ইয়াবা এবং বিদেশী মদসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন সঙ্গীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। বুধবার সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে রমনা থানার ওসি শাহ আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ইমনের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। শওকত আলী ইমনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে গত মঙ্গলবার রাতে রমনা থানায় নারী নির্যাতানের মামলা করতে যান ইমনের কথিত গার্লফ্রেন্ড জিনাত।
জিনাত কবীর নামের এই গার্লফ্রেন্ডের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় ইমনকে। জিনাতের অভিযোগ পত্রের বিবরণে জানা যায়, বিয়ে করার নামে দীর্ঘ একবছর বিভিন্ন কৌশলে নিজের বাসায় জিনাত কবীরের সঙ্গে বসবাস করেন ইমন। একবছর পার হয়ে যাওয়ার পর বিয়ের জন্য চাপ দিতেই নানা কৌশলে এড়িয়ে যেতেন এমনকি জিনাত কবীরকে মারধোরও করতেন। শুধু তাই নয়, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ফেইসবুকে নগ্ন ছবিও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন ইমন। ইতোমধ্যে ইমন জিনাতের বেশ কিছু নগ্ন ছবি তার পরিচিত কিছু ফেইসবুক ফ্রেন্ডদেরকে ট্যাগ করে দিয়েছেন বলেও মামলার এজহারে অভিযোগ করেছেন জিনাত।
জিনাত আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘ফেইসবুকে এসব নোংরা ছবির খবর প্রকাশ হওয়ার পর আমার পরিবার থেকেও আমি বিতারিত। এদিকে ইমনও আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ঝামেলা করলে অভিনেত্রী প্রভার মতো অশ্লীল ভিডিও ক্লিপসও বাজারে প্রকাশ করার হুমকি দিয়েছে। এখন আমার জীবন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। এমতাবস্থায় আত্মহত্যা ছাড়া আমার আর কোনো পথ নেই বলে শেষ পর্যন্ত আদালতের দারস্থ হই। আমি সুষ্ঠ বিচার চাই।’
জিনাত কবিরের জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় হলেও ছোটবেলা থেকেই ঢাকার কলাবাগানে বাবা মার সঙ্গে কাটিয়েছেন। তারপর অনেকদিন ধরেই ভারতের কলকাতায় বসবাস করছেন। লেখাপড়াও করছেন সেখানে। বর্তমানে তিনি কলকাতার পল্যান ওয়ার্ল্ড স্কুল এন্ড কলেজে মিডিয়া অ্যান্ড কমিনিকেশনের ওপর পড়াশোনা করছেন।
ইমনের সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে যাওয়া বিষয়ে জিনাত বলেন, ‘গত বছরের (২০১১) মাঝামাঝিতে ফেইসবুকে আমার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তখনও আমি তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানিনা। ইমনের কাছ থেকেই শুনেছি তিনি বাংলাদেশের আলোচিত এক মিউজিশিয়ান। ফেইসবুকে বেশ কিছুদিন কথা বলার পর ইমনই আমাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেন। আমিও তার কথা বার্তা আচার আচরণ দেখে সাড়া দিই তার প্রস্তাবে। তারপর থেকে ফেইসবুকে বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে যাই আমরা। একমাস পর থেকেই সেক্স বিষয়ক কথা বার্তা হয় আমাদের এবং স্কাইপির মাধ্যমে আমার অন্তরঙ্গ কিছু ছবি দেখতে চান তিনি। আমিও ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজেকে মেলে ধরি। তার কিছুদিন পর গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আমি বাংলাদেশে আসি ইমনের সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমাদের প্রথম দেখা হয় ইমনের ষ্টুডিওতেই।
ইমনের কথামতো তার ষ্টুডিওতেই পরপর তিন রাত কাটিয়ে দেই আমরা। তিন দিনেই তার ষ্টুডিওটাকে আমার কাছে মনে হয়েছে বাজারের মতো, নানা রকম মেয়ে মানুষ আসতে দেখি সেখানে। এসব মেয়েদের সঙ্গে ইমনের আচার আচরণ দেখে আমি রাগ করে আমাদের কলাবাগানের বাসায় চলে আসি।
কলাবাগানে আসার পর থেকেই একের পর এক মোবাইলে ফোন করে করে নিজের কৃতকর্মের জন্য দু:খ প্রকাশ করে সে। এবং আমার জন্য সবকিছু ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এবং আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আমিও তাকে বিশ্বাস করে তার বাসায় চলে আসি। বাসায় আসার পর ইমনের কাছ থেকেই জানতে পারি অভিনেত্রী বিজরীর সঙ্গে ইমনের বিয়ে হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়েছে। তখন থেকে আমরা স্বামী স্ত্রীর মতো বসবাস করি। এমনকি রান্না-বান্নাসহ বাসার সব দেখাশোনার দায়িত্ব আমি পালন করি। অনেক ভালো ভালো জায়গাতেও বেড়াতে গেছি আমরা। মাছরাঙা টিভির হাউসফুল অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ইমন সেখান থেকে কক্সবাজারের সী-গাল রেস্টুরেন্টের কুপন পেলে দুজন মিলে কক্সবাজার ঘুরে আসি।’
হঠাৎ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে জিনাত কবীর বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই আচরণে পরিবর্তন দেখতে পাই ইমনের। নতুন এক মেয়ের সঙ্গে হাতে নাতে ধরা পড়ে ইমন। তার পর ফারহানা আফরিন মুনমুন নামের এক আমেরিকা প্রবাসীর সঙ্গেও একই কায়দায় প্রেম করতো সে। শুধু তাই নয় তার ষ্টুডিতেও মদ ইয়াবা পাওয়া যেতো প্রায়ই। এসব নিয়ে কথা তুলতেই উল্টো আমাকে ধমক দিতো। আর বিয়ের প্রসঙ্গ আনলেই মাতাল অবস্থায় গায়ে হাত দিয়ে উল্টাপাল্টা গালিগালাজ করতো। বলতো বেশি বাড়াবাড়ি করলে প্রভা বানিয়ে ছেড়ে দেবো। নগ্ন ছবির সঙ্গে মাথা লাগিয়ে কাটপিস বানিয়ে বাজারে ছাড়বো।
জিনাত বলেন, ওই সময়ই আমার বেশ কিছু নগ্ন ছবি ফেইসবুকে আপলোড করে। এরপর আমি আর উপায় না পেয়ে ইমনের বাসা থেকে বের হয়ে আসি। মা বাবার কাছ থেকে বিতারিত হয়ে হয়ে আইনের আশ্রয় নতে বাধ্য হই।
সূত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২৪