somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ Three Colors Trilogy

২২ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রের প্রতি আমার একটা বিতৃষ্ণা ছিল। এই বিতৃষ্ণার মূল কারণ সেই ভাষা বোঝার অক্ষমতা। সিনেমার সংলাপের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সিনেমার অনেক কিছুই দেখতে বাদ পড়ে যায়। অনেক সময় ডায়লগ পড়েও বুঝতে পারি না যে আসলে কি বোঝাতে চাইছে। মাঝে মাঝে এমন হয়েছে পুরো সিনেমা দেখে ফেলেছি কিন্তু অনেক কিছুই বুঝতে পারিনি। এভাবে একসময় বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রের প্রতি আমি পুরোপুরি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। এতো কষ্ট করে আর যাই হোক সিনেমা দেখা যাবে না।
ভাগ্য ভালো আমি আমার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলাম। একবার ফরাসি ভাষা শেখার খুব শখ হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে কিছু ফরাসি ভাষার চলচ্চিত্র দেখেছিলাম। সেও অনেক আগের কথা। তার মধ্যে খৃস্তভ কিসল্ভস্কির (Krzysztof Keislowskhi) Three colors trilogy : Blue, White, Red ও ছিল। এটা মানুষের জীবনের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা নিয়ে নির্মিত এক অসাধারণ সিনেমা ত্রয়ী। আমার দেখা অন্যতম সেরা ফিল্মগুলোর মধ্যে এই ত্রয়ী অবশ্যই থাকবে।
প্রত্যেকটা ফিল্মই আমার মনে গভীর অনুভুতির ছাপ রেখে গেছে। একটা সিনেমা দেখে জীবন সম্পর্কে ধারণা বা নিজেকে পাল্টে ফেলার মতো লোক আমি না। তারপরও প্রতিবার এই ত্রয়ীর কথা যখন ভাবি, বুকের মধ্যে ভিন্ন একটা অনুভুতির স্বাদ পাই আমি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ফিল্মটা হয়তো আমাকে প্রভাবিত করছে। এই অনুভুতিকে কি নামে ডাকা যায় তা আমি জানি না। শুধু একটা জিনিষ বুঝতে পারি – সে সময় জীবনকে অন্যভাবে দেখাতে ইচ্ছা করে।
আমার মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই কিছু কিছু বিশেষ সময় আসে যা তার জীবন পাল্টে দেয়। এই বিশেষ সময়গুলো তার সাথে করে কখনো আনন্দ নিয়ে আসে, কখনো দুঃখ আবার কখনো বা নিয়ে আসে ভয়াবহ একাকিত্ব। Three Colors Trilogy আপনাকে সেই অনুভূতির খুব কাছাকাছি নিয়ে যাবে। চলচ্চিত্র বোদ্ধারা মনে করেন এই ত্রয়ীর প্রথম পর্বটি Anti-Tragedy, দ্বিতীয়টি Anti-Comedy আর তৃতীয়টি Anti-Romance.
আচ্ছা, অনেক কথা বলে ফেললাম। এবার একে একে সিনেমাগুলোর কাহিনী সম্পর্কে আপনাদের একটা ধারণা দিয়ে দেইঃ-

প্রথম পর্বঃ Three colors : Blue (1993)



IMDB Rating: 8.0/10

অনেকে বলে বেদনার রঙ নীল। ঠিকই বলে হয়তো। খ্যাতিমান সুরকার প্যাট্রিস দ্য ক্যুসি এবং তার মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে তাঁর স্ত্রী জুলি ভিগনন দ্য ক্যুসির জীবনে নেমে আসে বেদনার নীল অন্ধকার। প্রথমে সে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এবং ব্যর্থ হয়। এরপর জীবন থেকেই জুলি পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করে। তাদের বিরাট বাংলো, সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে সে ফেরার হয়ে যায়। হয়তো কিছুটা সফল হয়, হয়তো হয় না। বেঁচে থেকে আসলে জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া যায় না।



হয়ত সে কারণেই তাঁর জীবনে অলিভার আসে আবার চলেও যায়। তাঁর স্বামীর প্রেমিকা অথবা নীচ তলার সেই মেয়েটা যাকে সবাই নষ্ট বলেই জানে তার ভেতরের মানুষটাও জুলির জীবনে অন্যভাবে উপস্থাপিত হয়।





বেঁচে থাকার সমস্ত অবলম্বন হারিয়েও জুলি কিভাবে আবার বেঁচে থাকার পথে ফিরে আসে ব্লু সেই গল্পেরই উপাখ্যান।



একটু মন্থর গতির সিনেমা বলে হয়তো এটা শুরুতেই আপনাকে হতাশ করবে। কিন্তু আপনি যদি ধৈর্য্য নিয়ে বসে থাকেন তাহলে এই সিনেমা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
জুলি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুঅভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ। মানানসই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আর চমৎকার অভিনয়ের কারণেই এই সিনেমা আপনার মনে পাকাপাকিভাবে একটা জায়গা করে নেবে।



দ্বিতীয় পর্বঃ Three colors : White (1993)



