চোখে অন্ধকার দেখছে জোহান। ইতোমধ্যে তার দুই হাতের সবকয়টি আঙুল ছেঁচে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। গত সপ্তাহে ভ্যালির ধারে একজন লোক খুন হয়। সেই ট্রেইল ধরে ঘোড়ায় চড়ে যেতে দেখা গেছে জোহানকে।
নিহত এডাম বড় ভালো লোক ছিল। তার মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারেনি। পাড়া প্রতিবেশী সবাই চোখের জল ফেলছে। শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে সবাই। কয়েক ঘণ্টার মাঝেই ধরে বেধে ফেলেছে জোহানকে। এরপরে উচিত ছিল কাছাকাছি গাছে ঝুলিয়ে দেয়া কিন্তু এলাকার মুরব্বিরা বললেন শেরিফকে জানাতে নইলে পরে ঝামেলা হতে পারে। তবে শেরিফ আসার আগে দুই চার ঘা লাগাতে কেউ ভুল করেনি।
শেরিফ বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইলেন তবে জনতার একটাই দাবি, ‘ঝুলিয়ে দাও, ঝুলিয়ে দাও ’ ; এডামের আত্মার দ্রুত শান্তি চাই । সুতরাং দাবি একটাই। জোহান দুর্বল কণ্ঠে বলতে চাইল যে, ‘আমি খুন করিনি’; বিনিময়ে জুটল আরও কয়েক ঘা। উপস্থিত শেরিফকে কেউ গোনায় আনলেন না। শেরিফ দেখলেন যে, অবস্থা বেগতিক তাই দ্রুত ঝুলিয়ে দেয়াই উত্তম। দড়ি রেডিই ছিল , তাই ঝোলাতে দেড়ি হল না। এক রত্তি বাতাসের জন্যে প্রাণটা আইটাই করতে লাগল। একপর্যায়ে ঘুম ভেঙ্গে গেল জোহানের। তাঁবু থেকে বের হয়ে গিয়ে ভোরের শুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নিলো সে। গতকাল বিকালে খুন হয়েছে এডাম, তার খুনির খোজ চলছে সর্বত্র। কিন্তু কালো রঙের মানুষদের এই টেক্সাসে সন্দেহের চোখে দেখে ওরা। খুনের দায়ভার তার উপরেও আসতে পারে। গত মাসে ওর আপন চাচাকে পিটিয়ে মেরেছে ওরা। কোন আইন কানুনের ধার ধারেনি।
=========
আজ থেকে মাত্র ৫০ বছর আগেও এমন দৃশ্য দেখা যেত আমেরিকার দক্ষিণের রাজ্য গুলোতে। শুধু কালো রঙ এর মানুষ নয়, ইমিগ্রান্ট এশিয়ান, লাতিনো কিংবা দরিদ্র শ্বেতাঙ্গ কেউ রেহাই পেত না লিঞ্চিং মবের হাত থেকে। কোন কারণে সন্দেহ হলেই ঝুলিয়ে দিত কিংবা আগুনে পুড়িয়ে মারত।
Lynching কি?
অভিধান মতে Putting a person to death by mob action without due process of law অর্থাৎ আইনের শাসনের বদলে হুজুগের শাসনই Lynching। অনেকেই আমাদের দেশে ছিনতাইকারীকে গণপিটুনিতে মরতে দেখেছেন।
কিছু কমন অভিযোগ ছিল –
• খুন
• ডাকাতি
• কোন শ্বেতাঙ্গের স্ত্রী- কন্যার সম্ভ্রম হরণ
• শয়তানের উপাসনা
• কোন বিতর্কিত (ওদের চোখে) দলকে ভোট দেয়া

• কুয়ায় বিষ ঢেলে দেওয়া

এমনকি কারো সাথে দুর্ব্যবহার করা বা সন্দেহজনক আচরণ করা !!
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণই ছিল মূল অভিযোগ, এতে সাদাদের চেতনা একেবারে খাড়া হয়ে যেত।


আসল কারণ:
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগগুলো মিথ্যে হত । সত্য অভিযোগ হলে আইন আদালতে নিয়ে শাস্তি দেয়া কোন বিষয়ই না। আসল কারণ বোধহয় রেসিজম। একটু এদিক ওদিক হলেই যেহেতু কালো মানুষকে ঝুলিয়ে দেয়া যায় তাই নিগ্রোরা তটস্থ থাকত। টুস্কেজি ফাউন্ডেশন এর মতে, প্রায় পাঁচ হাজার লোককে খুন করা হয়েছে কোন নিয়মতান্ত্রিক বিচার আচার ছাড়াই। এর মধ্যে শতকরা ৭৫% কৃষ্ণাঙ্গ আর বাকিরা শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য বর্ণের দরিদ্র মানুষ। তবে নারীরা সাধারণত জনরোষের শিকার হত না। ১৮৯০ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত মাত্র ১৬০ জন নারী মৃত্যুর শিকার হয়েছে। আসলে ভয়ের আবহ তৈরি করে কালো মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকার হরণ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
আজকের সভ্য আমেরিকা: (? )
আজকের সুসভ্য আমেরিকায় এইসব হয়ত কল্পনাও করা যায় না। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ইন্ডিয়ানার গভর্নরকে লেখা এক চিঠিতে বলেন:
My Dear Governor Durbin, ... permit me to thank you as an American citizen for the admirable way in which you have vindicated the majesty of the law by your recent action in reference to lynching... All thoughtful men... must feel the gravest alarm over the growth of lynching in this country, and especially over the peculiarly hideous forms so often taken by mob violence when colored men are the victims – on which occasions the mob seems to lay more weight, not on the crime but on the color of the criminal.... There are certain hideous sights which when once seen can never be wholly erased from the mental retina. The mere fact of having seen them implies degradation.... Whoever in any part of our country has ever taken part in lawlessly putting to death a criminal by the dreadful torture of fire must forever after have the awful spectacle of his own handiwork seared into his brain and soul. He can never again be the same man.
আংশিক ভাবানুবাদ: গভর্নর ডাবলিন, আপনার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অবদানের (লিঞ্চিং বিরোধী ভূমিকা) জন্য প্রশংসা করি । চিন্তাশীল মানুষ মাত্রেই মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে শঙ্কিত হবে।....... আরেকজনকে পুড়িয়ে মারে যে লোক সে আর স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।
কিভাবে আমেরিকা রেহাই পেল এই অভিশাপ থেকে তা নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা করব।
আপাতত ‘Strange fruit’ গানটি শুনে দেখতে পারেন।
উৎসর্গঃ সকল খাটি জাতীয়তাবাদী ব্লগারদের, যাদের প্রেরণায় খেটেখুটে একটা অরাজনৈতিক পোস্ট লিখেই ফেললাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০৫