somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন অথবা অন্যদিনের গল্প

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব স্পষ্টভাবেই মনে পড়ে দিনটার কথা। বাবার ছোট্ট দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি। বছর ছয়েকের এক পিচ্চি ছেলে। আর কয়েকদিন পরেই ঈদ। রাস্তার ওপাশে বিক্রি হচ্ছে ঈদ কার্ড। জানি না এটা কি জিনিস, কিন্তু জানি এটা খুব সুন্দর আর এটা ঈদের আগে সবাইকে দিতে হয়! পাশের বাসার রুম্পা আমাকে একটা দিয়েছে! মুহুর্তেই আবদার, "বাবা,আমি কার্ড কিনব "। খুব কঠিনভাবেই জবাব এ্লো, এসব কেনা যাবে না। অবুঝ আমি চিৎকার করে উঠলাম।পরিনামে জোর একটা চড় এসে পড়ল আমার গালে। কেন জানি সেদিন কান্না পায়নি, শুধু অবাক লেগেছিল। বাসার সামনের রাস্তাটায় রোজ বিকেলে কালো , শুকনোমত একটা ছেলে অনেকগুলো রঙ্গিন বেলুন নিয়ে আসত এক হাতে ধরে। কি সুন্দর! এগুলো নাকি ছেড়ে দিলেই আকাশের ও পাশের রাজ্যে চলে যায়! মেঘগুলোকে নাকি ছুঁয়ে দেয় এই রঙ্গিন বেলুন গুলো! বিশ্বাসই হয় না আমার! এত এত দূরে যায় বেলুন? "মা আমাকে বেলুন কিনে দাও না"। নিজের ঘরের জানালার সাথে বেঁধে রাখার জন্য নয় , আকাশের মেঘগুলোকে ছুঁয়ে দেয়ার জন্যই এই ইচ্ছে আমার। না, কখনোই আমাকে বেলুন কিনে দেয়া হত না। আকাশের ওপাশের রাজ্যেও কখনো যাওয়া হত না। জানি না, আজ ও কেন যেন আমার সেই বেলুন কেনার ইচ্ছে যায়নি! চলতি পথে যখন দেখি কোন ক্লান্ত বেলুন ওয়ালা হতাশ চোখে এদিক -ওদিক তাকাচ্ছে কোন মানুষের খোঁজে, আমি এক পা-দু পা করে এগিয়ে যাই। সম্মোহিতের মত বেলুন গুলোর সামনে দাঁড়াই। না, কেনা হয় না। হয়ত আকাশের ওপাশের রাজ্য আমার জন্য নিষিদ্ধ।


শৈশবের এই অপুর্ণতাই হয়ত আমাকে শিখিয়েছিল নির্লিপ্ততার ভাষা। তাইতো কৈশোরের দুরন্ত দিনগুলোতে যখন মধ্য দুপুরে আমার বন্ধুরা তাদের সদ্য কেনা সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াত পুরো এলাকা, আমি চুপচাপ বসে থাকতাম ছোট মাঠের এক প্রান্তের শিমুল গাছটার নিচে। কিংবা কখনো হতাম কারো দ্বি চক্র যানের পেছন সঙ্গী! পিকনিক পিকনিক! তুমুল উত্তেজনা! সমস্ত উত্তেজনা আর আগ্রহ যখন দু'চোখে নিয়ে এসে মায়ের সামনে দাঁড়াতাম, শুকনো মুখে আমাকে শুনতে হত"এসব বিলাসিতা আমাদের জন্য নয়। এত বড় হয়েছো তুমি, আমাদের অবস্থা তো জানোই"। বন্ধুরা নৌকায় করে নদীর ওপাড় চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম আমি। ঠিক তারপরই এক পাশের নিরিবিলি ঘাটটাতে বসতাম নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে।

খুব অল্প কিছু নিজস্ব স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে যখন চলে এলাম এই বিরাট শহরটাতে , তখন যেন মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম আমি। যাক, এবার আমার নিজের জীবন! কিন্তু এই জীবনেও যে প্রতি মাসেই বাড়ি থেকে নিয়মিত টাকা না পাওয়া , টিউশনি লাইফের অপমান আর প্রতি মুহুর্তে অস্তিত্বের সংগ্রামে জড়িয়ে পড়তে হবে তা কে জানত! সন্ধ্যার নিভে আসা আলোয় ধীর পায়ে বিষন্ন মনে হেঁটে আসা, এই আমার প্রতিদিনের গল্প।

আমার খুব মনে পড়ে সেই বৃষ্টির দিনটার কথা। তুমি-আমি এক সাথে একটা রিকশাকে ডেকেছিলাম। ল্যাব রিপোর্ট আনতে ভুলে যাওয়া আমি নিতান্ত সৌজন্যবোধের কারনেই তোমাকে বলেছিলাম রিকশায় উঠতে। যে অদ্ভুত সুন্দর হাসিটা দেখেছিলাম তোমার, তাতেই যে আমি পাগলের মত
ভিজতে ভিজতে হলে ছুটেছিলাম , তা ভাবলে আজো হাসি পায়! এরপর.....কত বিকেল-মধ্য দুপুর কিংবা কুয়াশা ঢাকা সকালে দেখেছিলাম তোমার সেই হাসি। আমার আবার ইচ্ছে হত আকাশে ওপাশের রাজ্যটাকে ছোঁয়ার , ঈদের দিন কয়েক আগে কারো হাতে একটা সুন্দর কার্ড তুলে দেয়ার! ইচ্ছে হত পুরো ক্যাম্পাসে সাইকেল নিয়ে একটা ছুট দিতে! কিন্তু......"তুমি আমাকে আজ বিয়ে করতে পারবে?", স্পষ্ট করেই প্রশ্নটা ছিল তোমার। " কি হয়েছে? এটা কি বলছ? "। তুমি কোন উত্তর দাওনি আর। সেই হাসিটাও আর দেখা হয়নি আমার।

আজ ও যখন আমি আমার স্বপ্নগুলো জামার বুক পকেটে জমা রেখে একা হেঁটে আসি রাস্তা ধরে , তখন আর দশজনের মত রাস্তায় পড়ে থাকা নুড়ি পাথরকে লাথি মারতে পারি না প্রচন্ড তীব্রতায়। হয়তোবা আমার মতই অনেকগুলো না ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে পথের ধুলি মেখে চিৎ হয়ে আকাশ দেখে নুড়ি পাথরটা। আমি লাথি মারতে পারি না, প্রচন্ড মায়া লাগে। সন্তর্পণে পাশ কাটিয়ে চলে আসি। ঠিক এভাবেই হয়ত আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় আমার স্বপ্নগুলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ ভোর ৬:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×