(১)
হ্যাঁ, লেখো
আমি একজন আরব
আমার কার্ড নম্বর হলো পঞ্চাশ হাজার
আমার আটটি সন্তান
নবমটি পরবর্তী গ্রীষ্মে জন্মাবে,
তুমি কি রাগ করলে?
লেখো
আমি এক আরব
সাথি শ্রমিকের সাথে আমি পাথর ভাঙ্গি
অমানুষিক পরিশ্রমে আমি পাথুড়ে পাহাড় ভেঙ্গে
নুড়ি করি-
এক টুকরো রুটির জন্যে
আমার আট সন্তানের একখানি বইয়ের জন্যে
কিন্তু আমি দয়া-দক্ষিণা চাই না
আর তোমার কর্তৃত্বের কাছে মাথা নোয়াইনা
তুমি কি রাগ করলে?
লেখো, হ্যাঁ লিখে নাও
আমি একজন আরব
আমি উপাধীহীন একটি নাম
উন্মত্ত পৃথিবীতে এখনও স্থির
স্থান ও কালের সীমানা ছাড়িয়ে
আমার শিকড় খুব গভীরে প্রোথিত
আমি কৃষকের সন্তান।
নলখাগড়া ও কড়ের তৈরি কুঁড়েঘরে
আমি বাস করি,
চুল আমার মিশকালো
চোখ: বাদামি
আমার আরবি শিরোভূষণ
কেড়ে নিয়েছে অনুপ্রবেশকারীর হাত,
আমি পছন্দ করি ভোজ্যতেল ও সুগন্ধি লতাগুল্ম
লেখো
এবং সবার উপরে
দয়া ক'রে লিখে রাখো-
আমি কাউকে ঘৃণা করি না
আমি কেড়ে নেইনি কারো সমূহ সম্পদ,
কিন্তু, আমি যখন অনাহারী
আমি নির্দ্বিধায় ছিঁড়ে খাই
আমার সর্বস্ব-লুন্ঠনকারীর মাংস
অতএব সাবধান
আমার ক্ষুধাকে সাবধান
আমার ক্রোধকে সাবধান।
যারা শুধু ধ্বংস করে
মানুষ খুন করার নেশায় পাগল হয়ে যায়
সেই বর্বরদের বিরুদ্ধেই কেবল আমরা অস্ত্র ধরি।
পৃথিবীটাই বদলে গেছে,
প্রবল ভূমিকম্পে উপত্যকার পুষ্প ঝরে যাক
তীক্ষ্ণ ছুড়ি সংক্ষিপ্ত করুক পাখির কলগীতি
বারুদের গুঁড়োয় পুড়ে যাক শিশুদের ভ্রুপল্লব-
মানুষের খুলির ওপর, ধ্বংসের ওপর
সর্বনাশা হায়েনার ছোবলে ছেঁড়াখোড়া জঞ্জালের ওপর
স্ফুলিঙ্গের জন্ম হোক
ভয় নেই, প্রতিটি গৃহে তলোয়ারের টোকা পড়বে।
এসো, তীব্র ঘৃণা এবং ক্রোধের ঘাম পান করো
এই যুদ্ধ তোমার রক্তে আনুক নতুন জোয়ার
মুখ থেকে তোমার নেকাব খুলে পড়ুক,
আজ তোমার মুখ জ্বলন্ত ফুলের মত
তোমার বোবা অধর বিজয়ের লাল গোলাপের মত।
যদিও তোমার টাটকা জখম থেকে ধোঁয়া উঠছে
আর তার স্বাদ নোনতা
তবু প্যালেস্টাইন, প্যালেস্টাইন আমার, তোমার জয় হোক।
জয় হোক।
তুমি নিজেই আজ জানাজার কাফন পড়ে যাও
হয়ে যাও রক্তাক্ত ক্রোধ
হয়ে যাও বীভৎস রোশ
তোমার শিরায় শিরায় রক্তের বদলে বয়ে যাক নীল গরল
ক্ষমাহীন ঘৃণা
আর তীব্র জ্বালা
আরব জনগণের কাছ থেকে হত্যাশা তো কবেই পালিয়েছে
আর আমাদের ধৈর্য এখন টগবগ করে ফুটছে
প্রতিটি বদ্ধ মুষ্ঠি ছিড়ে ফেলেছে সমস্ত বাঁধন
ঘোর আঁধার ভেঙ্গে উদিত হচ্ছে নতুন দিন
সমবেত আকাঙ্খা দীর্ঘতর হচ্ছে বিধানের বন্দনায়,
নির্মল সতেজ ডানা জীবন্ত আর সবুজ
অপেক্ষার ধনুক অধৈর্য
শরসন্ধানি উড্ডীন ঈগলের হানার ক্ষুদার্ত দাঁত অপেক্ষমান
কত আর অপেক্ষায় থাকব?