IMDB Rating: 7.7/10

দ্বিতীয় পর্বকে বলা হয় Anti-Comedy। শুরুতে ক্যারল কে দেখে আপনারও হাস্যকর মনে হবে। সিনেমা সামনে এগুতে থাকলে আপনার মুখের হাসি এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে।



ক্যারলের স্ত্রী ডমিনিক বিবাহ বিচ্ছেদ চায়। কারণ অতি গুরুতর। বিয়ের পর ক্যারল শারীরিকভাবে ডমিনিকের সাথে মিলিত হতে পারেনি। মানসিক দিক থেকেও ক্যারল ডমিনিকের কাছ থেকে অনেক দূরবর্তী। যদিও ক্যারল ডমিনিককে প্রচন্ড ভালবাসে এবং তাঁর কাছে ফিরে পেতে চায়, কিন্তু ডমিনিক অত্যান্ত নির্মমভাবে ক্যারলকে ফিরিয়ে দেয়। এমনকি তার ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়ে, পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করে তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।



দেশ ছাড়ার পর এক সময় ক্যারল জীবনে ঘুরে দাঁড়ায়। অনেক নাটকীয়তার পর একসময় সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে হয়তো ফিরে পায়, হয়তো পায় না।



চমৎকার কনসেপ্টের একটা মুভি। বার বার দেখা যায়। প্রত্যেক অভিনেতা অভিনেত্রীর অভিনয় আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর সিনেমা শেষে আপনার অবশ্যই মনে হবে এই সিনেমা আমি আগে দেখিনি কেন।


তৃতীয় পর্বঃ Three colors : Red (1993)



IMDB Rating: 8.1/10

ভেরনিকা একজন উঠতি ফ্যাশন মডেল। মিশেলকে সে ভালবাসে। নিজের কাজে যে এখন ইংল্যান্ডে আছে। দূরে থাকলেও মিশেলের মনে যে সন্দেহের বিষবাষ্প দানা বেঁধে আছে তার ছোঁয়া ভেরনিকাকে বিব্রত করে। তবে ভেরনিকা মিশেলকে সত্যিই ভালবাসে।



একদিন কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে নিজের অজান্তেই ভেরনিকা একটা কুকুরকে ধাক্কা দিয়ে আহত করে। ট্যাগ দেখে সে কুকুরটিকে তার মনিব, অবসর প্রাপ্ত বৃদ্ধ বিচারক বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। নির্লিপ্ত সেই বৃদ্ধ তাঁকে জানায়, সে আর কুকুরটিকে ফিরিয়ে নিতে চায় না। বৃদ্ধের রূঢ় আচরণে বিরক্ত হয়ে ভেরনিকা কুকুরটিকে নিজেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর কুকুরটিকে তার কাছ থেকে পালিয়ে সেই বৃদ্ধের কাছে ফিরে যায়। কুকুরটির খোঁজ নিতে গিয়ে সেই বৃদ্ধের বাসায় গেলে এবার ভেরনিকা জানতে পারে, এই বৃদ্ধ বিচারক লুকিয়ে লুকিয়ে তার প্রতিবেশীদের ফোনে আড়িপাতে।






বৃদ্ধের কর্মকাণ্ড আর ব্যবহারে বিরক্ত হলেও একসময় তার সাথে একধরণের সখ্যতা গড়ে ওঠে ভেরনিকার। ভেরনিকার জীবনের গতিপথ ধীরে ধীরে এক আমোঘ পরিনতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
কেবল ভেরনিকা আর বৃদ্ধ বিচারকের গল্পের কেন্দ্রে থাকলেও আরেক তরুণ, সদ্য বিচারকের দায়িত্ব প্রাপ্ত অগাস্টের গল্পও এই সিনেমায় আছে। সে কথা এখানে আর বললাম না। সিনেমার মজাটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
উৎসাহী পাঠকদের জন্য একটা তথ্য দেই নীল, সাদা আর লাল এই তিনটি রঙ বেছে নেয়া হয়েছে ফ্রান্সের পতাকার তিনটি রঙ থেকে। ফ্রান্সের পতাকায় এই তিনটি রঙ যথাক্রমে Liberty বা স্বাধীনতা, Equality বা সমতা এবং Fraternity বা ভ্রাতৃত্ববোধ বোঝায়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট নিউজ পেপারের এক সাক্ষাৎকারে কিসল্ভস্কি বলে ছিলেন,
“The words [liberté, egalité, fraternité] are French because the money [to fund the films] is French. If the money had been of a different nationality we would have titled the films differently, or they might have had a different cultural connotation. But the films would probably have been the same.”
ব্যস। এই পর্যন্তই। সময় করে দেখে নিন এই এসাধারন সিনেমাগুলো।


আরো জানতেঃ

১) Three colors : Blue (1993)

২) Three colors : White (1993)

৩) Three colors : Red (1993)


আমার অন্যান্য রিভিউগুলোঃ

১) মুভি রিভিউঃ “π”
২) মুভি রিভিউঃ The Lunchbox
৩)মুভি রিভিউঃ Dead Poets Society
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×