ্রেন্ড । এইটা তো আজকালকার ফ্যাশন হয়ে গেছে । ভার্সিটিতে পড়লে তো গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড থাকবেই ।
ছোট বেলা থেকেই নীহাল বেহেশতী ভালোবাসার প্রতি আকর্ষীত । রোমিও-জুলিয়েটের জন্য যখন সবাইকে এসাইনমেন্ট লিখতে দেয়া হয়েছিল,তখন নীহাল ৩ পাতার এসাইনমেন্টে লিখেছিল--ধুর,এইসব কিছুতে কোন লাভ নাই,রোমিও তো আন্ডারএজ।এই রসকষ হীন মানুষ হচ্ছে নীহাল ।
নীহালের আশেপাশে সবাই ব্যাটিং করছে । নীহাল কি অডিয়েন্স হবে নাকি? তাই নাতাশার আগমন । নাতাশাও কম যায় না। নীহাল কে যতটা টাইট দিয়ে রাখতে পারে ।
আসলে ভালোবাসা কি? ভালোবাসা হচ্ছে নিঃস্বার্থ ভাবে নিজেকে কোন কিছুর জন্য বিলিয়ে দেয়া -অনেকের কাছে এইটা ব্যাক্তি বিশেষ হতে পারে,অনেকের কাছে অন্য কিছু ।
হলে ব্যাগ রেখেই ক্লাসে দৌড় । পথে নাতাশা । নাতাশা জিজ্ঞেস করল-কি ব্যাপার? ফোন করলে ফোন ধরনা?তুমি কি অন্য কারো সাথে রিলেশন করতেছ নাকি?
-আরে ধুর! কি যে কও না! তোমারে ছাড়া আমার চোখে আর কিছু পড়ে নাকি ? এখন ক্লাস আছে,ক্লাস থেইকা বের হইয়া কথা বলব নে । টাটু ।
ক্লাসে ঢুকতেই সামি জিগাইল-ঐ হারামি,কালকে ফোন ধরস নাই ক্যান,গাঞ্জা খাইয়া ঘুমাইতাছিলি? শালা,তোর ভিতরে ফিলিংস নাই? ভাইব্রেট হইলেও তো জাইগা যাওয়ার কথা।
-কেন ফোন দিছিলি ঐটা ক।
-ভার্সিটির যেই অবস্থা,তোরে হলে আসতে মানা করার জন্য ফোন দিছিলাম ।
-আরে ধুর! এইগুলা ব্যাপার না ।
নাতাশার কি খবর? তুমি তো আবার হেরে ছাড়া থাকতে পারবা না?এল্লিগাই নি আয়া পড়ছ?
-বাদ দে তো!
বোরিং লেকচারের পর ক্লাস থেকে বের হতেই দেখে নাতাশা দাঁড়ায়া আছে । নীহাল বলল-চলো,জেনেটিকের সামনে যাই ।
-হুম,চ্লো। সমাজবিজ্ঞানের সামনে যেই গ্যাঞ্জাম!
জেনেটিকের সামনে গিয়ে নীহাল যেভাবে লাজুক দৃষ্টিতে নাতাশার দিকে তাকিয়ে রইল মনে হইতেছিল যেন কিচ্ছু বুঝে না । নাতাশা আনলিমিটেড কথা বলতেছিল,যত রাগ ছিল সব ঝাড়তেছিল । কিন্তু নীহালের চেয়ে থাকা দেখে কথা থামিয়ে জিজ্ঞেস করল-এই,এমনে কি দেখো? আমার কি রূপ বাড়ছে?
--উহু! থামলে কেন? বলো না!!
--তুমি শুধরাবে না?
--হা হা! !আচ্ছা,তুমি সবসময় আমার বাম পাশে বস কেন?
--তোমার বাম পাশের পাঁজর দিয়েই যে আমাকে আল্লাহ বানাইছেন ,তাই!! আচ্ছা বাবু চলো না এখান থেকে বের হয়ে যাই !এখানে ভাল্লাগতেছেনা।প্রতিদিন মারামারি,ক্যাচাল।অস্বস্তি লাগে।
--আরে কিচ্ছু হবে না।চিন্তা কইর না। চল উঠি,অনেক ফাঁকি দিছি বাড়িতে গিয়ে । কিছু তো পূরণ করতে হবে।
--আচ্ছা,চল। ওহ!আরেকটা কথা।আমরা কিন্তু এই সপ্তাহের শেষে আমরা ঘুরতে যাব কিন্তু ।
-কই যাবা?
-জানি না , এইখানে এখন দম বন্ধ হয়ে আসতেছে ।
নীরবতা ভেঙ্গে নীহাল বলল-হুম!আজকে মিটিং এ বসার কথা সব দলের কর্মীদের সাথে । মিটমাট করে ফেলতে হবে ।আর একটা কথা -আমরা যাচ্ছি । অনেকদিন ডেটিং ও মারি না তোমার সাথে । এখন আপাতত হাতের উষ্ণতা ই দাও । আমি যাই । মিটিং এ যাব,ফোন দিও ।
পরের দিনঃ
ছাত্র হত্যার সংবাদে পুরো হল স্তব্ধ,পুলিশ ঘটনাস্থলে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না । ক্যাম্পাসের ভিতরে সব দোকানপাট বন্ধ । নীহালের নিথর দেহটি মেঝেতে পড়ে আছে । নাতাশা অজ্ঞান হয়ে তার বাম পাশেই পড়ে গেল । কবির সাহেব তার ছেলেকে নিতে আসলেন স্ত্রীকে নিয়ে। মিসেস কবির ছেলের নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন । তাদের সবাইকে শুধু এতটুকুই জানানো হয়েছে যে--মিটিং এ যখন কোনভাবেই কোন সমাধান হচ্ছিল না,তখন ছাত্রবেশে কিছু পশু অস্ত্র বের করে একে অপরের দিকে তাক করে । তাদের মধ্যে মিল ঘটানোর জন্য নীহাল মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলে পিঠে এবং বুকে ১৫ টি বুলেট ঢুকে ।
তাজা প্রাণ টি দুই মিনিটের মধ্যে নিথর দেহ হয়ে পড়ে গেল শুধুমাত্র ছাত্র রাজনীতির কারণে । ছাত্র রাজনীতির দরকার আছে কিন্তু তা ভালো কাজে ব্যবহার করার জন্য,যোগ্য নেতা গড়ে তোলার জন্য।খুনাখুনি,মারামারি ছাত্রদের বিষয় নয় ।
গল্পের শিরোনামের অর্থ হচ্ছে মনোকল্পিত বিষয়,নিজের মনগড়া । ব্যাপারটা পুরো কাল্পনিক । কিন্তু বাস্তবে যাতে রূপ না পায় তার জন্য ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা । দয়া করে সবাই সতর্ক থাকি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:১৯