সাতচল্লিশে দাদা চইলে গেলো ভারত
হামি তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম
এই বাড়ি ওই বাড়ি কত বাড়ি যে ঘুইড়েছি
তার কথা আর কি বইলবো!
একদিন ঘুইত্যে ঘুইত্যে
এক ব্রাহ্মণের ঘরে আইসে পইড়লাম
হামারে ব্রাহ্মণ কয় -" তোরে বিয়া করাম রে "
সে কি লজ্জা হামার
হামি বিয়া করাম, ঘর হইবো, সংসার হইবো।
ঠিক একদিন -
বিয়া হইলো, শাদি হইলো, মাথায় সিঁদুর দিলাম
হাতে শাখা পইড়লাম, সে কত স্মৃতি
আজো হামার ঠিক মনে আছে।
শালা পুরোহিতের গতরে তেজ আছিলো
পরের বছর হামার পেট থেইকে
দুইটা জোড়া ছাওয়াল বাইর হইলো।
পুরোহিতের সে কি যে খুশি, কি আনন্দ
হামার ঘরে যেনো সব দেবতার হাসি খেলা।
কিন্ত সইলো না, শালা পুরোহিতের সইলো না
বাহান্নতে নাকি তার ভাষা লাগবো
গ্যালো - ছাত্র আর শিক্ষকের পিছে পিছে
ধূতি পড়া দেইখা'ই কি তার বুকে গুলি করছিলো?
হামি জানি না,হামার সিঁদুর মুইছে গ্যালো
শাখা ভাইঙ্গে ফেললো ওরা
লাল শাড়ি খুইলে আমায় সাদা শাড়ি পড়াইলো।
ছোট ছোট দুইটে ছাওয়াল নিয়ে হামি আবার বের হইলাম
যেই দিকে দুই চোখ যায় চইলে যাবো,
নইলে রেললাইনে ছাওয়াল লইয়্যে ঘুমায় পড়বো।
হাটতে হাটতে হামি চইলে আইলাম এক গ্রামে
এইটা দেখি মুসলমানের গ্রাম
ভয়ে হামার কলিজায় পানি শুকায় গেছে
হঠাৎ দেখি এক মোল্লা হামার দিকে চাইয়্যা আছে
কেমন কেমন কইরা যেনো তাকায়
হামার খুব ভয় হইতেছিলো।
কিন্তু মোল্লা আইসা হামারে কইলো -
" মা, তুমি কই যাইবা? "হামি কাইন্দা দিলাম
বাপটারে আমি জীবনে দেহি নাই
মোল্লা আমারে মা কইয়্যা ডাকলো।
তাইলে হিন্দু মুসলিম জাতে জাতে এত বিভেদ কেনো?
হামারে মোল্লা তার ঘরে লইয়্যা গেলো
বেবাক লোকরে কইলো, " আমার মাইয়্যা ফিরা আইছে "
হামি তারে বাজান ডাকলাম
বাজানের লগে থাকতে লাগলাম
পেট পুইড়ে ভাত খাইতাম, কোন দুঃখ আর আছিল না।
মানুষ এত ভাল কেমনে হয় হামি জানতাম না।
কুড়ি বছর পার হইয়্যে গেলো -
হামার ছাওয়াল দুইটা তাগড়া সেয়ানা হইলো
বাজান হামার বিছানা থাইকা উঠতে পারে না
হামি প্রতিদিন মা দূর্গারে কই, " বাজানরে ভালা কইরা দাও "
মুসলমান বাজান বইলা মা হামার কতা শুনে না।
সব ঠিকঠাক যাইতেছিলো -
খুব ইচ্ছা আছিলো বাজান আর হামি এক লগে যামু
কিন্তু না হইলো না, কিচ্ছু হইলো না।
হামার কপালে ভাত টিকলো না
মনে আছে , সেইটা একাত্তরের কথা
ছাওয়াল দুইটা ঘর ছাড়লো, কইলো -
" মা, দেশরে বাঁচাইতে হইবো "
তোরা দেশ বাঁচা, দেশ বাঁচা
আর তোগো মার পেটে ভাত নাই।
বাজানডারে একদিন রাইতে আইসা মাইরা গেলো
ঘর দুয়ারে আগুন দিলো, ছাওয়াল দুইডা আর আইলো না।
দেশ নাকি স্বাধীন হইছে -
তাইলে আমার তাগড়া জোয়ান দুইডা ছাওয়াল কই গ্যালো
দেশ স্বাধীন হইলে ভাত পামু, মাইনস্যে কইছিলো হামারে
অনেক দিন পেট পুইড়ে ভাত খাই না,
ভাতার' রে ভাষায় খাইলো, পোলা দুইডারে স্বাধীনতা খাইলো
বাজানডারে রাজাকারে খাইলো
হামারে কেউ খায় না!
হামি কি বেশি কিছু চাইছিলাম!
হামারে এক থালা ভাত দে,
হামি পোলা দিমু, ভাতার দিমু, বাজান দিমু
আর তুই আমারে এক থালা ভাত দে!
এক থালা ভাত দে | অক্ষর অনীক
|বি,দ্র: চোর, তুই বেজন্মা |
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২