পাথরের সুউচ্চ পিরামিড অগ্নিবানে অধৈর্য
কোহাহলমুখর বিমানবন্দর যেন ঘাতকের নাসিকার নাসিকার গর্জন
প্যালেস্টাইন, তোমার প্রতিটি গৃহই এখহন দুর্গ
তোমার প্রতিটি কমাণ্ডো-সন্তান
রণক্ষেত্র থেকে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসবে
স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দাশ্রূ ঝ'রে-ঝ'রে
পড়বে তোমার গাল বেয়ে,
প্যালেস্টাইন,
তখনই তোমার গগনফাটা উল্লাস।
(তদন্ত, মাহমুদ দারবিশ; অনুবাদ: রফিক আজাদ)
(২)
মাহমুদ দারবিশের এই কবিতাটি পড়তে পড়তে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিলাম। কি অসাধারণ সংগ্রাম করে যাচ্ছে ফিলিস্তীনের লড়াকু জনগণ!কেমন করে পারে তারা এতদিন ধরে এমন অসম যুদ্ধ করে যেতে এবং মার খেতে? কি বলবো একে? দেশপ্রেম? এমন নিষ্ঠা কিভাবে পায়? এত ধৈর্য কোথা থেকে আসে? পারবে, কি পারবে না- সম্ভব, কি সম্ভব না- এ ধরণের হিসাব নিকাশ করে কি এমন লড়াই করা যায়? মার খেতে খেতে - পরাজয় দেখতে দেখতে- শত্রুর শক্তিমত্তা মাপতে মাপতে- তারা তো হতোদ্যম হয়ে পড়ছে না? আশা ছাড়ছে না? স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে ভুলছে না? কিভাবে পারছে?
অধিকারের প্রশ্নে, ন্যায়ের প্রশ্নে, দাবী আদায়ের প্রশ্নে, অন্যায় প্রতিরোধের প্রশ্নে- পারবো কি পারবো না, সম্ভব কি সম্ভব না- এই প্রশ্ন করা কি চলে?
(৩)
আমাদের দেশে তেল-গ্যাস জাতীয় সম্পদ রক্ষার জন্য কিছু মানুষ সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে, মার খাচ্ছে, পুলিশের লাঠির বাড়ি ও বুটের বাড়ি উপেক্ষা করে তারা আবারো লড়াই করে যাচ্ছে।
সেদিন এক বন্ধুর সাথে এনিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। তার মতে এসব আন্দোলন করে কোন লাভ হবে না। সরকার আমাদের গ্যাসব্লকগুলো দিয়ে দিবেই। জাতীয় কমিটি যতই যা করুক না কেন! বেশি বাড়াবাড়ি করলে- বরং আরো কিছু বেশি মার খাবে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নড়চড় হবে না। আর কোন ফল যদি না-ই হয়, তবে এ আন্দোলনে কি ফল?
তাকে বললাম- জাতীয় কমিটির দাবীগুলো কি ঠিক?
দাবীগুলো ব্যাখ্যা করার পরে- সে অন্তত এটা স্বীকার করলো যে- দাবীগুলো যৌক্তিক।
(৪)
ফিলিস্তিনী জনগণের লড়াই আজ দুনিয়াজুড়ে লড়াকু মানুষের প্রেরণা। আসলেই তো- অধিকারের প্রশ্নে, ন্যায়ের প্রশ্নে, দাবী আদায়ের প্রশ্নে, অন্যায় প্রতিরোধের প্রশ্নে- পারবো কি পারবো না, সম্ভব কি সম্ভব না- এই প্রশ্ন করা কি চলে?
(৫)
জাতীয় কমিটি আহুত আগামি ১৪ তারিখের হরতাল সফল হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:২১