somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা কিংবা ঘৃণার গল্প

০৬ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রোদেলা বিকেলের নরম আলোর মধ্যে, ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাগুলো যেন জীবনের বিশালত্ব আর দুঃখের মিশ্রণ হয়ে উঠেছে। নীলার হৃদয়ও যেন তেমনি এক বিশাল দুঃখ আর আনন্দের সমুদ্র। নীলা, একটি উচ্চশিক্ষিত ও সাহসী মেয়ে, যিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করেন। কিন্তু তার জীবনের পেছনে লুকিয়ে আছে একটি গভীর আঘাত, যা তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়।

একদিন অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে, নীলা একটি দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়। তার সামনে থাকা একটি মোটরবাইক অজান্তেই দ্রুত গতিতে একটি বাসের সাথে ধাক্কা লাগে। নীলা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায় এবং আহত মোটরবাইক চালককে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়।

"ভাই, আপনি ঠিক আছেন?" নীলা প্রশ্ন করে, তার কন্ঠে ছিল উদ্বেগ।

মোটরবাইক চালক, যার নাম রুদ্র, চোখ মেলে তাকায়। "হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। ধন্যবাদ," রুদ্র জবাব দেয়, কিন্তু তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত বিষন্নতা।

নীলা রুদ্রকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সেখানেই তাদের পরিচয় শুরু হয়। রুদ্র একটি ছোট স্টার্টআপের মালিক, যে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। তার জীবনেও আছে কিছু দুঃখের স্মৃতি, যা তাকে জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।


নীলা ও রুদ্রের মধ্যে একটি অনন্য বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারা প্রতিদিন একে অপরের সাথে কথা বলে, নিজেদের জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়। সময়ের সাথে সাথে, নীলা অনুভব করে যে রুদ্র তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। রুদ্রও নীলার প্রতি বিশেষ অনুভূতি পোষণ করে, কিন্তু তিনি জানেন না কিভাবে তা প্রকাশ করবেন।

একদিন, নীলা রুদ্রকে একটি কফি শপে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানেই তারা একে অপরের প্রতি নিজেদের অনুভূতির কথা বলে।

"রুদ্র, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই," নীলা বলল, তার কন্ঠে ছিল কিছুটা সংকোচ।

"কি বলবে, নীলা?" রুদ্র প্রশ্ন করে, তার চোখে ছিল গভীর আগ্রহ।

"আমি তোমাকে ভালোবাসি, রুদ্র," নীলা ধীরে ধীরে বলে। রুদ্র কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর হাসি দিয়ে বলে, "আমি তোমাকে অনেক দিন ধরেই ভালোবাসি, নীলা।"


নীলা ও রুদ্রের জীবনে সবকিছুই যেন ভালো চলছিল, কিন্তু একদিন একটি পুরনো শত্রু তাদের জীবনে ফিরে আসে। রুদ্রের পুরনো ব্যবসায়িক অংশীদার রাকিব, যে তাকে প্রতারণা করে ব্যবসা থেকে বিতাড়িত করেছিল, হঠাৎ করেই তাদের জীবনে প্রবেশ করে। রাকিব নীলার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে এবং তার মাধ্যমে রুদ্রকে আবারও আঘাত করার চেষ্টা করে।

রাকিব একদিন নীলাকে একটি বিপদজনক পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়, যেখানে নীলা জীবন-মৃত্যুর সীমানায় দাঁড়িয়ে ছিল। রুদ্র যখন জানতে পারে, তখন তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নীলাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তারা দুজনেই তখন বুঝতে পারে যে তাদের জীবনে সংঘাত কেবল বাইরের শত্রুদের সাথে নয়, তাদের নিজের মনেও চলতে থাকে।


নীলা ও রুদ্রের জীবনে এই সংঘাতের পরও, তারা একে অপরের প্রতি তাদের বিশ্বাস ও আস্থা পুনরুদ্ধার করে। তারা বুঝতে পারে যে ভালোবাসা কেবল সুখের মুহূর্তেই নয়, বরং দুঃখের সময়েও একে অপরকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।

রাকিবের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায় এবং সে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। নীলা ও রুদ্র তাদের জীবন আবার নতুন করে শুরু করে। তাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয় এবং তারা বুঝতে পারে যে জীবনের সব দুঃখ ও সংঘাত পেরিয়ে, সত্যিকারের ভালোবাসা সবসময় বিজয়ী হয়।


নীলা ও রুদ্রের গল্প শেষ হয়নি, বরং এটি কেবল শুরু। তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রেম, ঘৃণা, এবং সংঘাত থাকবে, কিন্তু তারা জানে যে একে অপরের পাশে থাকলে তারা সবকিছু পেরিয়ে যেতে পারবে। তাদের গল্প আমাদেরকে শেখায় যে জীবনের প্রতিটি দুঃখের মুহূর্তে, একটুখানি ভালোবাসা সবকিছু বদলে দিতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×