যারা আমার অখাদ্য কুখাদ্য লেখা গুলো পড়েন ( লেখা কি খাওয়ার জিনিস? এটা পঁচা হলে অখাদ্য কুখাদ্য বলে কেন কে জানে!) তারা আমার এক হালি পিচ্চিকে এতোদিনে চিনে ফেলেছেন। আমার দুই ভাগ্নী, ভাগ্নে আর ভাতিজির দুরন্তপনার গল্প সুযোগ পেলেই করে থাকি। ভাতিজিটার এক বছর হয়ে যাচ্ছে। ঘরে ঝুলানো উইন্ড চার্মটা দেখলেই তার কান্না বন্ধ হয়ে যায়, একটা কিউট হাসি দেখা যায় তার কিউট মুখে।
হালি বাবুর গল্প তো অনেক করা হয়। আজ নাহয় অন্য বাবুর গল্প করি।
কাব্যের কথা মনে আছে? একটা পোস্ট দিয়েছিলাম ওকে নিয়েও। না, ওর দুরন্তপনার গল্প নিয়ে নয়, ক্রমেই চুপসে যাওয়া একটি ফুলের গল্প ছিল ওটা। ফেসবুকে মায়ের কোলে কাব্যকে দেখতে দারুণ লাগতো। দুষ্ট দুষ্ট হাসি, বড় ভালোবাসি...। একদিন একটা নোট পড়ে দেখি কাব্য বাবুটা ভয়ানক একটা রোগে আক্রান্ত। দেশে কোন চিকিৎসা নেই। ইন্ডিয়া যেতে হবে, পাঁচ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। হ্যাঁ, মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা যোগাড় হয়নি বলে কাব্যের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছিলো না। এটা যেদিন ফেসবুকে দেখেছি সেদিন সারারাত ঘুমোতে পারিনি।

কাব্য
কি আর করার ছিল আমার! তবুও চেষ্টা করেছিলাম। ব্লগের সবাইকে জানিয়েছি। সবাই ভালোবাসা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলো। নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা বাবুর জন্য সবার ভালোবাসা একটা অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
কিন্তু কাব্যের ডাক চলে এসেছিলো আগেই। তাই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলো অজানার দেশে।
কাব্যকে আমি জীবনে মাত্র একবার দেখেছি, মৃত অবস্থায়। মিনিটখানেকের বেশী দাঁড়াতে পারিনি। আজও কোথাও কাব্য নামটা দেখলে চমকে উঠি। অদ্ভুত কষ্ট হয়।
থাক কাব্যের কথা, আরেক বাবুর গল্প বলি।
আট বছরের ফুটফুটে মেয়ে নুসাইবা। আর দশটা মেয়ের মতোই প্রাণবন্ত, হাসিখুশি। ঈদের আগে বাবার হাত ধরে জামা কিনতে গিয়েছে। সাথে ম্যাচিং করে জুতা, ক্লিপ, চুড়ি আরো কত কি! ঈদের ক’দিন আগে নানুবাড়ি গেল সবার সাথে ঈদ করতে। এমনিতে সাজুগুজু করতোনা তেমন, কিন্তু এবার ঈদে হাতে পায়ে মেহেদী দিয়ে সারাবাড়ি বেড়াতে লাগলো। বাবার কাছে ভাংতি টাকা নেই দেখে সকালে সালামী দিতে পারেনি, বিকেলে মনে করিয়ে দিল টাকা ভাংতি করে আনতে হবে।

নুসাইবা
বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্য ছুঁইছুঁই। মা সারাবাড়ি খুঁজছেন নুসাইবা কে, হাতে সালামীর টাকা। মেয়েটা কোথায় গেল! বাড়ির পাশে পুকুর, মেয়েটা পুকুরে যায়নি তো! মা দৌড়ে গেলেন বারান্দায়, না মেয়েটা গোসল করতে গেলে মগ নিয়ে যেতো, তাহলে সে পুকুরে যায়নি।
কিন্তু রাত হয়ে গেল, মেয়েটাকে পাওয়া যাচ্ছেনা কেন? এদিকে খবর এল পাশের বাড়ির পিচ্চি ঐশী কেও পাওয়া যাচ্ছেনা। সবার সন্দেহ এখন পুকুরের দিকেই।
রাত সাড়ে আট টা। পুকুর থেকে পাওয়া গেলো দুই বাবুকে, নিথর নিস্তব্ধ দুটি দেহ। ঈদের দিন জান্নাতুল ফিরদাউসে গিয়ে ওরা নিশ্চয়ই খুব আনন্দ করছিলো।
লিখতে গিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। আর চাচা-চাচীর চোখ সারাক্ষণ ঝাপসা হয়েই থাকে। চোখভর্তি যে বাঁধ ভাঙ্গা পানি। আদরের ছোট্ট মেয়েটা আজ সবাইকে ছেড়ে একা একা শুয়ে আছে।
না না...! একা বলছি কেন? ওর নিশ্চয়ই অনেক খেলার সাথী হয়েছে। সে তো সকল কষ্টের উর্ধে চলে গেছে।
শুধু শুধু কাঁদছি কেন! আমাদের সবাইকে তো একদিন যেতেই হবে। দীর্ঘ ভ্রমণের রসদ যে যোগাড় করতে পারিনি এখনো। ওর খাতায় তো কোন পাপ লেখা নেই ওতো সুখেই আছে।
কাব্য, ঐশী আর নুসাইবা নিশ্চয়ই একসাথে খায়-দায়,খেলা করে। পৃথিবীর কোন কষ্টের সাধ্যি নেই আজ ওদেরকে ছোঁয়ার।
ভালো থেকো ছোট বাবুরা, ক্ষমা করে দিও আমাদের।
পূর্বে সরবে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:০১